মঈন উদ্দিন আহমেদ, হবিগঞ্জ : অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে হবিগঞ্জের খোয়াই নদীর বাঁধ মেরামত। এবারও নদীর বাঁধ ভাঙ্গার আশঙ্কায় শহরবাসীকে নির্ঘুম রাত কাটাতে হতে পারে। গত বর্ষা মৌসুমে খোয়াই নদীতে একাধিকবার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। তখন হুমকিতে ছিল হবিগঞ্জ শহর। 

শহরের লোকজন রাত জেগে পাহারা দিয়েছিলেন নদীর বাঁধ। অনেকেই খুঁজে নিয়েছিলেন বিকল্প আশ্রয়। পরে কোন ধরনের বিপর্যয় ছাড়াই নেমে যায় সেই পানি। সেই সময়ে খোয়াই নদীর বাঁধের বিভিন্ন স্থান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই বাঁধ মেরামত করা হয়নি। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে বারবার টেন্ডার আহবান করলেও কোন ঠিকাদার সেই কাজ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। ফলে নির্ধারিত সময়ে বাঁধ মেরামত কাজ শেষ হওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ফলে আগামী মৌসুমেও বন্যার আতংকে থাকতে হবে হবিগঞ্জবাসীকে।

হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত বছরের জুন মাসে হঠাৎ করেই ভয়ঙ্কর রূপ নেয় খোয়াই নদীর পানি। বাধের ৩০ থেকে ৪০টি পয়েন্টে লিকেজ দেখা দেয়। বাঁধ ভাঙ্গার আশঙ্কায় নির্ঘুম রাত কাটান হবিগঞ্জ শহরবাসী।

এ অবস্থায় নদীর বাধের ৪টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানের ৬২০ মিটার জায়গা চিহ্নিত করে ৪ কোটি ৯ লাখ টাকার দরপত্র আহবান করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। স্থানগুলো হল চুনারুঘাট উপজেলার ঘরগাঁও, হবিগঞ্জ সদর উপজেলার তেতৈয়া ও রামপুর এবং শতমুখা। মার্চ এপ্রিল মাসের মাঝে কাজটি সম্পন্ন করতে এই টেন্ডার আহবান করা হলেও কোন ঠিকাদার সেখানে অংশ গ্রহণ করেননি। ফলে পরে আরও দুই বার আহবান করা হয় টেন্ডার। সেখানেও কোন সাড়া না পেয়ে এখন চতুর্থ বারের ন্যায় টেন্ডার আহবান করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত সেখানেও কোন ঠিকাদার টেন্ডার দাখিল করেননি। ফলে আগাম বন্যার হুমকিতে থাকবে শহর রক্ষা বাঁধ। আর যদি এবারও কোন ঠিকাদার আগ্রহ না দেখান তাহলে এই প্রকল্প হয়ে পড়বে অনিশ্চিত। এখনও কাজ শুরু না হওয়ায় উদ্বিগ্ন নদীর পাড়ের মানুষ।

হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ তাওহীদুল ইসলাম বলেন, কেন ঠিকাদাররা কাজটি নিতে চাচ্ছেন না তা বোধগম্য হচ্ছে না। কারণ এখন অনলাইনে যে কোন ঠিকাদার টেন্ডারে অংশ নিতে পারে। কোন ধরনের চাপ নেই। গত বছর খোয়াই নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে শহর রক্ষা বাঁধ হুমকির সম্মুখিন হয়ে পড়েছিল। শহরবাসী নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। তাই গত সমন্বয় সভায় বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু আজও রাজস্ব খাতে এ ব্যাপারে কোন বরাদ্দ পাইনি। যেখানে এক একটি পয়েন্টে মেরামত কাজে প্রয়োজন ১ থেকে দেড় কোটি টাকা সেখানে পুরো জেলায় বরাদ্দ আছে মাত্র ৪২ লাখ টাকা। তিনি আরো বলেন, আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একটি উন্নয়ন প্রকল্প দাখিল করেছিলাম। কিন্তু এখনো তা অনুমোদন করা হয়নি। সেটি প্রক্রিয়াধিন রয়েছে। সেটি অনুমোদন হলে কোন সমস্যা থাকবে না।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোহন লাল সৈকত জানান, খোয়াই নদীর ৪টি স্থানের জন্য আমরা অনুমোদন পাওয়া সাপেক্ষে ডিসেম্বরের ১ম সপ্তাহে টেন্ডার আহবান করেছিলাম। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল আমরা জানুয়ারির মাঝামাঝি কাজ শুরু করতে পারব ঠিকাদার নিয়োগের মাধ্যমে। কিন্তু একেকটা টেন্ডার ৩-৪ বার রিকল করতে হচ্ছে। আমরা ঠিকাদার পাচ্ছিলাম না। তাদের দরপত্র এখানে ড্রপ করছিল না। এ মাসের প্রথম দিকে তেতৈয়াতে একজন ঠিকাদার পেয়েছি। ইতোমধ্যে ওনাকে নোয়া প্রদান করেছি। ওনি যদি নোয়া গ্রহণ করেন আশাকরি খুব শ্রীঘ্র্র কাজ শুরু হবে এবং আমাদের টার্গেট ঠিকাদার নিয়োগের মাধ্যমে আগাম বন্যা আসার আগে আগে অর্থাৎ মে মাসের আগে আমরা যেন কাজটি শেষ করতে পারি।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপার জেলা সাধারণ সম্পাদক খোয়াই রিভার ওয়াটার কিপার তোফাজ্জল সোহেল জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড যে সব কথা বলেছে সেটি আসলে বিশাল চক্রান্তের ব্যাপার। পানি উন্নয়ন বোর্ড যুগের পর যুগ এতদিন কিভাবে ঠিকাদার পেলো? তারা আসলে নিজেরা সুবিধা ভোগ করার জন্য এবং বিশেষ কিছু মানুষকে সুবিধা দেয়ার জন্য এসব কথা বলছে।

ঠিকাদার আব্দুর রহমান জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে পানি উন্নয়ন বোর্ডে ঠিকাদারী করে আসছেন। ঠিকাদাররা দরপত্রে অংশগ্রহণ না করার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বর্তমানে লেবার খরচ অনেক বেশি। এছাড়া রয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এ মৌসুমে ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়। আশঙ্কা করা হচ্ছে এ বছর বৃষ্টিপাত হবে বেশি। আর বৃষ্টি হলে নদীতে জোয়ার আসবে। ফলে চলমান মেরামত কাজ অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কাজ করতে গিয়ে আগাম বন্যায় অনেক সময় কাজে বিঘ্ন ঘটে। পরে এ নিয়ে দুদকে মামলাও হয়। প্রাক্কলন মূল্য কম এবং টেন্ডারে অংশ নেয়ার কঠিন শর্ত থাকায় ঠিকাদাররা সেখানে কাজ করতে আগ্রহী হন না। ঠিকাদাররা ঝুঁকি নিতে চান না। এজন্যই হবিগঞ্জের দরপত্রে ঠিকাদাররা অংশ নিতে চান না।

(এমইউএ/এসপি/মার্চ ১৩, ২০১৮)