স্টাফ রিপোর্টার : রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারের মনোভাব খুব একটা পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে করে না জাতিসংঘ। জাতিসংঘের মহাসচিবের গণহত্যা প্রতিরোধবিষয়ক উপদেষ্টা আদামা ডিং এই মনোভাবের কথা জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার ঢাকায় সচিবালয়ে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে বৈঠকের সময় তিনি এ কথা জানান।

জাতিগত নিপীড়নে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের লাখ লাখ রোহিঙ্গা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে বসবাস করছেন। মিয়ানমারের সীমান্তে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর চেকপোস্টে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে নতুন করে রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর অভিযান চালায় দেশটির সেনাবাহিনী। তখন থেকে রোহিঙ্গারা জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে।

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ১২টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই হয়েছে রোহিঙ্গাদের। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে সমঝোতাস্মারক স্বাক্ষর, এরপর জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ করা হয়। সর্বশেষ গত ১৬ ফেব্রুয়ারি দুই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে পালিয়ে আসা এক হাজার ৬৭৩টি পরিবারের ৮ হাজার ৩২ জন রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারকে দিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হয়নি এখনও।

মিয়ানমারের মনোভাবের বিষয়ে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষণ কী- জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমারের অ্যাটিচিউডের (মনোভাব) বিষয়ে তিনি (উপদেষ্টা) যেটা বলেছেন সেটা হচ্ছে মিয়ানমারের আজকের যে অ্যাটিচিউড...আমরা দুইজনই সে ব্যাপারে এগ্রি করেছি (একমত), মিয়ানমারের আজকের যে অ্যাটিচিউড সেটা মিয়ানমারের আগের অবস্থান থেকে খুব একটা পরিবর্তন হয়েছে বলে তিনি (উপদেষ্টা) মনে করেন না।’

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের এক ঘণ্টার আলাপ-আলোচনা মূলত রোহিঙ্গা ইস্যুর ওপরই হয়েছে। তিনি আমাকে পরিষ্কার বলেছেন, বাংলাদেশ সরকার বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে শেল্টার দিয়ে যে নিদর্শন দেখিয়েছেন, যে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন, তা অনুকরণীয় ও প্রশংসনীয়।’

‘তিনি (উপদেষ্টা) আরও বলেন, পৃথিবী আর এই সমস্যার ব্যাপারে চোখ বন্ধ করে রাখতে পারবে না এবং জাতিসংঘ চেষ্টা করবে সবাই যেন রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। এই সমস্যার সমাধান করা যায় সেই চাপ সৃষ্টি করবে। সেই চাপ সৃষ্টি করার জন্য যা কিছু করার দরকার জাতিসংঘ তা করবে। এই কথা তিনি আমাকে বলেছেন’-বলেন আনিসুল হক।

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমি রোহিঙ্গা বিষয়ে সরকারের অবস্থান এবং আমরা যে এর সমাধান চাই, শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই, সেই ব্যাপারটা তার কাছে তুলে ধরেছি। মানবতার বিরুদ্ধে যারা অন্যায় করে তাদের ব্যাপারে আমাদের অবস্থান আমি অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে বলেছি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম সম্পর্কে আমি তাকে অবহিত করেছি।’

২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের বিষয়ে কোন প্রস্তাব দেয়া হয়েছে কি না- জানতে চাইলে আনিসুল হক বলেন, ‘প্রকারান্তরে আমি এই দাবি জানিয়েছি। উনি বলেছেন সেটা সম্পর্কে তিনি জাতিসংঘে এই ম্যাসেজ নিয়ে যাবেন কিন্তু এখন কোনো কমিটমেন্ট করতে পারছেন না।’

জাতিসংঘ যতটা বলছে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে মিয়ানমারের ওপর সেভাবে চাপ নেই। এ বিষয়ে উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা হয়েছি কি না- জানতে চাইলে আনিসুল হক বলেন, ‘ওনার সঙ্গে আলাপে আমি যেটা পেয়েছি সেটা হচ্ছে তারা অত্যন্ত সিরিয়াস এই চাপ দেয়ার ব্যাপারে। তিনি যখন ফিরে যাবেন, এরপর জাতিসংঘের কাজকর্মের ওপর দেখব জাতিসংঘ কতটা সিরিয়াস।’

সাংবাদিকরা রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে প্রশ্ন করলে জাতিসংঘের মহাসচিবের গণহত্যা প্রতিরোধবিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, আমরা এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করব। সেখানে এসব প্রশ্নের জবাব দেব।

(ওএস/এসপি/মার্চ ১৩, ২০১৮)