রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি : আগামীকাল ২৬ মার্চ সোমবার কুড়িগ্রামের রাজারহাট-লালমনিরহাট সীমান্তবর্তী সিন্দুরমতী দিঘীতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র স্নানোৎসব। 

রহস্যময় এ দিঘীর পাড়ে প্রতিবছর বাসন্তী পূজার নবমী তিথিতে সনাতন ধর্মাবলম্বী পূর্ণাথীরা পাপমোচন হওয়ার জন্য পূর্ব পুরুষদের পিন্ডদান করে স্নানাদি কার্যসম্পাদন করেন। ভোর থেকে শুরু করে দিনব্যাপী নবমী তিথিতে বাসন্তী দেবীর পূজার্চনা মধ্য দিয়ে এ জলাদি স্নান উৎসব হয়। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ও পাশ্ববর্তী চীন, ভারতসহ অন্যান্য দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বী পূর্ণার্থীগণের এ মেলায় আগমন ঘটে। তাই এবারে নিছিদ্র নিরাপত্তায় র‌্যাব-পুলিশ ও গোয়েন্দাবাহিনীর সহযোগীতায় বিরাট মেলা হতে যাচ্ছে বলে লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।

এজন্য প্রায় শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী কাজ করবে। স্নানোৎসবকে কেন্দ্র করে সিন্দুরমতী বৃহৎ দিঘীর পাড়ের চর্তুদিকে মেলা বসে। মেলাকে প্রাণচাঞ্চল করতে এবারে বিনোদনের জন্য ছোট-বড় সার্কাসের আয়োজন করেছে মেলা কমিটি। এগুলোর অনুমতি দিয়েছে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন।

এছাড়া মেলায় চিড়া-মুড়ি, দই, মিষ্টির ভান্ডার, খাবার হোটেল, পান-সুপারী,শাকসবজী, মাছ, মাটির তৈরি জিনিসপত্র, লোহার তৈরি জিনিসপত্র, হাড়ি-পাতিল, হিন্দুদের পূজার্চনার জিনিসপত্র, শিশুদের খেলনা সামগ্রীসহ নানা রং-বেরঙ্গের বাহারি জিনিসপত্রের দোকানে ভরপুর হয়ে উঠে। বেশ কয়েকজন ব্যক্তি কালিমূর্তির মুখোস পড়ে পূর্ণাথীদের কাছ থেকে দক্ষিনা (ভিক্ষা) আদায় করেন।

আশপাশের হিন্দু ও মুসলিম বাড়ীতে আত্মীয়দের পদচারনায় চর্তুদিকে মিলন মেলায় পরিনত হয়। এলাকাটি বেশ রমরমা হয়ে উঠে। সব মিলে ওই এলাকায় পুরো দিনটি চলে জাঁকজমকপূর্ণ। কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলা সদরের সীমান্তবর্তী এলাকায় উত্তরাঞ্চলের সুপরিচিত প্রাচীন তীর্থ এ সিন্দুরমতী দিঘী। কথিতে আছে, পৌরাণিক যুগে প্রজাদের জলকষ্ট দুর করার জন্য পুকুর খনন করেন রাজা রাজ নারায়ন। কিন্তু পুকুরে জল না পাওয়ায় দৈববাণীর আদলে রাজা তার ঘর আলো করা সিন্দুর আর মতী নামের দুই কন্যাকে দিয়ে ঐ দিঘীতে পূজা দেয়ার সময় প্রবল জল রাশিতে তাঁরা আত্মত্যাগ করেন।

মানব কল্যাণার্থে নিবেদিত এ কন্যাদ্বয়ের মহতী ত্যাগের মহিমায় প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েই দু’জনের নামানুসারেই পুকুরটি পরিচিতি লাভ করে। লাখ লাখ সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পাপ মোচন করে পূর্ণ সঞ্চয়ের আশায় প্রতিবছর এ দিনে সূর্যদ্বয়ের আগে স্নান করে।

এ উপলক্ষে বাসন্তী ও সিন্দুরমতী পূঁজা অনুষ্ঠিত হয়। কথিতে আরো আছে, চৈত্র মাসের অষ্টমী তিথিতে ব্রক্ষপুত্রের স্নান শেষে সিন্দুরমতী দিঘির পাড়ে রাত্রি যাপন করে নবমী তিথিতে স্নন করলে তবেই পাপমোচন হয়। কথিত নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যে পূর্ণ, নান্দনিককতায় স্নান, কিংবদন্তির কল্পলোকে ঘেরা, উল্লেখযোগ্য প্রাচীন তীর্থ এ দিঘী।

এ ব্যাপারে রাজারহাট থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মোখলেসুর রহমান জানান, মেলায় জুয়া খেলা বন্ধ থাকবে। এছাড়া কঠোর নিবাপত্তার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

(পিএমএস/এসপি/মার্চ ২৫, ২০১৮)