স্টাফ রিপোর্টার : ক্ষমতায় ফিরতে নির্বাচন কেবলই আনুষ্ঠানিকতা বলে ওবায়দুল কাদের যে বক্তব্য দিয়েছেন, তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, বিএনপি এই বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করে অকারণে সমালোচনা করছে।

সোমবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন ক্ষমতাসীন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক।

হাছান মাহমুদ বলেন, ওবায়দুল কাদের সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরে আগামী নির্বাচনে বিজয়ের আশাবাদের কথা বলেছেন। এটাকে অন্য দৃষ্টিতে দেখার সুযোগ নেই।

গত ১৬ মার্চ রাজধানীতে আওয়ামী লীগের এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘উন্নয়ন-অর্জন করে আমাদের কর্ম দিয়ে আমরা ভয়কে জয় করে ফেলেছি। নির্বাচনে বিজয় একটা আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।’

ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্যের পর থেকে বিএনপি নেতারা তাকে আক্রমণ করে বক্তব্য রাখছেন। মওদুদ আহমদ, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, রুহুল কবির রিজভী প্রমুখ বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে সরকার যে ষড়যন্ত্র করছে, সেটাই কাদের বলে দিয়েছেন।

১৭ মার্চ রাজধানীতে এক আলোচনায় মওদুদ বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে সরকারের যে নীল নকশা, এটা আমরা এতদিন সন্দেহ করে আসছিলাম। কিন্তু তাদের একজন নেতা সেটা বলেই দিয়েছেন। সরকার বলেছে তাদের বিজয়, আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।’

পরদিন দলীয় কার্যালয়ে করা সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের আসন ভাগাভাগির বিষয়টি অনেকটা পরিষ্কার হয়ে গেছে।...পিঠা ভাগের মতো সংসদীয় আসনের সিংহভাগ আওয়ামী লীগ নিজেদের কব্জায় রেখে বাকি স্বল্পসংখ্যক আসন অন্যদলকে ভাগ দেয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। এটাই নির্বাচনহীন একদলীয় শাসনের নমুনা।’

বিএনপি নেতাদের এসব বক্তব্যকে অশোভন দাবি করে রাজনৈতিক ভাষায় কথা বলার আহ্বান জানিয়েছেন হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘অশোভন বক্তব্য না রেখে অবশ্যই শোভনভাবে সমালোচনা করবেন। দয়া করে আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে অশোভন সমালোচনা করবেন না।’

ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের দলীয় সাধারণ সম্পাদক দলের মুখপাত্র হিসাবেই দলীয় বক্তব্য উপস্থাপন করেন। সম্প্রতি তিনি (ওবায়দুল কাদের) দেশের বিগত নয় বছরের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন, এটাই স্বাভাবিক।’

‘কিন্তু বিএনপি নেতা মওদুদ আহমেদ ও খন্দকার মোশাররফ হোসেন বক্তব্যকে বিকৃত করে নানা ধরণের কথা বলছেন।’

সরকারের সমালোচনা করে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যকে ঢালাও বলেও মন্তব্য করেন হাছান। বলেন, ‘বিএনপি নেতারা বলেছেন বাংলাদেশ নাকি অন্ধকার টানেলের মধ্যে আছে। যদি তাই হতো তাহলে কীভাবে জাতিসংঘ বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার চিঠি হস্তান্তর করছে?

‘জাতি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ার পর তারা অভিনন্দন জানাতে ব্যর্থ হয়েছে। বিএনপি নেতাদের বক্তব্যে প্রমাণিত হয়, তারা বাস্তবতার নিরিখে বক্তব্য রাখেন না, রাজনৈতিক বিদ্বেষ প্রসূতভাবে বক্তব্য রাখেন যা বিএনপির জন্য ব্যর্থতা ও রাজনৈতিক হীনমন্যতা।’

বিএনপি নেতাদের হাছান বলেন, ‘আপনারা তো ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে বলেছিলেন আওয়ামী লীগ ৩০ সিটও পাবে না। আল্লাহর কি বিধান, নির্বাচনের পর বিএনপি পেয়েছিল ২৯ সিট। পরে উপ-নির্বাচনে আরও দুটি সিট বাড়ার পর তাঁরা ৩০ সিট পূর্ণ করতে পেরেছিল।’

‘আমরা চাই না, আগামী নির্বাচনে বিএনপির মুখে আওয়ামী লীগ সম্পর্কে যে বক্তব্য তা তাদের গলায় ফুটুক। তাই অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেন।’

রিজভীর মানসিক সুস্থতার পরীক্ষার পরামর্শ

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর মানসিক সুস্থতা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন হাছান। বলেন, ‘কয়েকদিন আগে সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখেছি লন্ডনে বিএনপির এক সমাবেশে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন রিজভী আহমেদ একজন মেরুদণ্ডহীন মানুষ।’

‘ওনার (রিজভী) মেরুদণ্ড আছে কি নাই, সেটা আমাদের বিবেচ্য বিষয় নয়। কিন্তু সাম্প্রতিককালে তাঁর বক্তব্যে মনে হচ্ছে দলীয় অফিসে দীর্ঘদিন পরিবার-পরিজনহীন থাকার কারণে তিনি কিছুটা মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়েছেন কি না, তা পরীক্ষা করার দরকার আছে।’

সমাবেশের অনুমতির বিষয়ে সরকারের হাত নেই

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে গত এক মাসে তিন বার প্রত্যাখ্যাত হয়েছে বিএনপি। দলের নেতাদের অভিযোগ, সরকারের ইচ্ছায়ে পুলিশ তাদেরকে এই অনুমতি দিচ্ছে না।

এই সমালোচনার জবাব দিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপি তো চট্টগ্রাম, খুলনাসহ বিভিন্ন জায়গায় সমাবেশ করেছে। এমনকি তাঁরা তাদের দলীয় কার্যালয়ের সামনেও সমাবেশ করেছে। সেখানে তাঁরা বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টাও করেছে।’

‘আর সমাবেশের অনুমতি দেয়া আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব। নিশ্চয় কোন সুনিদিষ্ট তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ সিদ্ধান্ত দিয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুননাহার চাঁপা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আব্দুস সবুর এবং কার্যনির্বাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।

(ওএস/এসপি/মার্চ ১৯, ২০১৮)