নিউজ ডেস্ক : নিজেদের আশেপাশের পৃথিবী দেখে আমরা মনে করি সভ্যতা অনেক এগিয়ে গেছে। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষেরই নাগালে এসেছে প্রযুক্তির আশীর্বাদ? কিন্তু আসলেই কি তাই? সম্প্রতি আমাজনের জঙ্গল থেকে বের হয়ে এসেছে এমন একদল মানুষ যাদের সাথে এই সভ্য পৃথিবীর কোনোরকম যোগাযোগই ঘটে নি এর আগে। কিন্তু কেন তারা নিজেদের এলাকা থেকে বের হয়ে আসলো?

ব্রাজিলের রেইনফরেস্ট থেকে সদ্য বের এসেছে একদল আদিবাসী যারা সাধারণত এক জায়গায় স্থায়ীভাবে বসবাস করে না বরং বেআইনি কাঠুরেদের চোখ এড়াতে ঘুরে বেড়ায় এখান থেকে সেখানে। তারা ওই অঞ্চলের স্থায়ী আদিবাসীদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে এবং এটাই ছিলো সভ্য পৃথিবীর সাথে তাদের প্রথম যোগাযোগ। পেরুর সাথে ব্রাজিলের সীমান্তের কাছে খুঁজে পাওয়া গেছে এই আদিবাসীদের।

সাধারণত ভ্রমণকারী এসব আদিবাসী দল সাধারণত বাইরের পৃথিবীর মানুষের সাথে যোগাযোগ করে না। তারা অন্যদের সাথে সংঘর্ষ এবং বিভিন্ন রোগবালাই এড়ানোর জন্য মানুষের থেকে দূরে থাকে। গবেষকদের মতে, আমাজন থেকে তাদের এভাবে বের হয়ে আসাটা অস্বাভাবিক। নিশ্চয়ই এমন গুরুতর কিছু হয়েছে যাতে তারা নিজেদের সহজাত এলাকা থেকে বের হয়ে এসেছে।

এই আদিবাসী দলের কয়েক ডজন সদস্য ব্রাজিলের এনভিরা নদীর কাছে স্থানীয় আশানিনকা আদিবাসীদের বাসস্থানের কাছে এসে পড়েছে বলে দেখা যায়। তাদের পায়ের ছাপ, অস্থায়ী ক্যাম্প এবং উচ্ছিষ্ট খাবারের নিদর্শন দেখা যায়। ধারণা করা হচ্ছে, ওই অঞ্চলে ঘাঁটি গাড়া মাদক পাচারকারী এবং অবৈধ কাঠুরেদের হাত থেকে বাঁচতে তারা নিজেদের সহজাত পথ থেকে সরে এসেছে। ব্যাপারটা আপাতদৃষ্টিতে সাধারণ মনে হলেও আসলে কিন্তু তা বেশ আশঙ্কাজনক। কারণ এসব আদিবাসী মানুষ অনেক আগে থেকেই আলাদাভাবে বসবাস করে আসছে। আধুনিক মানুষের মাঝে যেসব রোগ সংক্রমিত হয়েছে তাদের অনেকগুলোর বিপক্ষেই তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কার্যকরী নয়। উদাহরন হিসেবে বলা যায়, ১৯৮০ সালের দিকে খ্রিস্টান মিশনারিরা ক্যাম্প করেছিলো উত্তর ব্রাজিলের যো আদিবাসীদের এলাকার কাছে। সাধারণ ফ্লু এবং ম্যলেরিয়ার কবলে পড়ে আদিবাসীদের অবস্থা হয় ভয়াবহ। নব আবিষ্কৃত এই আদিবাসীদের অবস্থাও হতে পারে একই রকম। শুধু রোগবালাই নয়, অন্যদের সাথে যে কোন রকমের সংঘর্ষেও তারা মারা পড়তে পারে।

ব্রাজিলের ওই অঞ্চল থেকে আসা একজন স্থানীয় আদিবাসী নিশিওয়াকা ইয়াওয়ানাওয়া বলেন, তার প্রতিবেশি আদিবাসীদের এমন অবস্থা হতে পারে তা চিন্তা করাটাও ভয়াবহ। শুধু তাই নয়, ওই এলাকার কর্তৃপক্ষের সাথে তাদের যোগাযোগের কোনো ব্যবস্থা নেই বলে তাদের ঝুকি আরও বেশি। ব্রাজিল এবং পেরু উভয় দেশেরই উচিত এই আদিবাসীদের রক্ষার ব্যবস্থা করা।

(ওএস/এটিআর/জুলাই ০৭, ২০১৪)