ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি : আগামী ১৩ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনে উপ-নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। টানা চারবারসহ মোট পাঁচবার এ আসনের সাংসদ ছিলেন প্রয়াত মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুল হক। হাওরবেষ্টিত এ আসন থেকে বারবার জয় লাভ করতে খুব একটা বেগ পোহাতে হয়নি সততার মূর্ত প্রতীক ছায়েদুল হককে। ২০০১ সালের নির্বাচনে চট্টগ্রাম বিভাগে আওয়ামী লীগের ফল বিপর্যয়ের মধ্যেও বিজয়ী হয়ে চমক দেখিয়েছিলেন তিনি।

তবে আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান এ নেতার মৃত্যুতে পাল্টে গেছে এবারের ভোটের সব হিসাব-নিকাশ। আওয়ামী লীগের দূর্গ হিসেবে পরিচিত এ আসনটি ধরে রাখতে জাতীয় পার্টির (জাপা) লাঙ্গলের সঙ্গেই লড়াই করতে হবে নৌকাকে।

উপ-নির্বাচন হলেও উৎসব-আমেজের কোনো কমতি নেই নাসিরনগরে। প্রার্থীদের পোস্টারে ছেয়ে গেছে উপজেলা সদর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামের অলি-গলি পর্যন্ত। এবার তিনজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে লড়ছেন ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম, জাপার রেজওয়ান আহমেদ ও ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী আবুল কাশেম।

ছায়েদুল হকের মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের তার অনুসারীরা মাঠে নামেন স্ত্রী দিলশাদ আরা মিনুর জন্য। তবে মিনু দলের মনোনয়ন না পাওয়ায় খুব একটা মাথা ব্যাথা নেই তাদের। নাসিরনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান সরকারেরও ক্ষোভ আছে দল মনোনীত প্রার্থী সংগ্রামের বিরুদ্ধে। তিনিও দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। গত কয়েকদিন আগে ছাত্রলীগের একটি সভায় মনিরুজ্জামান ও সংগ্রামের মধ্যে উচ্চবাক্য বিনিময়ও হয়। বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় জেলা ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগে।

তবে বিএনপির নির্বাচনে না আসা ও নাসিরনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে শেষ পর্যন্ত জাপার প্রার্থী রেজওয়ান বিজয়ী হতে পারেন বলেও ধারণা করছেন অনেকে। এছাড়া আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে ঠেকাতে উপজেলা বিএনপির একটি বড় অংশ জাপার প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছে বলেও মাঠে গুঞ্জন রয়েছে।

এদিকে প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলছে প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণা। প্রার্থীদের প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতৃবৃন্দ। বিএনপি না আসায় মূলত নৌকার সাথে লাঙ্গলেরই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে মনে করছেন সবাই। ভোটের আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকি। শেষ সময়ে প্রচারণায় ব্যস্ত প্রার্থীরা দম ফেলারও ফুরসত পাচ্ছেন না। ভোটের আশায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধর্ণা দিয়ে এলাকার সার্বিক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তারা।

আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম বলেন, নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে আমার নিজস্ব কিছু চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। নাসিরনগর একটি সম্ভাবনাময় এলাকা। বিজয়ী হলে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে এলাকার উন্নয়নে কাজ করব।

তবে ভোটের দিন কারচুপির শঙ্কা প্রকাশ করে জাপা প্রার্থী রেজওয়ান আহমেদ বলেন, আওয়ামী লীগের লোকজন অপপ্রচার করছে তারা কারচুপি করে নির্বাচনের ফলাফল তাদের পক্ষে নেবে। ভোটাররা যেন কেন্দ্রে কম যায় সেজন্য তারা অপপ্রচার করছে। আমাদের লোকজনদের নানাভাবে হয়রানি করছে।

ভোটের দিনের নিরাপত্তার ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলার পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, ভোটকেন্দ্রগুলোকে আমরা সাধারণ ও গুরুত্বপূর্ণ ক্যাটাগরিতে ভাগ করেছি। আনসার সদস্যদের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি কেন্দ্রে ১০ জন এবং সাধারণ কেন্দ্রগুলোতে চারজন করে পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এর বাইরে সবগুলো কেন্দ্রের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৩৯টি ভ্রাম্যমাণ দল এবং প্রতিটি ইউনিয়নের জন্য একটি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স মাঠে থাকবে। এছাড়াও সাত প্লাটুন বিজিবি সদস্য ও প্রতিটি ইউনিয়নে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) দুটি করে দল টহলে থাকবে।

তিনি আরও বলেন, ১৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও চারজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকি করবেন। আমরা আশা করছি ভোটকেন্দ্রে কেউ কোনো ধরনের ঝামেলা করতে পারবে না। তারপরও আমরা সতর্ক অবস্থানে থাকব।

(ওএস/এসপি/মার্চ ০৫, ২০১৮)