হবিগঞ্জ প্রতিনিধি : টাকার অভাবে আটকে আছে হবিগঞ্জের মাধবপুরের জগদীশপুরে মুক্তিযুদ্ধ চত্বরে নির্মিতব্য ভাস্কর্যের কাজ। নির্মাণ কাজ শেষ করতে বিত্তবানদের সহযোগিতা চেয়েছে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ও উপজেলা প্রশাসন।

মহান মুক্তিযুদ্ধে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার জগদীশপুরে অবস্থান নিয়েছিল বিদ্রোহী বাঙালি সেনাসহ ছাত্র ও যুবসমাজ। পরবর্তীতে তেলিয়াপাড়া ডাকবাংলোয় অবস্থান নেন তারা। ১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল সেখান থেকেই মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়। সীমান্তঘেষা এ এলাকায় পাকিস্তানি সেনাদের সাথে হয় তুমুল যুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষার্থে ২০১৫ সালে জগদীশপুরে ভাস্কর্য নির্মাণের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও উপজেলা প্রশাসন। কিন্তু অর্থাভাবে ১ বছর ধরে আটকে আছে এর নির্মাণ কাজ।

সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান খায়রুল ইসলাম মনু জানান, ঐতিহাসিক ওই স্থানটিতে ভাস্কর্য নির্মাণ হলে বৃহত্তর সিলেটের প্রবেশদ্বার মাধবপুর আরো সুন্দর হবে। রাস্তা দিয়ে কেউ আসা-যাওয়া করলে ভাস্কর্যের দৃশ্য দেখে মুক্তিযদ্ধের ইতিহাস অনেককেই মনে করিয়ে দেবে। আমরা অবিলম্বে ভাস্কর্যটি নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।

আনোয়ার হোসেন মিঠু জানান, জগদীশপুর মুক্তিযুদ্ধ চত্বরে আমরা ভাস্কর্য নির্মাণ দেখে খুশি হয়েছিলাম। ভাস্কর্য মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণ করবে। কিন্তু হঠাৎ করে ভাস্কর্য নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। আমরা নির্মাণ কাজ সম্পন্নের জন্য সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আশার আহ্বান জানাচ্ছি।

জগদীশপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ সফিকুল ইসলাম জানান, মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্থান তেলিয়াপাড়া ডাকবাংলোর প্রবেশপথ জগদীশপুর মুক্তিযুদ্ধ চত্বরে বিভিন্ন কোম্পানীর অর্থ অনুদানের আশ্বাসে ভাস্কর্য নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু ভাস্কর্য নির্মাণ শুরু হওয়ার পর কোম্পানীগুলো তাদের আশ্বাস অনুযায়ী অর্থ অনুদান না দেয়ায় ভাস্কর্য নির্মাণ বন্ধ হয়ে যায়। আমরা কোম্পানীগুলোর প্রতি আহ্বান জানাবো তারা যেন ভাস্কর্যটির নির্মাণ কাজে এগিয়ে আসে।

জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডার অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী পাঠান জানান, জগদীশপুরে মুক্তিযুদ্ধ চত্বরে ২০১৫ সালে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ও প্রশাসনের উদ্যোগে ভাস্কর্য নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। ৭১ ফুট উচু ভাস্কর্যটির নির্মাণ ব্যয় প্রায় ২ কোটি টাকা ধরা হয়েছিল।

ভাস্কর্যটির উপর জাতীয় ৪ নেতার ছবি, কর্ণেল ওসমানি, মুক্তিযুদ্ধের উপ-সর্বাধিনায়ক এমএ বর ও সেক্টর কমান্ডারদের ছবি থাকবে এবং মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ভাস্কর্য থাকবে। সর্ব উপরে একজন মুক্তিযোদ্ধার হাতে ঢাল ও ঢালের মধ্যে একটি পতাকা থাকবে।

পতাকাটি সকালে উঠবে আর সন্ধ্যায় নেমে যাবে। নির্মাণের শুরুতে স্কয়ার, আরএকে, বাদশা গ্রুপসহ বিভিন্ন কোম্পানী ভাস্কর্যটি নির্মাণে স্পন্সর করবে বলে আশ্বাস দিয়েছিল। যারা স্পন্সর করবেন তাদের বিজ্ঞাপন থাকবে। কোম্পানীর আশ্বাস অনুযায়ী ভাস্কর্যটি নির্মাণে বাংলা মা গ্রুপ নামের একটি কোম্পানীকে বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। আর বাংলা মা গ্রুপ ভাস্কর্য নির্মাণ কাজের দায়িত্ব দিয়েছিলেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ভাস্কর্য শিল্পী ভাস্কর্য রাসাকে। সেই অনুযায়ী ২০১৫ সালের ১৭ মে আলোচনার ভিত্তিতে মাধবপুর উপজেলার তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম ও বাংলা মা গ্রুপের ব্যবস্থপনা পরিচালক সঞ্জয় ঘোষ চুক্তিনামায় স্বাক্ষর করেন।

পরবর্তীতে একই বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর ভাস্কর্য নির্মাণের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করা হয়। প্রায় ১৫ লাখ টাকার কাজ করার পর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কোম্পানীগুলো অর্থ প্রদান না করায় এক বছর ধরে ভাস্কর্যের নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে আছে। আমরা ভাস্কর্য নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার জন্য কোম্পানীগুলোর সাথে আবারও যোগাযোগ করেছি। ইনশাআল্লাহ সমাজের বিত্তবান ও কোম্পানীগুলো এগিয়ে আসলে ভাস্কর্যটি নির্মাণ হবে। এজন্য আমরা সকলের সহযোগিতা কামনা করছি। তিনি বলেন- ভাস্কর্য নির্মিত হলে এলাকার সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধ ও হবিগঞ্জসহ বৃহত্তর সিলেটের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানবে নতুন প্রজন্ম।

মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোকলেছুর রহমান জানান, ভাস্কর্য নির্মাণের জন্য বাংলা মা গ্রুপের সাথে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চুক্তি করেছিলেন। চুক্তি অনুযায়ী বাংলা মা গ্রুপ কাজ শুরু করেছিলো। কিন্তু পরবর্তীতে তারা স্পন্সর জোগার করতে পারেননি বলে ভাস্কর্য নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বাংলা মা গ্রুপের সাথে আমাদের যোগাযোগ রয়েছে। স্পন্সর পেলে তারা নির্মাণ কাজ শুরু করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

তিনি বলেন, জগদীশপুরে মুক্তিযুদ্ধের এই স্মৃতিস্তম্ভটি স্থাপনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সেক্টর তেলিয়াপাড়াকে পরিচিতি করা। নতুন প্রজন্মসহ যারা এদিক দিয়ে চলাচল করবে তারা মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানবে। ভাস্কর্যটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় হবে। ভাস্কর্যটি সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে পর্যটকদের আকর্ষণ করবে। তিনি ভাস্কর্যটি নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার জন্য কোম্পানীগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

(এমইউএ/এসপি/মার্চ ০৬, ২০১৮)