মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : সারা শরীর, কপাল ও মাথায় অসংখ্য ক্ষত চিহ্ন। ছোট্র ঘরের খুঁটির সাথে পায়ে শিকল বাঁধা সুমনের চৌকিতে শুয়ে বসেই কেটে যাচ্ছে দিনরাত্রি। ছেলের করুণ আর্তনাদ ও চিৎকার শুনে বাবা-মা দূরে বসে গুমরে কাঁদলেও ছেলের কাছে যেতে পারছে না। আদর করতে পারছে না অসুস্থ্য সন্তানকে। আর্থিক সংকটে চিকিৎসাও বন্ধ রয়েছে।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌর শহরের উপজেলা পরিষদের পূর্বদিকে একটি জরাজীর্ণ টিনসেড ঘরে এখন শিকল বন্ধী এই সুমন হাসানাত শাওন।

দিনমজুর প্রতিবন্ধী পিতা শহীদ হোসেনের তিন সন্তানের মধ্যে বড় সুমন। পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারণে মাধ্যমিকের গন্ডি না পেরোতেই তাকে লেখাপড়া ছেড়ে নামতে হয় শ্রমবিক্রির পেশায়। এক মাস আগেও ছিল কর্মঠ যুবক। সংসার ও বাবা-মায়ের প্রতি ভালবাসা ছিলো। সন্তানের সুখের জণ্য আড়াই বছর আগে সুমনকে বিয়ে করাণো হয়। কিন্তু হঠাৎ ঝড়ে সুমনের দিন কাটছে একটি ঘরে শিকলবন্দী অবস্থায়। তার স্ত্রী হামিদা বেগম এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী। কিন্তু স্বামীর এই দশায় সেও এখন বাবার বাড়ি চলে গেছে।

কয়েক মাস আগের কথা। ওয়ার্কসপ শ্রমিক সুমন হঠাৎ করে অপ্রকৃতিস্থ্য হয়ে পড়ে। প্রতিবেশী থেকে তার বন্ধুবান্ধবদের সাথে খারাপ আচরণ ও অশ্লীল গালাগালি করায় বিরক্ত হয়ে পড়ে তার কাছের মানুষগুলো। সবার অলক্ষ্যে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ায় তার এই হঠাৎ পরিবর্তণে একপর্যায়ে বিরক্ত মানুষ সুমনকে বিভিন্নভাবে মারধর করে। অতিষ্ট হয়ে পড়ে পরিবারের সদস্যরা। প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকদের সরণাপন্ন হলেও সুমনের আচরণের পরিবর্তণ হয়নি। উল্টো সে মানুষের সাথে খারাপ আচরণ আরও বাড়তে থাকে। কিন্তু পারিবারিক অস্বচ্ছলতায় সুমনকে
নিরাময় কেন্দ্রে পাঠানো কিংবা উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে না পেরে ঘরে মধ্যে খুঁটির সাথে এক পায়ে শিকলে বেঁধে রাখে অসহায় বাবা-মা।

সুমনের পিতা শহীদ হোসেন জানান, সংসারের মাঝি এখন নিজ ঘরে শিকলবন্দী। নেশা ছেলেডারে শ্যাষ কইর‌্যা দেছে। যে পোলায় সংসার চালাইতো হেই পোলায় এ্যাহন ধুইক্কা ধুইক্কা মরতাছে। ৪০-৫০ হাজার টাহা লাগবে অরে চিকিৎসা করাইতে। আমি মাছ বেইচ্চা যে কয়টাহা পাই হেইয়া দিয়া এতগুলার মুহে খাওন দিমু না অরে ডাক্তার দেহামু।

তিনি বলেন,পোলাডারে এ্যাতোদিনতো ছাড়াই রাখছিলাম। কিন্তু মাইনষের লগে খারাপ আচরণ করায় অরে ধইর‌্যা মারতো। হারা শরীরে দ্যাহেন না আঘাতে দাগ। পাগল হইলেও পোলাতো। মাইনষে মারলে কি সহ্য হয়। তাই ঘরে বাইন্দা রাখছি শিকল দিয়া। বন্ধু-বান্ধবের পাল্লায় পইর‌্যা অর এই অবস্থা হইছে বলে অভিযোগ করেণ।

স্থানীয়রা জানান, সুমনের প্রয়োজন এই মুহুর্তে উন্নত চিকিৎসা। কিন্তু দরিদ্র বাবা-মায়ের পক্ষে তার চিকিৎসা চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। কিন্তু বর্তমানে সুনের যেভাবে দিন কাটছে এভাবে চলতে থাকলে সে মানসিকভাবে আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। এজণ্য প্রশাসনসহ সচেতন মহলের সহযোগীতা কামনা করছেন সুমনের প্রতিবেশীসহ তার অভিভাবকরা।

(এমকেআর/এসপি/মার্চ ১২, ২০১৮)