ষ্টাফ রিপোর্টার : আশুলিয়ায় ট্রাফিক পুলিশ সদস্য নূরুল আমিন-এর বেত্রাঘাতে রিক্সা চালক আব্দুল মালেক(৪০) কে অচেতন অবস্থায় স্থানীয় নারী ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসার জন্যে ভর্তি করেছে পুলিশ ও স্বজনরা। এ ঘটনায় দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ কনেস্টবল নুরুল আমিনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। 

রবিবার দুপুরে আশুলিয়ার আব্দুল্লাহপুর-বাইপাইল সড়কের জামগড়া চৌরাস্তা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

আহত রিক্সা চালক আব্দুল মালেক বগুড়া জেলার আদমদিঘি থানাধীন দরিয়াপুর এলাকার মৃত আফজাল সরদারের ছেলে। সে আশুলিয়ার চিত্রশাইল কাঁঠালতলা এলাকার আব্দুল ওহাবের বাড়িতে ভাড়া থেকে ২ ছেলে, ২ মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করেন। সে ওই এলাকায় ৬ বছর যাবৎ রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। তার স্ত্রী শিখা বেগম জামগড়া এস সুহী ইন্ডাস্ট্রী নামে একটি পোশাক কারখানায় হেলপার হিসেবে চাকুরি করেন।

এ ব্যাপারে আহতের স্ত্রী শিখা বেগম জানান, প্রতিদিনের ন্যায় তার স্বামী রিক্সা চালাতে গিয়ে দুপুরে জামগড়া চৌরাস্তা এলাকা দিয়ে রাস্তা পারাপারের মূহুর্তে একটি পরিবহণের সামনে পরে। এসময় সে রিক্সাটি থামিয়ে দাঁড়িয়ে যান। হঠাৎ পিছনদিক থেকে এসে ট্রাফিক পুলিশ সদস্য নূরুল আমিন তার স্বামীর কাঁধে বেত দিয়ে আঘাত করেন। এরপর সে পিছনের নিতম্বে বেত্রাঘাত করেন। এসময় আঘাত তার স্বামীর অন্ডকোষে লাগলে সে অচেতন হয়ে সড়কে পরে যান। তখন সাধারণ জনতা তাকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়। পরে তাকে পুলিশের সহায়তায় সাধারণ জনতা স্থানীয় নারী ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসার জন্যে ভর্তি করে এবং তাকে খবর দেয়।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মালেক বলেন, বিনা অপরাধে ট্রাফিক পুলিশ সদস্য তাকে পিটিয়ে আহত করেছে। একটি আঘাত তার অন্ডকোষে লেগেছে। সে এ ঘটনায় মাটিতে লুটিয়ে পরেন। বর্তমানে সে আশঙ্কামুক্ত বলেও জানান।

হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক মোসাদ্দিক বলেন, মালেককে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তার জ্ঞান ফিরে এসেছে। তার অন্ডকোষের আঘাতের জন্য এক্স রে করা হয়েছে। পরীক্ষার পর বিস্তারিত জানা যাবে। তবে এখন তার অবস্থা ভাল। কোন ধরণের সমস্যা নেই।

রিক্সা চালককে পিটিয়ে আহত করার ঘটনায় উপস্থিত অন্যান্য রিক্সা চালক, শ্রমিক ও সাধারণ জনতা ওই সড়কের সকল প্রকার যানবাহণ চলাচলে বাঁধার সৃষ্টি করে এবং ট্রাফিক পুলিশের ওপর চড়াও হয়। এতে ওই সড়কের প্রায় ৩০মিনিটের জন্য সকল প্রকার যানবাহণ চলাচল বন্ধ থাকে। এসময় সড়কটিতে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে থানা পুলিশের সহায়তায় সড়কটিতে যানবাহণ চলাচল স্বাভাবিক হয়।

এদিকে আহত রিক্সা চালককে দেখতে হাসপাতালে ছুটে আসেন ঢাকা জেলা এডিশনাল পুলিশ সুপার শরীফুল ইসলাম, আশুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল আউয়াল, ইন্সপেক্টর ওবায়দুল, ডিবি পুলিশ উত্তর এর ওসি এ এফ এম সায়েদ।

জানতে চাইলে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর সেকান্দার বলেন, ঘটনার মূহুর্তে তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না। ওখানে দায়িত্বরত ছিল কনস্টেবল নূরুল আমিন। তিনি খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহত রিক্সা চালক আব্দুল মালেককে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্যে ভর্তি করেছেন। সে এখন আশঙ্কামুক্ত। চিকিৎসার সকল ব্যয়ভার পুলিশ বহণ করবেন বলেও জানান তিনি। তার রিক্সাটি অক্ষত রয়েছেন বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।

জানতে চাইলে ঢাকা জেলা এডিশনাল এসপি শরীফুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় ট্রাফিক পুলিশ কনেস্টেবল নূরুল আমিনকে ইতোমধ্যে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান পুলিশের ওই কর্মকর্তা।

উল্লেখ্য, আশুলিয়ায় ইতোপূর্বে ট্রাফিক পুলিশের নির্যাতনের একপর্যায়ে এক রিক্সা চালক নিজ শরীরে আগুন ধরিয়ে দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায় এবং এক পুলিশ সদস্যের নির্যাতনে স্মৃতিসৌধের অভ্যন্তরে এক চা বিক্রেতার অন্ডকোষ ফেটে মারা যান।

(টি/এসপি/মার্চ ১২, ২০১৮)