উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ ডেস্ক : স্বাধীন বাংলার দাবিতে অবিচল সর্বস্তরের মানুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশ অনুযায়ী সরকারের সাথে সবধরনের অসহযোগিতা অব্যাহত রাখেন । বঙ্গবন্ধু আহুত অসহযোগ আন্দোলনের সক্রিয়ভাবে শরিক হয়ে হাই কোর্টের বিচারপতি ও প্রশাসনের সচিব-সহ সারা বাংলায় সরকারি ও আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানের সর্বস্তরের কর্মচারী অফিস বর্জন করেন ।

আজও সচিবালয়, মুখ্য সচিবের বাসভবন, প্রধান বিচারপতির বাসভবন সহ সকল সরকারি ও আধাসরকারি ভবন ও বাসগৃহের শীর্ষে স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়তে থাকে ।

ন্যাপ(ওয়ালী) পূর্ববাংলা শাখার সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ, পাঞ্জাব আওয়ামী লীগ সভাপতি এম. খুরশীদ, কাউন্সিল মুসলিম লীগ প্রধান মমতাজ দৌলতানার বিশেষ দূত পীর সাইফুদ্দিন ও ঢাকায় নিযুক্ত জাতিসংঘের সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি কে. উলফ আজ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে তাঁর ধানমন্ডিস্থ বাসভবনে পৃথক পৃথক আলোচনা বৈঠকে মিলিত হন ।

সংগ্রামী জনতা সেনাবাহিনীর রসদ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর স্বাভাবিক সরবরাহের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে । সিলেটে রেশন নেয়ার সময় সেনাবাহিনীর একটি কনভয়কে বাধা দেয়া হয় । যশোরেও এধরনের ঘটনা ঘটে ।

রাতে সামরিক কর্তৃপক্ষ ১১৪নং সামরিক আদেশ জারি করে নির্দেশ দেন যে, কেউ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সরকারি সম্পতির ক্ষতিসাধন করলে অথবা সশস্ত্রবাহিনীর রক্ষণাবেক্ষণের বা সেনাবাহিনীর গতিবিধিতে অন্তরায় সৃষ্টি করলে তাদের কার্যকলাপ আক্রমণাত্মক কাজের শামিল বলে গণ্য হবে, যা সংশ্লিষ্ট সামরিক বিধি অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য ।

টাঙ্গাইলে বিন্দুবাসিনী হাইস্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত জনসভায় ন্যাপ প্রধান মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী বঙ্গবন্ধু ঘোষিত স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ঘোষণা করে বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান সাতকোটি বাঙালির নেতা । নেতার নির্দেশ পালন করুন । লক্ষ্য অর্জনের জন্য সবাই সাথে হয়ে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম করুন । এ মুহূর্তে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোন রকম বিরোধ থাকা উচিত নয় । জনগণ এখন নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়েছে ।

পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো করাচী থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে একটি তারবার্তা পাঠান । তারবার্তায় ভুট্টো বলেন, উদ্ভুত সাম্প্রতিক ঘটনাবলিতে আমি গভীর ভাবে মর্মাহত ও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছি । আমরা আজ বিরাট সঙ্কটের মুখোমুখি । দেশের ভবিষ্যৎ আজ অনিশ্চিত । এ ব্যাপারে আমাদের উভয়ের অনেক দায়িত্ব রয়েছে । ধ্বংস এড়ানোর জন্য সম্ভাব্য সবকিছুই আমাদের করতে হবে । যেকোন মূল্যের বিনিময়ে দেশকে রক্ষা করতে হবেই ।

করাচীতে গণঐক্য আন্দোলনের নেতা এয়ার মার্শাল (অব.) আসগর খান সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, খুব দ্রুত পটপরিবর্তন হচ্ছে । দেশকে বিচ্ছিন্নতার হাত থেকে রক্ষা করতে হলে যথা শিগ্গির ব্যবস্থা নিতে হবে । আওয়ামী লগি প্রদান শেখ মুজিবুর রহমানই কার্যযত এখন ঢাকার সরকার । সেখানে সব সরকারি কর্মচারী এবং সচিবরা তাঁর নির্দেশ পালন করছেন। ঢাকায় কেবল সামরিক সদর দফতরে পাকিস্তানি পতাকা উড়ছে। তিনি আরো বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের হাতে অবিলম্বে ক্ষমতা ছাড়া না হলে দেশের দু’অংশকে এক রাখা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না।

তথ্যসূত্র :মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
(ওএস/এএস/মার্চ ১১, ২০১৮)