নিউইয়র্ক : এসডিজি’র পানি বিষয়ক নির্দেশনা বাস্তবায়ন, পানি দশককে সফল করা এবং সকলের জন্য পানি ও নিরাপদ বিশ্ব গড়ে তোলার জন্য আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে যৌথভাবে দায়-দায়িত্ব ভাগ করে নেয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। 

গতকাল ২২ মার্চ (নিউইয়র্ক সময়) জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ‘আন্তর্জাতিক পানি দশকের উদ্বোধন: টেকসই উন্নয়নের জন্য পানি (২০১৮-২০২৮)’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের সভায় বক্তৃতাকালে এ কথা বলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম এমপি।

বিশ্বব্যাপী ‘বিশ্ব পানি দিবস’ উদযাপন প্রাক্কালে এই আন্তর্জাতিক পানি দশকের উদ্বোধন করা হলো।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা দৃঢ়ভাবে আশাবাদী যে, আন্তর্জাতিক পানি দশক আমাদেরকে এর বর্তমান বৈশ্বিক অবস্থা পরিবর্তন করতে এক সাথে কাজ করার সুযোগ এনে দিবে।’

জাতিসংঘ মহাসচিবের পানি বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের প্যানেল সদস্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিনিধি হিসেবে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম আন্তর্জাতিক পানি দশক -এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দেন। পানি বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের প্যানেল সদস্য হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘আগামী প্রজন্মের সমৃদ্ধির কথা ভেবে পানির মূল্য বুঝে এর সঠিক ব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের জন্য আশু করণীয় নির্ধারণে বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে অবশ্যই আমাদের আহ্বানে সাড়া দিতে হবে’ মর্মে আহ্বান জানিয়েছেন।

পানি ও পরিবেশ সবসময়ই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন অগ্রাধিকারের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে মর্মে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বে বাংলাদেশ সকলের জন্য নিরাপদ খাবার পানি ও নিরাপদ পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে বৈশ্বিক স্বীকৃতি অর্জন করেছে। নদী ও পানির অন্যান্য উৎসসমূহের সঠিক ব্যবস্থাপনার বিষয়টিকে আমরা সর্বদাই গুরুত্ব দিয়েছি যা বাংলাদেশের সকল উন্নয়নের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। ১৬০ মিলিয়নেরও অধিক মানুষের এই বাংলাদেশে প্রায় প্রতিটি মানুষের জন্যই নিরাপদ খাবার পানির সংস্থান করা হয়েছে। এখন আমাদের লক্ষ্য ২০২০ সালের মধ্যে সকলের জন্য সরাসরি নিরাপদ খাবার পানির সংস্থান নিশ্চিত করা।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের ৯৯ ভাগ মানুষকে আমরা পয়:নিষ্কাশন সুবিধার আওতায় এনেছি। এর মধ্যে ৬১ ভাগ মানুষ শতভাগ নিরাপদ পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থার আওতায় রয়েছে। স্বাস্থ্যসম্মত পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থার সুবিধা নেই এমন জনসংখ্যা গত ৯ বছরে ১% এর নীচে নেমে এসেছে।’

প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশে এসডিজি-৬ এর বাস্তবায়নের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমাদের সরকার পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ গ্রহণ করেছে। এছাড়া সরকার লবণাক্ততা প্রতিরোধ, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, নদী খননসহ ব্যাপকভিত্তিক পানি সংক্রান্ত প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করেছে।’

উচ্চ পর্যায়ের এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আয়োজন করেন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভাপতি মরোস্লাভ লাইচ্যাক। তাজিকিস্তানের রাষ্ট্রপতি এবং অন্যান্য দেশের মন্ত্রীবর্গ উচ্চ পর্যায়ের এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

অন্যান্য বক্তার মাঝে ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশের পানি ও পয়:নিষ্কাশন কর্মসূচির সফলতার কথা উল্লেখ করেন। তিনি কক্সবাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের পানি ও পয়:নিষ্কাশন সেবা প্রদানে বাংলাদেশ সরকার ও ইউনিসেফের প্রচেষ্টার কথাও তুলে ধরেন।

প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম আন্তর্জাতিক পানি দশকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পাশাপাশি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি ও ইকোসকের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল এর যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত উচ্চ পর্যায়ের মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেন।

এদিকে সন্ধ্যায় জাতিসংঘের স্বীকৃতি ’উন্নয়নশীন দেশের পথে বাংলাদেশ’ অর্জনে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন এবং নিউইয়র্কস্থ কন্স্যুলেটের যৌথ আয়োজন অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা অনুষ্ঠানেও তিনি অংশগ্রহণ করেন।

(এ/এসপি/মার্চ ২৩, ২০১৮)