স্টাফ রিপোর্টার : উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্ট কার্ড আগামী বছরের (২০১৫) জানুয়ারিতে সরবরাহ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।এ ক্ষেত্রে যাদের বর্তমান প্রচলিত জাতীয় পরিচয়পত্র আছে, কেবল তারাই প্রথম দফায় এই স্মার্ট কার্ড পাবেন।

আর এ জন্য বিধিমালাও চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আইন মন্ত্রণালয় থেকে ভেটিং হয়ে আসলেই বিধিমালাটি কার্যকর করা হবে বলে জানা গেছে।

ইসি সূত্র জানায়, জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতিরোধ করা ছাড়াও নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্মার্ট কার্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

সে লক্ষে ২০১১ সালে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে 'আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর অ্যানহান্সড অ্যাক্সেস টু সার্ভিস (আইডিইএ)' প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। একই বছর ১১ জুলাই এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ সরকার বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ১৯৫ মিলিয়ন ডলারের একটি ঋণচুক্তিও স্বাক্ষর করে।

বিশ্বব্যাংকের অঙ্গসংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (আইডিএ) থেকে প্রাপ্ত সুদমুক্ত এই ঋণের মেয়াদ ১০ বছরের রেয়াতসহ ৪০ বছর। এতে সার্ভিস চার্জ ধরা হয়েছে ৭৫ শতাংশ। এই প্রকল্পের মাধ্যমেই দেশবাসীকে উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হবে বলে নিশ্চিত করেছে ইসি।আর এই গুরু দায়িত্ব পালনে ইসিকে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন বিধিমালা সংশোধন করতে হচ্ছে।

ইসির চূড়ান্ত করা বিধিমালা থেকে জানা গেছে, প্রথমবার এ কার্ড বিনামূল্যে প্রদান করা হবে। যা ১০ বছর পর পর ১০০ টাকা ফি দিয়ে নবায়নযোগ্য হবে।

তবে এ কার্ড হারিয়ে গেলে বা নষ্ট করে ফেললে প্রথম দফায় সার্ভিস চার্জ হিসেবে ২০০ টাকা আর জরুরি ক্ষেত্রে ৩০০ টাকা, দ্বিতীয়বার হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হলে ৩০০ টাকা, জরুরি হলে ৫০০ টাকা মাশুল গুনতে হবে। তবে আবেদনকারীকে মোট দুইবারের বেশি একই সমস্যার সমাধানের জন্য ১০০০ টাকা পরিশোধ করতে হবে।

সম্প্রতি এমন বিধান রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। সপ্তাহে খানেকের মধ্যেই এটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে ভেটিং এর জন্য। মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলেই কাজ শুরু করে দেবে ইসি। এ ক্ষেত্রে বর্তমানে যাদের প্রচলিত জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে কেবল তারাই প্রথমে এ স্মার্ট কার্ড সুবিধা পাবেন।

আগামী বছরের জানুয়ারিতে সীমিত পরিসরে এই স্মার্ট কার্ড দেওয়া শুরু হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে জাতীয় পরিচয়পত্র অণুবিভাগের পরিচালক মহসীন আলী বলেন, পর্যায়ক্রমে দেশের সব বয়সীদেরই স্মার্ট কার্ড দেওয়া হবে। তবে যাদের বয়স ১৮ বছর হলো বা ২০১৫ জানুয়ারিতে হবে তাদের কোনো তথ্যই কমিশনের কাছে নেই। তাই যাদের তথ্য ইতোমধ্যে ইসির কাছে রয়েছে, অর্থাৎ যেসব ব্যক্তি বর্তমানে সরবরাহ করা পরিচয়পত্র পেয়েছেন তারাই প্রথমে উন্নমানের কার্ড আগে পাবেন।

আর যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে বা ১৮ হবে তাদের কয়েকটি ধাপে ভাগ করে নেওয়া হবে। ১০ থেকে ১৮ বছর, ১০ থেকে ১৬ বছর, ৫ থেকে ১০ বছর এমন কয়েকটি ধাপে ভাগ করে তাদের তথ্য নেওয়া হবে।

কাজেই যারা বর্তমান কার্ডটি পাননি, তাদের স্মার্ট কার্ড পেতে আরো দেরি হচ্ছে বলেই জানিয়েছে ইসি সূত্র।

জানা গেছে, উন্নতমানের এই কার্ড প্রস্তুত করতে প্রায় ২ মার্কিন ডলার ব্যয় করতে হবে ইসিকে। গাজীপুরের সিকিউরিটি প্রিন্টিং কর্পোরেশন বাংলাদেশ লিমিটেড (এসপিসিবিএল) থেকে তা প্রস্তুত করার কথা রয়েছে।

এই কার্ডের মাধ্যমে নাগরিকরা ব্যাংক একাউন্ট খুলতে, বিভিন্ন সেবা গ্রহণ করতে, রেশন, বয়স্কভাতা, টেস্ট রিলিপ (টিআর), কাজের বিনিময়ে খাদ্যসহ (কাবিখা) নানা ধরণের সুবিধা পাবেন।

এ ছাড়া সরকারের কাছেও থাকবে একটি বিশেষ নিরাপত্তা বিশিষ্ট তথ্য ভাণ্ডার। এর মাধ্যমে বিভিন্ন অপারধের তদন্ত কাজসহ সহজেই কারো পরিচয় সনাক্ত করা যাবে।

বিশেষ নিরাপত্তা কোড থাকায় এটি বর্তমানে প্রচলিত কার্ডের মতো নকল করাও যাবে না। তবে কোনোভাবে কেউ যদি এটি নকল করে তবে তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করার বিধান রাখা হয়েছে বলেও জানা গেছে।

(ওএস/এটিআর/জুলাই ০৭, ২০১৪)