কুমিল্লা প্রতিনিধি : কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের জগমোহনপুর এলাকায় যাত্রীবাহী নৈশকোচে পেট্রলবোমা হামলায় ৮ যাত্রী হত্যা মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। আগামী ২৮ মার্চ হাজিরার দিনে শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।

খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে কুমিল্লার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ৫নং আমলি আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারক মুস্তাইন বিল্লাহ বুধবার বিকেলে এ আদেশ দেন।

এর আগে গত সোমবার (১২ মার্চ) বিকেলে এক আদেশে খালেদা জিয়াকে আগামী ২৮ মার্চ কুমিল্লার আদালতে হাজির করার জন্য প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট অর্থাৎ হাজিরা পরোয়ানা ইস্যু করেছিল একই আদালত। আদালতের এ আদেশের বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন কুমিল্লা আদালতের পরিদর্শক (কোর্ট ইন্সপেক্টর) সুব্রত ব্যানার্জি।

খালেদা জিয়ার পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নাজমুস সা’দাত ও অ্যাডভোকেট কাইমুল হক রিংকু জানান, গত ১২ মার্চ কুমিল্লার সংশ্লিষ্ট আদালত আগামী ২৮ মার্চ খালেদা জিয়াকে হাজির করার নির্দেশ দেয় এবং প্রডাকশন ওয়ারেন্ট ইস্যু করে। এর প্রেক্ষিতে আমরা খালেদা জিয়ার জামিনের জন্য আদালতে আবেদন দাখিল করার পর বুধবার বিকেলে ওই আবেদনের শুনানি শেষে আদালতের বিচারক খালেদা জিয়ার জামিন নামঞ্জুর করে আগামী ২৮ মার্চ হাজিরার দিনে শুনানির দিন ধার্য করে আদেশ দেন।

এর আগে কুমিল্লার ৫নং আমলি আদালত চলমান জি আর ৫১/১৫ মামলায় গত ২ জানুয়ারি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যু করেছিল এবং ওই গ্রেফতারি পরোয়ানাটি ইতিপূর্বে ঢাকার গুলশান থানায় প্রেরণ করা হয়। এ মামলায় খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার দেখানোর জন্য গত সোমবার (১২ মার্চ) গুলশান থানার ওসি এ বি সিদ্দিক স্বাক্ষরিত একটি আবেদন করা হয়। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে কুমিল্লার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ৫নং আমলি আদালতের বিচারক মুস্তাইন বিল্লাহ আগামী ২৮ মার্চ কুমিল্লার আদালতে খালেদা জিয়াকে হাজির করার জন্য প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট ইস্যুর আদেশ দেন। ওইদিন বিকেলে আদালতের আদেশটি কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার এবং ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণ করা হয়।

উল্লেখ্য, বিএনপি-জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোটের ডাকা হরতাল-অবরোধ চলাকালে ২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ভোর রাতে কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী আইকন পরিবহনের একটি নৈশ কোচ চৌদ্দগ্রামের জগমোহনপুর নামক স্থানে পৌঁছালে দুর্বৃত্তরা বাসটি লক্ষ্য করে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে। এতে বাসের যাত্রীরা কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই আগুনে পুড়ে ঘটনাস্থলে সাতজন ও হাসপাতালে নেয়ার পর একজনসহ মোট ৮ ঘুমন্ত যাত্রী মারা যান।

এ ঘটনায় চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই নুরুজ্জামান হাওলাদার বাদী হয়ে পরদিন হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে থানায় পৃথক ২টি মামলা দায়ের করেন। পরে আদালতের নির্দেশে ৮ যাত্রী হত্যা মামলাটি কুমিল্লা ডিবিতে স্থানান্তর করা হয়। তদন্ত শেষে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী, মনিরুল হক চৌধুরী, জামায়াত নেতা ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহেরসহ ৭৭ জনের বিরুদ্ধে গত বছরের ১৬ নভেম্বর আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়।

এ দুটি মামলার চার্জশিটে এজাহার বহির্ভূত বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক এমপি মনিরুল হক চৌধুরীসহ স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াতের আরও ৩০ জন নেতাকর্মীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। গত ২ জানুয়ারি আদালত চার্জশিট গ্রহণ করে মামলার পলাতক আসামি ৫৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।

(ওএস/এসপি/মার্চ ১৪, ২০১৮)