স্টাফ রিপোর্টার : ‘এসএসসি ও এইচএসসিসহ বোর্ড পরীক্ষার কেন্দ্রগুলো এখনও রাজনৈতিকভাবে নির্ধারিত হয়’ বলে মন্তব্য করেছেন পাবলিক পরীক্ষা সংক্রান্ত জাতীয় মনিটরিং কমিটির সদস্য এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার শেখ নাজমুল আলম।

বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে 'প্রশ্ন ফাঁস রোধে করণীয় ' শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এমন মন্তব্য করেন। বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) পক্ষে বৈঠকটির আয়োজন করা হয়।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অনেক জায়গায় এখনও রাজনৈতিক বিবেচনায় পরীক্ষার কেন্দ্র নির্ধারণ হয়। পরিচিত কেন্দ্রের শিক্ষকরা অর্থের বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করেন। সম্প্রতি এক বৈঠকে আমি শিক্ষামন্ত্রীকে এ প্র্যাকটিস বন্ধ করতে বলি। শিক্ষামন্ত্রী তখন আমাকে একজন মন্ত্রীর পাঠানো চিঠি দেখান। চিঠিতে ওই মন্ত্রী নির্দিষ্ট একটি কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য নির্দিষ্ট একটি কেন্দ্রের নাম উল্লেখ করেন। এসব করলে প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ হবে কীভাবে?’

তিনি আরও বলেন, ‘বিজি প্রেস সরেজমিন পরিদর্শন করে আমি দেখলাম, যে রুমে প্রশ্নপত্র ছাপা হয় সেই রুমের সিসিটিভি ক্যামেরা মুভ করে। ক্যামেরা পুরো রুম কাভার করে না। আমার প্রশ্ন, ওই রুমে কি আর কোনো ক্যামেরা লাগানো যায় না? প্রেসের অতিরিক্ত সচিব সমমর্যাদার এক কর্মকর্তাকে প্রশ্ন তৈরির পদ্ধতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলতে পারেননি। ঊর্ধ্বতন ৪-৫ কর্মকর্তা জানেন না কিছু। দেশ ডিজিটাল হলেও বিজি প্রেস এখনও ডিজিটাল হয়নি। আধুনিকায়নের আগে সেখানে কোনো প্রশ্ন ছাপানো উচিৎ নয়।’

‘প্রশ্ন ফাঁস রোধে এ বছরের প্রশ্নভর্তি প্যাকেটে বিশেষ সিকিউরিটি লক দেয়া হবে। এ লক একবার খুললে আর লাগানো যাবে না। ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র সংগ্রহের ক্ষেত্রে শতকরা ৯৫ ভাগ অভিভাবককে অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করতে দেখেছি। এ চর্চা বন্ধ করতে হবে’ বলেও জানান তিনি।

‘প্রশ্ন ফাঁসকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পরীক্ষার আইন পরিবর্তন ও সংশোধন করতে হবে। ১৯৮১ সালের পাবলিক এক্সামিনেশন অ্যাক্টে আসামিকে ২-১ দিনের বেশি রিমান্ডে নেয়া যায় না। অনেক সময় তদন্তের গভীরে যাওয়া যায় না। পাশাপাশি তারা দ্রুত জামিন পেয়ে যায়’- যোগ করেন পুলিশের এ যুগ্ম কমিশনার।

তিনি বলেন, ‘এবার যারা সাড়ে ৯টার মধ্যে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে পারবে না তাদের নাম, রোল নম্বর রেজিস্ট্রেশন খাতায় লিপিবন্ধ করে রাখা হবে। কী কারণে তাদের দেরি হলো- তার কারণ ব্যাখ্যাসহ কয়েক দিন তাদের মনিটরিং করা হবে। পরপর দু-তিনদিন দেরি করলে বুঝব যে, সে প্রশ্ন পাওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত দেরি করেছে। সে ক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

প্রশ্ন ফাঁস রোধে পাবলিক পরীক্ষার পাশাপাশি ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষায় সরকারি মনিটরিং কমিটি থাকা উচিত বলেও মনে করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা আগামী ২ এপ্রিল শুরু হবে। চলবে ১৩ মে পর্যন্ত। ১ এপ্রিল সরকারি ছুটি হওয়ায় একদিন পিছিয়ে পরীক্ষার রুটিন তৈরি করা হয়েছে।

(ওএস/এসপি/মার্চ ২৮, ২০১৮)