নওগাঁ প্রতিনিধি : জয় কৃষাণ-আলো রানী দম্পতি। পুরান ঢাকার বংশাল এলাকার বাসিন্দা। এ দম্পতির জমজ দুই পুত্র সন্তানের বয়স দুইবছর চার মাস। বয়স বাড়লেও তারা এখনও দাঁড়াতে পারে না। অনেক চিকিৎসা করিয়েছেন কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। অবশেষে ঠাকুরমান্দার রঘুনাথ মন্দিরে এসেছেন মানত করতে। প্রিয়াংকা দে ও নিত্যানন্দন দে দম্পতি এসেছেন ভারতের উত্তর চব্বিশ পরগনা থেকে। তাদের বিশ্বাস রঘুনাথ মন্দিরে মানত দিয়েই দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবে জন্মান্ধ একমাত্র সন্তান রঘুনাথ দে। 

সন্তান লাভের আশায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে এসেছেন টুম্পা রানী। বিয়ে হয়েছে প্রায় ৬ বছর। কিন্তু এখনও সন্তান লাভ করতে পারেন নি। এ রকম বুকভরা আশা নিয়ে নাটের থেকে দিপালী রানী কর্মকার, রাজশাহীর হেঁতেম খাঁ এলাকার স্বর্ণা রানী, যশোরের মুক্তি রানী ঘোষসহ আরও অনেকে এসেছেন নওগাঁর মান্দা উপজেলার ঠাকুরমান্দার রঘুনাথ মন্দিরে।

প্রতিবছরের ন্যায় এবারও চৈত্র মাসে রামের জন্ম তিথিতে ঠাকুরমান্দা জনপদে রঘুনাথ মন্দির প্রাঙ্গনে পূজার্চনার পাশাপাশি মেলার আয়োজন করা হয়েছে। রোববার ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে শুরু হয় এ পূজার্চনার কাজ। এরপর ভক্ত ও পূণ্যার্থীরদের জন্য মন্দিরের দ্বার উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। ভক্ত ও পূণ্যার্থীরা গঙ্গাস্নান শেষে মাথায় দুর্লভ পদ্মপাতা ও মাটির পাতিলে ভোগের মিষ্টান্ন নিয়ে দীর্ঘ লাইন ধরে রামচন্দ্রের বিগ্রহে নিবেদন করেন। এ সময় রামের জয়গান উচ্চারণ করে নিজেদের মনস্কামনা পূরণের জন্য মন্দিরের চারপাশে সাত পাক দিয়ে আরাধনা করেন পূণ্যার্থীরা।

সম্প্রদায়ের ধর্মীয় এ উৎসবকে ঘিরে বসা রামনবমীর মেলায় সকল ধর্ম-বর্ণের লাখো মানুষের ঢল নেমেছে। নারী-পুরুষ ভক্তের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে মন্দির চত্বরসহ আশপাশের এলাকা। ৯ দিন ব্যাপী এ মেলা চলবে আগামি সোমবার পর্যন্ত। শেষদিন লক্ষ্মণ ভোগের মধ্যদিয়ে এ উৎসবের সমাপ্তি ঘটবে।

মন্দির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি চন্দন কুমার মৈত্র বলেন, ‘দুই শতাধিক বছর আগে মন্দিরটি নাটোরের রাণী ভবানী প্রতিষ্ঠা করেন।’ সেই থেকে ভগবান শ্রী রামচন্দ্রের জন্ম তিথিতে এখানে পুজাঅর্চনা চলে আসছে। উৎসবকে ঘিরে মন্দির চত্বরের আশপাশের এলাকায় ৯ দিন ব্যাপি মেলার আয়োজন করা হয়। বর্তমানে এ উৎসবটি সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে।

(বিএম/এসপি/মার্চ ২৫, ২০১৮)