মালিপাখির একগুচ্ছ ছড়া-কবিতা
আকুম বাকুম পাখি
এখনও সেই পাহাড়ী পথ আমায় কাছে ডাকে !
এখনও রোজ সেই মেয়েটি দাঁড়ায় পথের বাঁকে !
সেই মেয়েটির দু চোখে নীল মায়া প্রদীপ জ্বলে !
যে আলোতে পথ হারা দ্বীপ সামনে ছুটে চলে ---
এখনও সেই কিশোরী গ্রাম নেশায় ছুঁ্যে থাকি !
বুকের ভিতর মোহর ছড়ায় আকুম বাকুম পাখি !
সুরের ভেলায় মেঘ ভেসে যায় -- মেঘের ফাঁকে-ফাঁকে,
ভর দুপুরের রোদের আতর ছড়িয়ে শুধু থাকে !
ছড়িয়ে থাকে পালক মাটির গভীর ভালোবাসা !
দেবদারু গাছ দুলতে থাকে টাপুর টুপুর আশায় !
সেই আশাতে অলীক ভূবন পরায় প্রীতির রাখী !
বুকের ভিতর মোহর ছড়ায় আকুম বাকুম পাখি !
এখনও সেই কিশোরী গ্রাম গান শোনাতে আসে !
এখনও সেই পাহাড়ী পথ চাঁদকে ভালোবাসে !
তারারা সব সদলবলে রাতকে ডেকে তুলে,
ভূবন টাকে দেয় সাজিয়ে রঙীন ফুলে ফুলে !
বইতে থাকে খুশির বাতাস -- ঝুর ঝুরে দিন আঁকি !
বুকের ভিতর মোহর ছড়ায় আকুম বাকুম পাখি !
ফুল কুড়ুনী তোরন সাজায়, নতুন নতুন গাছে !
আঁকন বাঁকন চিকন বাঁশি ওড়না হয়ে নাচে !
নাচতে, নাচতে, নাচতে, নাচতে ধুসর খাতায় এসে !
লেখায় লেখায় দেয় ভরিয়ে সেই রূপে রোজ ভেসে ---
ঝাউপাতা দের হাত তালিতে হইযে মাখামাখি !
বুকের ভিতর মোহর ছড়ায় আকুম বাকুম পাখি !
ঝিনুক কিশোর
ও মাটি,
সখ্যে ওড়ে রঙীন চিঠি-- এখন যে ঘুম জাগে !
এখন পাতার ঝুমঝুমিটি, শুদ্ধ ইমন রাগে --- !
ও ঝিঁঝিঁ,
গল্প ফুটুক রাজ মুকুটে, হাসুক গানের মালি !
আলাদীনের প্রদীপ ছুঁতে ইচ্ছে বুকে জ্বালি -- !
ও পাখি,
সত্যি কি এক রাজার ঘোড়া --- এখন রাজা আছে ?
আছে, আছে, ধুলোয় মোড়া ধন্য পারুল গাছে !
ও নদী,
রৌদ্র আলোর ঝিনুক কিশোর ছড়িয়ে মেধার আশা !
রোজ এঁকে যায় ফুল ফোটানোর স্বপ্ন ভালোবাসা --- !
আমি
আমি এখন একটু সানাই সানাই -- এখন একটু প্রানের,
আতর ঢেলে পথ বুনে যাই এইখানে ওইখানে !
আমি এখন একটু ভ্রমণ ভ্রমণ এখন একটু গাঁ টির,
উড়িয়ে দেবো ও সোনামন তাইতো একা হাঁটি !
আমি এখন একটু সাঁতার সাঁতার -- এখন একটু দূরের ,
দ্বীপ গুলিকে চিনবো আবার ঢেউ জুড়ে ঢেউ জুড়ে - !
আমি এখন একটু শালিক শালিক -- এখন একটু বাঁশির,
ছড়িয়ে দেবো খুশির ঝিলিক একলা চারিপাশে -- !
তোমার বুকের ইচ্ছে
পাগল পাগল মনটা আমার চাঁদকে চিঠি দিচ্ছে ,
ও ভালোদিন দাও ছড়িয়ে তোমার বুকের ইচ্ছে !
ঢেউ চিক চিক সবুজ পাতায় কে ছড়ালো মুক্ত
আমরা পাখি আলোর পাখি ওড়ায় অভিষিক্ত !
ঠিক বলেছো এখন আবার হাওয়ায় ভেসে যাচ্ছি !
তোমরা কি কেউ সেই বাঁশিটি শুনতে আবার পাচ্ছো ?
তরতরিয়ে বইছে এখন ওই যে খুশির ঝর্ণা !
তোমায় ডাকি তিতাস নদী,তোমায় ডাকি চূর্নী !
আকাশটা নীল, উড়ছে ফানুস, সেই ফানুসের মধ্যে !
নাচতে থাকে দিন ভরে আজ ধান ছড়াবার পদ্য
সাজিয়ে দিলুম পাখির বাসা নতুন নতুন দৃশ্যে !
এইতো কবির হারিয়ে যাওয়া, এইতো কবির বিশ্ব !
পাগল পাগল মনটা আমার চাঁদকে চিঠি দিচ্ছে !
ও ভালোদিন দাও ছড়িয়ে তোমার বুকের ইচ্ছে !
ছবি আঁকে কবিতাটি
কাগজ কুচিরা মেঘ হয়ে ভাসে --- ভালোবাসা মেঘ তুমি !
এই ধরো দেশ । ফুল ফোটে ঘাসে । তারাগুলি ঝুমঝুমি -- !
ঝাউবন ভোরে খোঁজে কাকে জানো ? শিশিরে ডুবেছে বাঁশি ।
আমি রাজহাঁস, আকাশ ভরানো বুনো সুর হয়ে ভাসি -- !
ভাসতে, ভাসতে ঘুম পথ টেনে, একরাশ মায়া তুলে ;
তারাদের দুটি হাত ধরে এনে বই পড়ি ইসকুলে !
ইসকুল নদী ! নৌকো বানিয়ে ঢেউ ছুঁ্যে ছুঁ্যে হাঁটি --
চিবুকে আলোর পাঁপড়ি বিছিয়ে ছবি আঁকে কবিতাটি -- !
এক যে কবি
তুই নিবি তাই আতর ছড়াই, চাঁদের বাড়ি পড়তে থাকি --
পড়তে পড়তে ভোর হয়ে যায়, ডাকতে থাকে শালিক পাখি !
তুই নিবি তাই পাহাড় থেকে কিসের যেন খবর আসে,
কদম সুবাস তুমুল ভাবে ছড়িয়ে পড়ে সবুজ ঘাসে !
তুই নিবি তাই সাতটি হরিণ দেয় পাঠিয়ে রঙীন চিঠি --
চিঠির আলোয় পথ ভেজে আর নাচতে থাকে পারুল প্রীতি !
তুই নিবি তাই গাছকে বলি, তুমিই কি গাছ বনের পরী ?
অমনি সে এক রূপকথা গাছ হুস করে হয় গানের তরী !
তুই নিবি তাই লেখার খাতায় পালক গুলো বেড়ায় উড়ে --
এক এক করে সাজায় তাদের এক যে কবি হৃদয় পুরে !
চলতে চলতে
ঠিক বলেছ সবাই তারা সাগর পারের গাছ ছিলো !
গাছ ছিল তাই আপন নেশার ভূবন ছুঁ্যেই নাচছিল !
নাচতে নাচতে সেই তারাটি তিনসুকিয়ার হাঁস হলো !
হাঁস হলো আর দিন সরিয়েই একটু অবকাশ হলো !
উড়তে উড়তে একফালি চাঁদ বললে যাবো শিলচরে !
বলতে পারো আকাশ টা কে, কেমন করে নীল করে ?
মিল হলো কি কথায় তোমার ? বেড়ায় পথে ভুল গুলো !
ভাবতে ভাবতে আবার কে বেশ ফোটায় গাছে ফুল গুলো !
তির তিরিয়ে লাজুক বাতাস নাও ভাসালো কোন দিকে ?
চিক চিকিয়ে খুশির আবীর দোলায় উদাস মনটিকে !
এমন সময় আদর করে শিবসাগরের জুঁই পাখি !
বললে ও ভাই এই যে হৃদয়, খুঁজিস আমায় তুই নাকি ?
এই বলাটাই বুকের ভিতর বাজায় সানাই রোজ ভোরে !
তাইতো আকাশ, ফুল, পাখি আর বেড়াই সাগর খোঁজ করে !
গাছ
গান খালি গাই আর দ্যাখো রোজ গাছের কাছে আমি,
মেঘ ডুমা ডুম, জল ঝুমা ঝুম, মোহর খুঁজি দামি !
গান শুনে গাছ নাচ লেখে আর বাজায় সুখে বাঁশি,
মন যাদুকর ঢেউ তোলে যেই পাহাড় ছুঁ্যে হাসি !
মাছরাঙা ভোর যাও উড়ে যাও দিলাম খুলে মুঠো ---
আজ তুমি গাছ নাচ জুড়ে দাও, ফুল ফুটেছে দুটো !
আজ তোমাদের চায় দিতে মন গাছের সাথে আড়ি ?
এই কথা যেই ফের শুনি হয় হৃদয় আমার ভারি !
হও সামাজিক, দিন দুনিয়ায় ছড়াও তারার আলো ---
আর এসো ভাই হাত নেড়ে কই ও গাছ তুমি ভালো !
নাও আলো মন ফুল ফোটাবার, লেখায় ভরো খাতা --
রূপ ঝুমাঝুম রূপকথা আর উড়ুক পাখিপাতা !
আলোর ভূবন
আ চই চই দিন কেটে যায় বেড়াই কেবল ঘুরে,
পাখিরা সব খুশির পালক ছড়ায় আকাশ পুরে !
ছবি আঁকাও শেখায় আমায় কদম,টগর,বেলি
ময়না, শালিক,সারস, তোতা সবার সাথেই খেলি !
খেলার সময় হরিণ আসে,বাঘের ছানাও নাচে !
বুঝি তখন বুকের ভিতর কি এক যাদু আছে !
নিঝুম দুপুর,সাঁঝ পেরুলেই চাঁদ ঘুম ঘুম রাতে,
ঘুরে বেড়াই আপন মনে হাজার তারার সাথে !
আকাশ পুরের রাজার পোষাক আর ভালো মন ঘুড়ি !
আমায় বলে ভালোই আছি, এক মনে রোজ উড়ি -- !
উড়তে উড়তে সাগর দেখি,পাহাড় দেখি ভোরে
এই ভালো এই ভুবন আমায় ডাকে আদর করে !
সবুজ গাঁয়ের খবর
চোখ ছিল তার সড়ক চেনার । জিরাফ আলো আর
সেই মাঝিটাও ছলাত্ ছলাত্ টানছিল বেশ দঁাড় ।
গান ছিল ঠিক কূল ছাপানো । রাত ভোর ভোর ভুল ।
পথ ভোলা এক বাউল ছিল, কোঁকড়ানো তার চুল ।
আধখানা ঘুম মাথার ভিতর ভাঙছিল কুমকুম
চোখের পাতায় হরিণ ছিল দু পায়ে ঝুমঝুম --
প্রান ছিল তাই সবুজ গাঁয়ের হাজার মাটির ঘর ।
শীতলপাটির ওপর বসেই দেখত নদীর চর ।
সেই গাঁ এখন কোথায় গেছে ? খুঁজতে খুঁজতে সই,
চোখের কোনায় জল জমে আর একলা জেগে রই -- !