হবিগঞ্জ প্রতিনিধি : হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার খড়কী গ্রামের যুবক সালাউদ্দিনের দায়ের করা প্রতারণার মামলায় হবিগঞ্জ সদর থানা পুলিশ সিলেট থেকে মডেল কন্যা ফাহিমা চৌধুরী ও গীতিকার হোসাইন চৌধুরীকে গ্রেফতার করেছে। তাদের গ্রেফতারের ঘটনায় বাদী ও বিবাদীপক্ষের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। একে অপরের বিরুদ্ধে অনৈতিক কর্মকান্ডের চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছেন।

মাধবপুর উপজেলার খড়কী গ্রামের সালাউদ্দিন দাবি করেন- লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার সোনাপুর গ্রামের ফারুক চৌধুরীর মেয়ে ফাহিমা চৌধুরী ফারিন ওরফে পায়েল এবং সিলেট শহরের হাউজিং এস্টেট এলাকার নুরুন্নবী চৌধুরীর ছেলে হোসাইন চৌধুরী মিলে দীর্ঘদন যাবৎ নিরীহ লোকজনকে হয়রানী ও প্রতারণা করে আসছেন। তাদের সাথে ঢাকায় সালাউদ্দিনের পরিচয় হয়।

এক পর্যায়ে তাদের সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ট হলে তারা জানায় তাদের কাছে দুবাইর ভাল ভিসা আছে। বেতন ভাল। এই কথা বিশ্বাস করে একটি হ্যান্ড নোটের মাধ্যমে ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা সালাউদ্দিন তাদেরকে দেন। তারা ঢাকা থেকেই পাসপোর্ট ইস্যু করবে এবং দ্রুত ভিসা হবে বলে আশ্বাস দিলেও দিনের পর দিন কোন অগ্রগতি হয়নি। পরে টাকা ফেরত চাইলে সালাউদ্দিনের ছবি এডিট করে ফেসবুকে মেসেজ দিয়ে হুমকি দিয়ে উল্টো টাকা দাবি করে।

মান সম্মানের ভয়ে সালাউদ্দিন বিভিন্ন সময় টাকা দিলেও পরে আবারও টাকা দাবি করে। সালাউদ্দিন এ ব্যাপারে থানায় জিডি করে। সর্বশেষ মেসেজ দিয়ে হুমকি দেয় টাকা না দিলে ফেসবুক অথবা পত্রিকায় ‘শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চায় সালাউদ্দিন, কে সেই সালাউদ্দিন’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করা হবে।

এ অবস্থায় নিরুপায় হয়ে সালাউদ্দিন গত ২৭ ডিসেম্বর তাদের বিরুদ্ধে হবিগঞ্জ সদর থানায় প্রতারণার মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে হবিগঞ্জ সদর থানার এসআই সামছুল ও এসআই কামাল সিলেট নগরীতে গিয়ে দরগা গেইট এলাকা থেকে ফাহিমা ও হোসাইন চৌধুরীকে গ্রেফতার করেন। বুধবার সকালে তাদেরকে হবিগঞ্জ সদর থানায় নিয়ে আসা হয়। দুপুরে তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করে পুলিশ।

হবিগঞ্জ সদর থানায় ফাহিমা চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, তিনি সালাউদ্দিনের প্রতারণার শিকার। তিনি দাবি করেন- লক্ষ্মীপুর ডিগ্রী কলেজে অধ্যয়নকালে মোবাইল ফোনে রং নাম্বারে হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার খড়কী গ্রামের মোঃ তাহের মিয়ার ছেলে সালাউদ্দিনের সাথে তার পরিচয় হয়। এরপর তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে এবং এক পর্যায়ে প্রায় তিন বছর পূর্বে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

বিয়ের পর তারা ঢাকায় বসবাস শুরু করেন। বিয়ের পর ফাহিমা জানতে পারেন সালাউদ্দিন বিবাহিত। বিষয়টি সালাউদ্দিনের প্রথম স্ত্রীও জেনে যান। এরই মধ্যে ফাহিমা সন্তান সম্ভবা হলে সালাউদ্দিন তাকে একটি ক্লিনিকে নিয়ে গর্ভপাত করান। এরপর তাদের দাম্পত্য জীবনে অশান্তি শুরু হয়। সালাউদ্দিন ফাহিমার উপর বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন এবং তিনি ফাহিমাকে নির্যাতন করেন। নির্যাতনের শিকার হয়ে ফাহিমা ঢাকার যাত্রাবাড়ি থানায় জিডি করেন। জিডি নং ১৮০৭-২৪/০১/২০১৬। এ পরিস্থিতিতে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণ করেন মাধবপুর উপজেলার বাঘাসুরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহাবউদ্দিন আহমেদ।

তিনি ফাহিমাকে দেড় লাখ টাকা প্রদান করে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্নের সিদ্ধান্ত দেন। উভয় পক্ষ সিদ্ধান্ত মেনে নেন এবং সিদ্ধান্ত মোতাবেক সালাউদ্দিন ফাহিমাকে নগদ ৫০ হাজার টাকা প্রদান করেন। বাকী এক লাখ টাকা পরে দেয়ার কথা। কিন্তু সালাউদ্দিন এক লাখ টাকা না দিয়ে ফাহিমার বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা দায়ের করেন।

ফাহিমা চৌধুরী জানান, সর্বশেষ সালাউদ্দিন টাকা দেয়ার প্রলোভন দিয়ে তাকে সিলেট দরাগা গেইট এলাকায় থাকতে বলেন। তিনি টাকার আশায় সালাউদ্দিনের কথামতো সেখানে অবস্থান নিলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।

(এমইউএ/এসপি/মার্চ ০৮, ২০১৮)