স্পোর্টস ডেস্ক, ঢাকা : মুকেশ অম্বানীর কোম্পানি আইএমজি-আর ফুটবল ফেডারেশনকে গত কয়েক বছরে কয়েকশো কোটি টাকা দিলেও তেমন ব্যবসা পায়নি। আই লিগ বা ফেড কাপকে সে ভাবে বিপণনও করতে পারেনি। সে জন্যই তারা এ বার সাতশো কোটি টাকার ফুটবল আইপিএলের দিকে ঝুঁকেছে। সেপ্টেম্বরে যা শুরু হতে চলেছে। রবিবারই সরকারি ভাবে ঠিক হয়ে যাবে আট দলের এই লিগের ফ্র‌্যাঞ্চাইজিগুলি কারা-কারা পেল। শুক্রবার বিকেল থেকেই দরপত্র নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। 

ক্রিকেট আইপিএলে ললিত মোদী যে ভূমিকায় ছিলেন ফুটবল আইপিএলে সেই দায়িত্বে রয়েছেন ইংল্যান্ডের জেফারসন স্ল্যাক। এক সময় ইন্টার মিলানের সিইও জেফারসন বর্তমানে আইএমজি-র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং গ্লোবাল ফুটবলের দায়িত্বে। চিনে এ রকম ক্লাব ভিত্তিক টুর্নামেন্ট করে সে দেশে ফুটবলের খোলনলচেই বদলে দিয়েছিলেন জেফারসন। ফুটবল আইপিএলের পুরো পরিকল্পনাই তাঁর। তিনিই ছোট ছোট টিম বানিয়ে টেনে এনেছেন সবাইকে। টুর্নামেন্ট নিয়ে আগ্রহী করে তুলেছেন বলিউড তারকা, ক্রিকেটার, টেনিস তারকা, কর্পোরেট কর্তাদের। আই লিগ খেলা ডেম্পো এবং সালগাওকর যুগ্ম ভাবে গোয়ার টিম নিতে চাইছে। ভিডিওকনের মতো কোম্পানিকে সঙ্গে নিয়ে দরপত্র জমা দিয়েছে। তারাও বুঝে গিয়েছে, আই লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়ে কোনও লাভ নেই, ব্যবসা যদি হয়, সেটা হবে ফুটবল আইপিএলেই।


এ দিন মুম্ব‍াইতে সাত জনের প্যানেল টিম কেনার জন্য জমা পড়া যে দরপত্রগুলো নিয়ে পরীক্ষা করতে বসেছে, তাতে বিভিন্ন ফ্রাঞ্চাইজির সঙ্গে দেখা যাচ্ছে জড়িয়ে গিয়েছেন প্রচুর তারকা। অমিতাভ বচ্চন, সালমান খান, জন আব্রাহাম, রণবীর কাপূর সবাই কিনতে চান দল। কোনও না কোনও কোম্পানির সঙ্গী হয়ে।


ললিত মোদী ক্রিকেট আইপিএল শুরুর সময় নির্ভর করেননি কোনও ফুটবলারের উপর। আইএমজি-আরের নতুন হোম-অ্যাওয়ে লিগে যুক্ত হচ্ছেন শচীন টেন্ডুলকার, সৌরভ গাঙ্গুলীর মতো ভারতীয় ক্রিকেটের দুই মহাতারকা। সৌরভ সরাসরি কলকাতার দল কেনার জন্য দরপত্র জমা দিয়েছেন। বাংলার দুই ব্যবসায়ী সঞ্জীব গোয়েঙ্কা এবং হর্ষ নেওটিয়াকে সঙ্গে নিয়ে। সৌরভের টিমের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন ভারতীয় ফুটবলের এক বড়কর্তার আত্মীয় উৎসব পারেখ। শচীন অবশ্য সরাসরি কোনও দরপত্র জমা দেননি। হায়দরাবাদের একটি কোম্পানি পিভিপি ভেঞ্চারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন মাস্টার ব্লাস্টার। শোনা যাচ্ছে, দরপত্র জমা দিয়েছেন টেনিস তারকা মহেশ ভূপাতিও। কোচির জন্য।


ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে ভারত এখন ১৪৫-এ। আই লিগ চালুর পর ফুটবল আটকে আছে শুধু বাংলা, গোয়া, মুম্বাই, শিলংয়ের মতো গুটিকয়েক রাজ্যেই। ক্রিকেটের মতো ছড়িয়ে পড়েনি আসমুদ্র হিমাচল। প্রফুল্ল পেটেল প্রেসিডেন্ট হয়ে আইএমজি-আরকে স্পনসর করে আনার পর ফেডারেশনের আর্থিক দুর্দশা কিছুটা হয়তো ঘুচেছে, কিন্তু ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে প্রথম ১০০-র ভেতর ঢুকতে পারেনি ভারত। সাফ আর নেহরু কাপেই আটকে থেকেছে সাফল্য। আই লিগ, ফেড কাপেই শেষ হয়ে গিয়েছে সব আকর্ষণ। হতাশ আইএমজি কর্তারা শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেন ক্রিকেটের মতো ফুটবলকে আকর্ষণীয় করতে নিখাদ বিনোদনের পসরা নিয়ে হাজির হবেন।


তাঁরাই ফেডারেশনকে প্রস্তাব দেন, আট দলের সুপার লিগের। যাতে আকর্ষণ বাড়াতে সদ্য প্রাক্তন বিশ্বকাপাররা খেলবেন। খেলবেন ভারতের তারকা ফুটবলাররাও। কিন্তু আই লিগের ক্লাবগুলির বাধায়, তা এত দিন হতে পারছিল না। বাধা পেতে-পেতে শেষ পর্যন্ত স্পনসরশিপ তোলার হুমকিও নাকি দিয়েছিল আইএমজি-আর। দেশের ফুটবলের প্রেসিডেন্ট হয়েও নিখাদ ক্রিকেট-ভক্ত প্রফুল্ল পেটেলের হস্তক্ষেপ করেন পুরো বিষয়টিতে।


আইএমজি-আর সূত্রের খবর, এই টুর্নামেন্টের সম্প্রচার স্বত্ব ইতিমধ্যেই বিক্রি হয়ে গিয়েছে দু’শো কোটিতে। ডেভিড বেকহ্যাম, হার্নান ক্রেসপো, রোনাল্ডিনহোর মতো বিশ্ব ফুটবলের মহাতারকাকে যুক্ত করার চেষ্টা চলছে। ১২ কোটির বেসপ্রাইসে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ কলকাতা নিয়ে। মুম্বাইতে ফোন করে জানা গেল, প্রাথমিক রাউন্ডের শেষে কলকাতার টিম কেনার দৌড়ে সৌরভ গঙ্গুলী অনেকখানি পিছনে ফেলে দিয়েছেন নাইট রাইডার্সের মালিক শাহরুখ খানকে। সৌরভই সম্ভবত শেষ হাসি হাসবেন।


কলকাতা কিনতে আগ্রহী শাহরুখ খানকে রাজি করানোর চেষ্টা চলছে দিল্লির ফ্র‌্যাঞ্চাইজি কেনার জন্য। দরপত্রে দ্বিতীয় পছন্দ হ্সিাবে শাহরুখ দিল্লিকেই বেছেছিলেন। কোচি কেনার লড়াইয়ে মহেশ ভূপাতিকে পিছনে ফেলে দিয়েছেন শচীন। মুম্বাইয়ের জন্য রণবীর কাপূরের কোম্পানিই পছন্দ প্যানেলের। বেঙ্গালুরু পেতে পারে অমিতাভ বচ্চনের কোম্পানি। পুণে কেনার দৌড়ে অনেকখানি এগিয়ে সালমান খানের কোম্পানি। গুয়াহাটি চলে যেতে পারে জন আব্রাহামের হাতে।


ভোটের মতোই দৌড়ে এগিয়ে যাওয়া-পিছিয়ে যাওয়ার খবর আসছে মুম্বাই থেকে। খুব গোপনে চলছে ফ্রাঞ্চাইজি বাছাইয়ের কাজ। আইএমজি-আরের এক মুখপাত্র বললেন, “শনিবার রাতের দিকেই বোঝা যাবে কে পাচ্ছে কোন দল। পরিকাঠামো থেকে আথিক অবস্থা দেখা হচ্ছে অনেক কিছু। রবিবার আমরা সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়ে দেব সব কিছু।”

(ওএস/পি/এপ্রিল ১৩,২০১৪)