মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : উচ্চ আদালতের নিষেধজ্ঞা অমান্য করে প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় মৌলভীবাজার সদর উপজেলার নাজিরাবাদ ইউনিয়নের হাইলহাওর এর আগারী বিলের সরকার ঘোষিত মৎস অভয়াশ্রম ইজারা ছাড়াই লক্ষ লক্ষ টাকার মাছ লুট করেছে প্রভাবশালীরা। এই অভয়াশ্রমের মৎস ধরতে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা না মেনে প্রশাসনের নাকের ডগায় মাছ ধরা হয়েছে দিনে-দুপুরে ।

সরেজমিন ঘুরে স্থানীয় সূত্রে জানা যায় , নাজিরাবাদ ইউনিয়নের দশকাউনিয়া গ্রামের মৎসজীবী বলরাম নমসুদ্র এর নামে থাকা এই বিলের ইজারার মেয়াদ প্রায় দুই বছর পূর্বে শেষ হয়েছে। কিন্তু বলরামকে সাথে নিয়ে আটঘর এলাকার স্থানীয় প্রভাবশালী ছাদির মিয়া, খোরশিদ মিয়া, মুহিত মিয়া, আরব আলী ও তছকির মেম্বার সহ এই ছয় ব্যক্তি পুরনো ইজারার কাজপত্র দেখিয়ে এলাকার মানুষকে ভুল বুঝিয়ে বড় বড় মেশিন লাগিয়ে পানি সেচ দিয়ে ও জাল দিয়ে শনিবার (২৪ ফেব্রয়ারি) গভির রাত পর্যন্ত অভয়াশ্রমের সব মাছ ধরেছেন। কোন ধরনের বৈধতা ছাড়া লুটিয়ে নিয়েছেন প্রায় ২০-২৫ লক্ষাধিক টাকার দেশীয় মাছ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মৎস্যজীবী সমিতির নামে নাজিরাবাদ ইউনিয়নের দশকাউনিয়া গ্রামের মৎসজীবী বলরাম নমসুদ্র ১৪২০ বঙ্গাব্দের পহেলা বৈশাখ থেকে উসলপুর মৌজার ৭১ একর আয়তনের আগারী বিল ইজারা নেন। এর পর ১৪২২ বঙ্গাব্দের চৈত্র মাসের ৩০ তারিখে তার ইজারার মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর মাছের অভয়াশ্রম হিসেবে উচ্চ আদালত সেখানে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করে। যার ফলে কোন ব্যক্তি পূনরায় কোন ইজারা নিতে না পেরে বলরাম নমসুদ্র কে সাথে নিয়ে গত ২ বছর যাবত আটঘর গ্রামের ছাদির মিয়া, খুরশিদ মিয়া, মুহিত মিয়া, আরব আলী ও তছকির মেম্বার অবৈধভাবে মাছ ধরে আসছেন। সরকারের নিয়ম অনুযায়ি ৭১ একর জায়গায় বছর প্রতি ১লক্ষ ৬০ হাজার টাকা রাজস্ব না দিয়ে ২ বছর থেকে তারা লক্ষ লক্ষ টাকার মাছ ধরে বিক্রি করছেন। এতে করে হিসেব অনুযায়ী সরকার তিনলক্ষ বিশহাজার টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

অবৈধভাবে মাছ ধরার বিষয়ে ছাদির মিয়া জানান, মৌলভীবাজার পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার জালাল আহমদ প্রথমে এই বিলটি ইজারা নিতে চেয়েছিলেন। পরে তিনি সেটা করতে না পেরে সরকারের রাজস্ব দেয়ার জন্য সাড়ে ৬ লাখ টাকা আমাদের কাছ থেকে নিয়ে মাছ ধরতে বলেছেন এবং তিনি সব দায় দায়িত্ব নিয়েছেন। আমরা যে বৈধভাবে মাছ ধরছি তার কাজপত্র আছে আমাদের সদস্য খোরশেদ মিয়ার কাছে আছে।

এ ব্যাপারে খোরশেদ মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন কাজপত্র দেখাতে পারেননি। উল্টো তিনি জানান মাছ ধরার সাথে তার কোন যুগসূত্রতা নেই।

এ বিষয়ে কাউন্সিলর মো. জালাল আহমদ বলেন, এলাকায় দু’টি পক্ষ এই বিল নিয়ে মারামারি শুরু করেছিল। তাদের বিষয়টি সমাধান করে দিয়েছি আমি ও কাউন্সিলর মাসুদ একসাথে। এই বিলে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা ছিল তা আমি জানতাম না। তার কাছে সাড়ে ৬ লাখ টাকা দেয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। কেউ সরকারের বিলে অবৈধভাবে মাছ ধরলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক।

এবিষয়ে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ.এইচ.এম আরিফুল ইসলাম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এই বিলে মাছ ধরা সম্পূর্ণ নিষেধ করেছে উচ্চ আদালত। যার জন্য কয়েকমাস পূর্বে আমরা সেখানে অভিযান করে অভিযুক্তদের জাল জব্দ করেছিলাম। জব্দ করা জাল স্থানীয় ইউপি সদস্যের জিম্মায় রাখা আছে, এখন যেহেতু তারা মাছ ধরেছে অবৈধভাবে তাই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত প্রদক্ষেপ হিসেবে মামলা করার প্রস্তুতি শেষ ,আজকের মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।

(একে/এসপি/ফেব্রুয়ারি, ২৬, ২০১৮)