সিলেট প্রতিনিধি : সিলেট-৩ আসনের এমপি মাহমুদ উস সামাদ কয়েস বলেছেন, জনপ্রিয় লেখক, অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালকে বন্দরবাজার পয়েন্টে নিয়ে চাবুক মারার কথা আমি বলিনি। আমার বক্তব্যটি ম্যানুপুলেট করা হয়েছে। আমার বক্তব্যের সঙ্গে 'চাবুক মারার' অংশটুকু যুক্ত করা হয়েছে। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যন্ত একটি গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে তদন্ত করে দেখেছেন, আমার বক্তব্যের সঙ্গে অন্যের বক্তব্য সংযুক্ত করা হয়েছে।

মঙ্গলবার সিলেট নগরের একটি হোটেলের সম্মেলনকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।

২০১৫ সালের ৯ মে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে একটি সমাবেশে জাফর ইকবালের প্রতি বিষেদগার করেন মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস এমপি।

ওই সমাবেশে কয়েসের বক্তব্যের একটি অডিওক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে এই সংসদ সদস্যকে বলতে শোনা যায়-

'আমি ছিলাম শাহজালাল ইউনিভার্সিটিতে, সেখানে সিলেটি ছেলেদের ওরা ভর্তি করানোর জন্য ১৪ কালো আইন কানুন দাঁড় করিয়ে রেখেছে। এই যে, আপনার কি যেন এটার নাম জাফর ইকবাল, সে হলো ১ লক্ষ পারসেন্ট গৌড়গোবিন্দ, সে চায়না সিলেটের মানুষ শাহজালাল ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হোক। এখানে যে ভিসি ছিল তাকেও দিয়েছে তাড়িয়ে। আর এই সিলেটের মানুষ তাকে ফুলচন্দন নিয়ে সুন্দর সুন্দর ফুল নিয়ে প্রত্যেক দিন মূর্তিপুজা করতে যায়। আমি যদি বড় কিছু হতাম তাকে ধরে চাবুক মারতাম কোর্ট পয়েন্টে এনে ...জাফর ইকবাল তাকে আমি চাবুক মারতাম। এই লেফইষ্টরা আমাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছে।

এই বক্তব্য চাউর হলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন এমপি কয়েস। এই সমালোচনার সময়েই সিলেট নগরে জাফর ইকবালের শাস্তি চেয়ে মিছিল করে আওয়ামী লীগ দলীয় এই সংসদ সদস্যের অনুসারীরা।

তবে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে কয়েস দাবি করেন, চাবুক মারার বক্তব্য তিনি রাখেননি। মঙ্গলবার নিজের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি তুলে ধরতে এ সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন এমপি কয়েস।

এতে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, জাফর ইকবালকে চাবুক মারার আগ্রহ প্রকাশ করে বক্তব্য দেয়ার প্রসঙ্গ তুলে জাফর ইকবালের উপর সাম্প্রতিক হামলার ব্যাপারে তার প্রতিক্রিয়া জানতে চান। জবাবে চাবুক মারার আগ্রহ প্রকাশ করে বক্তব্য দেয়ার কথা অস্বীকার করেন কয়সে।

এসময় জাফর ইকবালের উপর হামলার নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল আমাদের দেশের সম্পদ, আমরা তাকে নিয়ে গর্ব করি। তার মতো বিজ্ঞানী ও শিক্ষক আমাদের দেশে আরও বেশি প্রয়োজন।

উল্লেখ্য, গত ৩ মার্চ শনিবার বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে ইইই ফেস্টিভ্যালের সমাপনী অনুষ্ঠান চলার সময়ে জাফর ইকবালের ওপর হামলা করে ফয়জুর হাসান নামের এক যুবক। এ সময় তার মাথায় ছুরিকাঘাত করে হামলাকারী। ঘটনার পর পরই ফয়জুরকে আটক করে গণপিটুনি দেয় শিক্ষার্থীরা।

ঘটনার পর জাফর ইকবালকে গুরুতর আহতাবস্থায় উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত আছেন।

(ওএস/এসপি/মার্চ ০৬, ২০১৮)