জে জাহেদ, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় পিডিবির অধীনে থাকা সরকারি জমির মাটি কেটে টানেল প্রকল্পে বিক্রি করা হচ্ছে। এক শ্রেনীর প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এসব মাটি কেটে নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এমনকি এ বিষয়ে কর্ণফুলী থানায় পিডিবি কতৃপক্ষ একটি জিডি (৪০৭) করেছে বলেও জানান।

সূত্রে জানা গেছে, আনোয়ারা এলাকায় প্রস্তাবিত কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রের সরকারি জমি থেকে খনন যন্ত্র (ভেকু) দিয়ে মাটি কেটে ৪টি ড্রাম ট্রাকে করে বিক্রি করছেন এক শ্রেনীর প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। ওই সব জমির মাটি কেটে ৮/১০ থেকে ফুট গভীর গর্ত করা হচ্ছে। এতে ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে আশপাশের এলাকা। ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে কৃষি ও ফসলি জমি।

প্রভাবশালী ব্যক্তিরা স্থানীয় ভূমি অফিস ও জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় এভাবে সরকারি মাটি বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। এ ব্যাপারে এলাকাবাসীর কোন অভিযোগ আমলে নিচ্ছে না স্থানীয় প্রশাসন। এমনকি পিডিবি থানায় জিডি করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেনা বলে তাদের অভিযোগ।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, এলাকার আনোয়ারা হোসেন ও মোহাম্মদ কামাল নামে দুই সাব ঠিকাদার এসব জমি হতে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এতে কেউ বাধা দিতে সাহস পাচ্ছেনা তাদের। কেননা উভয়েই স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায় এসব কাজ করছে বলে তাদের ধারনা।

এলাকার নাম প্রকাশে না করার শর্তে একজন শিক্ষক বলেন, প্রতি ট্রাক মাটি প্রকল্পের কাজে বিক্রি করা হয় চার হাজার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকায়। প্রতি ট্রাক মাটি প্রকল্পে পৌঁছানো পর্যন্ত খরচ হয় এক থেকে দেড় হাজার টাকা। প্রতিদিন একটি খনন যন্ত্র দিয়ে ৮০ থেকে ১০০ ট্রাক মাটি কেটে বিক্রি করে থাকেন ওই সকল মাটি ব্যবসায়ীরা। তাতে দৈনিক সাড়ে চার লক্ষ টাকার জমজমাট ব্যবসা।

আনোয়ারার এলাকার আরেক বাসিন্দা বলেন,কৃষি জমির মাটি কেটে ফেলায় এই এলাকা থেকে ফসলের আবাদ কমে যাচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া এসব কৃষি জমি রক্ষা করা সম্ভব না।

তথ্যসুত্রে জানা যায়, জমিটি বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোড’র (পিডিবি)। ২০১১ সালের জুনের দিকে চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের (সিইউএফএল) পাশের জমিতে কয়লা বিদ্যুত তৈরীর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার।

উচ্চ আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকায় ওই জমিতে সরকার কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুত প্রকল্প নির্মান থেকে সরে আসেন।

বিশাল এই জমিটি এক সময় দেশের অন্যতম শীর্ষ বেসরকারী শিল্প গ্রুপ বসুন্ধরার ছিল। ২০১১ সালের দিকে সেটি পিডিবি দখল করে নিয়েছে। যেহুতু আনোয়ারার মাঝের চরে ঐ জমিতে কয়লা বিদ্যুত তৈরী থেকে পিছু হটে আসেন। বিশাল জমিটি পাহারা দেয়ার জন্য আসনার নিয়োগ দেয়া হয়। ব্যারাক তৈরী করে ২০ জন আসনার সদস্য সেখানে থাকেন। তারা দিনে রাতে পালাক্রমে জমিটির রক্ষণাবেক্ষণ এবং পাহারা দেয়ার জন্য দায়িত্ব পালন করেন।

এই ২০ জন আনসার সদস্য’র বেতন দিয়ে থাকে পিডিবি। তাদের পেছনে মাসে আড়াই লক্ষ টাকা খরচ হয় বলে জানান প্রকল্প পরিচালক সামশুদ্দীন। সেইসব আনসার সদস্যদের সহায়তায় স্থানীয় ঠিকাদার আনোয়ার হোসেন ও মোহাম্মদ কামাল নামে ব্যক্তিরা রাতের অন্ধকারে ওই প্রকল্প থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে অভিযোগ ওঠেছে। অন্যদিকে জমিটি ফিরে পেতে বসুন্ধরা উচ্চ আদালতে চারটি মামলা দায়ের করেন। নিষেধাজ্ঞা জারীও আছেন ওই জমির উপর।

সরকারী খাস জমি কৃষি-অকৃষি জমিসহ সরকারের খতিয়ানভুক্ত জমি কিংবা মামলায় স্থগিত জমির দায়িত্বে থাকা ভূমিকর্তারা সরকারী সম্পত্তি রক্ষায় দায়িত্ববান না হওয়ায় ভূমি দস্যূরা মাটি কেটে বিক্রি করছে বলে জনগণ প্রশ্ন তুলেছে ।

এলাকাবাসী জানায়, উল্লিখিত জমি সরকারের তাই কোনদিন বৈধ মালিক হতে পারবে যেনে কৌঁশলে বালু বিক্রি করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পায়তারা শুরু করে করেছে।

অভিযুক্ত মোহাম্মদ কামাল এর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, বিষয়টি যেভাবে বলতেছে ও রকম নয়। তবে সরেজমিনে আসলে বুঝা যাবে সরকারি না কারো নিজস্ব জমি থেকে মাটি তুলছে। এমন মন্তব্য করেন তিনি।

অপরদিকে অভিযুক্ত মোঃ আনোয়ার বলেন, সরকারি জমি থেকেনয়। সে নিজের পৈতৃকসম্পত্তিতে রাস্তা তৈরি করে বন্দর কতৃপক্ষের ওয়ার্ক পারমিট ও অনুমতি নিয়ে নদী থেকে বালু উত্তোলন করছে বলে জানান। তবে স্থানীয়দের দাবি নদী নয় বরং সরকারি জমি হতে মাটি কেটে বিক্রি করছে।

এ বিষয়ে বসুন্ধরার জমি রক্ষণাবেক্ষণে দায়িত্বে থাকা ম্যানেজার মোহাম্মদ জহির উদ্দিনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, যেসব জমি হতে মাটি কাটা হচ্ছে সেসব বসুন্ধরার অধীনে ছিলো। কিন্তু উচ্চ আদালতের রায়ে এসব জমি বর্তমানে পিডিবির অধীনে চলে গেছে।

তিনি স্বীকার করেন গত কয়েকদিন যাবৎ ৪টি ড্রাম ট্রাকে করে বালু উত্তোলন করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কারা এসব করছে এমন প্রশ্নে তিনি জানান, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল ঠিকাদার পরিচয় দিয়ে এসব কাজ করছে বলে মন্তব্য করেন ।

দায়িত্বে থাকা ম্যানেজার জহির বলেন, ২০১২ সালে জমিটি পিডিবির অধীনে চলে গেছে । তবে ৩৮ একর জমি কর্ণফুলি টানেলের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। মাটিকাটা বিষয়ে তিনি কর্ণফুলি টানেলের উপ প্রকল্প পরিচালক ডঃ অনুপম সাহাকে অবগত করে ব্যবস্থা নিতে জানিয়েছে বলেও জানান।

এ বিষয়ে পিডিবির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকল্প পরিচালক মোঃ সামশুদ্দীন বলেন, আনোয়ার হোসেন ও কামাল নামে কোন ঠিকাদার তাদের তালিকাভুক্ত নন। অভিযোগ করেন, সম্পুর্ন জোরপুর্বক প্রভাব বিস্তার করে সরকারি জমির মাটি কেটে দিন দুপুরে বিক্রি করছে একটি মহল। তবে কর্ণফুলী আনোয়ারার নানা শ্রেণীর মানুষ মন্তব্য করতে শোনা যায়, ভূমি প্রতিমন্ত্রীর এলাকায়ও সরকারি ভূমির একি হাল।

(জেজে/এসপি/মার্চ ১২, ২০১৮)