মালিপাখির একগুচ্ছ ছড়া-কবিতা
আমি
আমি চিলেকোঠা ঘরে থাকি ।
আমি রূপকথা পাড়া আঁকি ।
আমি ঘাসফুল, আমি তারা ।
আমি চারাগাছ, আপনারা --
আমি একরাশ ভালোবাসা ।
আমি কাছে এসো প্রিয় ভাষা ।
আমি ভাষাপথ বুকে জুড়ি ।
আমি রাঙামাসি, আমি ঘুড়ি ।
আমি একরোখা জেদি ঘোড়া ।
আমি আলো-আঁধারিতে মোড়া ।
আমি কাঁচপোকা জুঁই নদী
আমি মাছরাঙা, কেউ যদি --
আমি জলপরী, নাচ শেখো ।
আমি ভাঙাতরী,ভালো থেকো ।
আমি চিঠি ঘর, চিঠি, চিঠি --
আমি প্রজাপতি, গিরগিটি ।
আমি হই হই ছেলে বেলা ।
আমি লুকোচুরি,লুডো খেলা ।
আমি আয় আয় হাঁসবাড়ী ।
আমি এই ভাব,এই আড়ি ।
আমি ঘাসফুল, আমি তারা ।
আমি চারাগাছ, আপনারা ---।
উপহার
ভাষা বুক থেকে বুকে ওড়ে ---
ভাষা জেগে ওঠে ধান ভোরে ।
ভোরে আঁকা বাঁকা পথ ছোটে --
ভোরে পাখিদের গান ফোটে ।
ফোটে নদী নদী ঢেউ গুলো --
ফোটে আকাশের নীল ধুলো ।
ধুলো সারি সারি গাছ আঁকে --
ধুলো রাজা বলে কাছে ডাকে ।
ডাকে পারিজাত মন, পারি --
ডাকে মাছরাঙা আঁকা বাড়ি ।
বাড়ি সারাদিন মাতে কাজে --
বাড়ি আলপনা দিয়ে নাচে ।
নাচে হুসপাখি, নাচে রবি ।
নাচে গানপরী, নাচে কবি ।
কবি ঘেমে ওঠে তবু চলে --
কবি ঢেউ ছুঁয়ে ছুঁয়ে বলে -- !
বলে আহা আজ আমি কেযে ---
বলে ভাষাটাকে ঘষে মেজে ।
দেবো উপহার কাকে ? এসো।
দেবো তোমাকেই। ভালো বেসো ।
কবে ?
বাবাতো নেই মা কাজ করে লোকের বাড়ি বাড়ি ।
দাওনা তো কেউ আমায় সোহাগ, দাওযে শুধু আড়ি ।
তোমরা ওড়াও খুশির ফানুস, তোমরা মানুষ বড়ো ।
তাইতো রঙীন মারুতি আর এয়ার বাসে চড়ো ।
মানালি বা কুলুতে যাও, নয়তো আবার উটি ।
মনের পাখি খুন হয়ে যায়, আমার তো নেই ছুটি।
সকাল থেকে একলা আমি কাগজ কুড়োই পথে ।
দীপ জ্বলেনা কোনো সময় আমার মনের মঠে ।
তোমরা লাগাও কত কি ফুল বাড়ির ছাদের টবে ।
আর আমি ফুল কাঁদি, আমায় করবে আপন কবে ?
জীবনকুচি
তুই শিলালিপি । দোপাটির চারা ।
তাই বুঝি পথে বাজে বাঁশিতারা ।
ফোটে গান,ছোটে, ঘামে ভেজা মোহ ।
তোকে খুঁজি কেন ? ভুলে গেছি ওহো ।
তোকে পেলে আমি, জানি সব পারি ।
তোর সাথে ভাব । তোর সাথে আড়ি ।
তুই শিলালিপি । মরীচিকা মাসি ।
তোর কথা ভেবে কাঁদি আর হাসি ।
পথ ভেঙে গেলে, ভাঙা পথ গড়ি ।
যত বাধা আসে ততো তোকে ধরি ।
আমি ডিঙি, তুই প্রজাপতি বাড়ি ।
তোর সাথে ভাব । তোর সাথে আড়ি ।
তুই শিলালিপি । চোখ ধরা পাখি ।
তোর দুটি চোখে - মায়াদ্বীপ রাখি ।
যত উড়ে যাস ততো আমি উড়ি ।
দিবানিশি তোকে নানা রঙে জুড়ি।
নাচে বাঁশিতারা, আলাদীন গাড়ি ।
তোর সাথে ভাব । তোর সাথে আড়ি ।
তুই শিলালিপি । মোনালিসা নদী ।
বলে দেনা এসে কিসে মেলে বোধি ।
পাতাঝরা বেলা, খরা, চোরাবালি ।
তোকে ভেবে ভেবে যাই পুড়ে খালি ।
তবু ডানা মেলি, তবু হাত নাড়ি ।
তোর সাথে ভাব । তোর সাথে আড়ি ।
তিন জোড়া বক
শুধু করে খাই খাই
এটা চাই সেটা চাই
নাম তার যেনো ভাই
সিরাজুল হক !
গান গায় রাতদিন
কাঠে মারে আলপিন
খায় নেচে ধিন ধিন
তেতুলের টক !!
গোফ জোড়া খুলে রাখে
সারা দেহে কাদা মাখে
যদি নাকি হাতে থাকে
এক জোড়া চক !
চক দুটি হাতে ধরে
একে ফেলে হুশ করে
নিল আকাশেতে ওড়ে
তিন জোড়া বক !
খুশির ছবি
চাঁদে হাটি মাটি ছুঁয়ে
মোনালিসা ছুঁয়ে ছুঁয়ে
ছাপানো রঙীন শাড়ি
দুলছে !
কাকে ডাকি,কাকে ডাকি ?
উড়ে উড়ে কত পাখি
আকাশে মেঘর বাড়ি
খুলছে !
ছোট ছোট বাড়ি গুলো
আহা যেন প্যাঁজা তুলো
বাতাসে রোদের গুঁড়ো
ভাসছে !
আলো, আলো, আলো মেখে
পটে যেন ছবি এঁকে
খুশিতে বরফ বুড়ো
হাসছে !
বাউরী বাতাস
এইখানে এক ভোর এঁকেছি, সেইখানে এক সাঁকো ।
বললে আকাশ,ভুলেই গেছি, কোথায় যেন থাকো ?
আমি বললুম, তাও জানোনা, শুনবে আমার বাঁশি ?
ঢেউ ছড়িয়ে -- সে বলবো না । ছুটতে ভালোবাসি -- !
ছুটতে, ছুটতে, হারালে দিন, ছুটতে, ছুটতে নদী !
থমকে দাঁড়ায় । তিনটি হরিণ হাততালি দেয় যদি -- !
হরিণ কোথায় ? হরিণ তো নয় ! হরিণডাঙার মাঠে !
বাউরী বাতাস বাজিয়ে সময়, একমনে ধান কাটে -- !
শ্রীমান টেঁপু
দোয়েল,ফিঙে
সবাই ভালো !
গরুর শিঙে
চাঁদের আলো !!
মাটির বাড়ি,
কাঠের ঘোড়া !
টিনের গাড়ি,
বেতের মোড়া !!
পোলাও, পুরি
পায়েস, রুটি !
বাদাম, মুড়ি,
গাজর, ফুটি !!
ডাকাত রে রে --
পাতার ভেঁপু !
বাজায় কেরে ?
শ্রীমান টেঁপু !!
ইচ্ছে
পাখি কারা যেন বলে গেছে ---
পাখি তারাপথ নেচে নেচে -- ।
পাখি জল পড়ে, পাতা নড়ে --
পাখি অবিরত ছবি ঘরে -- !
পাখি জলছবি আঁকা বাড়ি ।
পাখি ওড়ে চাঁদ,ধুয়ো, জারি ।
পাখি ঘুম ডুবে সারা পাড়া --
পাখি আমি আজ দিশে হারা !
পাখি দিশাহীন থাকি চেয়ে !
পাখি নাচে এক গান মেয়ে --- ।
পাখি কত ঋন থাকে বাকি --
পাখি এক মনে ভাষা আঁকি --- ।
পাখি জল পড়ে, পাতা নড়ে --
পাখি অবিরত ছবি ঘরে -- ।
পাখি ছবি গুলো ধরে রাখি ।
পাখি আমি নাকি, আমি নাকি ,--
পাখি বলে দেনা কিযে আমি ।
পাখি মেঘ হলে ফুলে নামি --- ।
মনের ভুল
ঘাগট, কঁসাই, কুলিক, খোড় !
কোথায় থাকিস,কি নাম তোর ??
দোয়েল, তিতির,শালিক, বক !
আলাপ করাই আমার শখ !!
টেবিল, পিঁড়িম, চেয়ার খাট !
আমার পকেট গড়ের মাঠ !!
শিমুল, পলাশ, টগর, জুঁই !
হাজার ভুতের চরণ ছুঁই !!
নোলক, নুপুর, কাঁকন, দুল !
কোথায় শ্রীভুত ? মনের ভুল !!
বন্ধু মেঘের দেশ
চুমকি পাতায় নাম লিখেছে বর্ণমালা ভোর !
বুকের ভিতর ছবির জগৎ, ঝর্ণা ফুলের ঘোর !!
পাঁপড়ি থেকে ঝরলো আলো, পুচ্ছ নেড়ে তাই !
বললে পাগল চরকি বাতাস, ইচ্ছে উড়ে যাই !!
এক তারাটির সুর মেখেছে স্বপ্ন তুলির চর!
ঢেউ সাগরে ভাসছে এখন শঙ্খ দ্বীপের ঘর !!
মোহর নিয়ে আসবো ফিরে, গল্প হবে বেশ !
এইতো কাছেই ওড়না পাহাড়, বন্ধু মেঘের দেশ !!