মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : রুদ্র সাগরের ক্রুদ্ধ ঢেউ ও রৌদ্দতপ্ত বালুকাবেলায় পর্যটকদের ছিলনা কোন কোলাহল। ছিলনা প্রকৃতির সেীন্দর্যের ছোয়া। বাতাসে বালুর খেলায় পর্যটকরাও এড়িয়ে চলতো এ সৈকতকে। ছিলনা সাগর পাড়ে ঘুরে বেড়ানোর সৈকত। মাত্র ৫/৬ বছরে পাল্টে গেছে কলাপাড়ার গঙ্গামতি সৈকতের চিত্র। একটি প্রাকৃতিক লতা পাল্টে দিয়েছে এ সৈকতের সৌন্দর্য। স্থানীয় মানুষের কাছে এ লতা বালু লতা কেউবা গঙ্গা লতা বলে পরিচিত। 

সরেজমিনে গঙ্গামতি সৈকত ঘুরে দেখাযায়, বিস্তীর্ণ সৈকতের বালুতট সবুজ গুল্ম লতায় ঢাকা। মাইলের পর মাইল সৈকতের বালুর ঢিবিতে যেন সবুজ কার্পেট বিছিয়ে রেখেছে। অথচ এক দশক আগেও এ সৈকতে পর্যটকরা আসতে ভয় পেতো। যারা এ সৈকতে আসতো তাদের জোয়ারের সময় রাস্তায় দাড়িয়ে সেীন্দর্য উপভোগ করতে হতো। এখন বর্ষা মেীসুমে জোয়ার এলেও সাগরের পারে বালুর ঢিবিতে বসে উপভোগ করা যায় সৈকতের সেীন্দর্য। সৈকতের বালুচরে লতা গাছ পাল্টে দিয়েছে গোটা সৈকতেকে।

গঙ্গামতি এলাকার বাসিন্দা ইউনুস মিয়া জানান, আগে সাগরের পাড়ে মানুষ আসতো না। দুপুরের রোদে বালু গরম থাকতো। সাগরের ঢেউ ও দমকা হাওয়ায় এ বালু বাতাসে উড়তো। সাগরে জোয়ারের সময় মানুষ সৈকতে যেতে পারতো না। রাস্তায় দাড়িয়ে তখন সাগর দেখতো। কিন্তু এখন আর জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায়না সাগর পার। পিকনিক পার্টির সদস্যদের ভীড় লেগেই থাকে।

স্থানীয় একাধিক প্রবীন ব্যক্তি জানায়, ২০০৭ সালের সিডরের পরই এ সৈকতের বালুচরে এ লতা গাছ জম্মাতে শুরু করে। সিডরের জলোচ্ছাসে গোটা গঙ্গামতি গ্রাম সাগর গিলে খায়। ভেসে যায় শতশত বসত ঘর। কিন্তু সিডরের পরই এ লতাগাছের কারনে প্রায় ১০/১৫ ফুট করে উঁচু বালুর ঢিবি তৈরি হয়েছে। গোটা ঢিবি আকড়ে ধরেছে এ লতা। এ লতা সৈকতে জম্মানোর পরই সাগরের সৈকতের হাঁটা পথ ক্রমশ বাড়ছে। এখন গঙ্গামতি সৈকত সাগরের জলোচ্ছাসে আর ভাঙ্গে না।

গঙ্গামতি সৈকতে ভ্রমনে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীব বিজ্ঞানের ছাত্র অরিত্র ভেীমিক এ লতার নাম না জানলেও তিনি জানান, এটা একধরনের গুল্ম লতা। বালুর ৫/১০ ফুট গভীরে এ লতার শিকর প্রবেশ করায় সাগরের জোয়ার কিংবা প্রবল বর্ষনেও এ লতার কারনে বালু ধ্বস হয়না। এছাড়া এ লতা ১০০/১৫০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হওয়ায় এগুলো এলোমেলো ভাবে আঁকড়ে ধরে থাকে বালুতট। একারণে সাগরের জলোচ্ছাসে বালু ক্ষয় হয়না এবং এ লতা মরে না। তাছাড়া এ লতার বীজ বালুচরে পড়ায় গোটা সৈকতই এখন বাঁচিয়ে রেখেছে এ গুল্মলতা।

গঙ্গামতি সৈকতের বিভিন্ন স্পটে গত শীত মেীসুমে বিভিন্ন এলাকা থেকে পিকনিক পার্টির সদস্যরা এসেছেন। প্রশাসন থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা এস্পট কে বেছে নেন সৈকতের মনোরম সৌন্দর্যের কারণে।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে সাগরে পানির উচ্চতা বাড়ার সাথে সাথে সাগর সৈকত ভাঙ্গনের প্রকোপ বাড়লেও ব্যতিক্রম গঙ্গামতি সৈকত। কুয়াকাটা সৈকত প্রতিটি জলোচ্ছাসে ক্রমশ ভাঙ্গলেও গঙ্গামতি সৈকতের প্রস্থ্য বাড়ছে। তৈরি হচ্ছে বালুর চর। প্রাকৃতিক এ গঙ্গালতা গঙ্গামতি সৈকতকে আকড়ে ধরলেও এ লতাকে মেরে ফেলছে স্থানীয় গ্রামবাসীরা।

স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানান, অজ্ঞতায় পরিবেশবান্ধব এ বালু লতাকে প্রাকৃতিক জঞ্জাল মনে করে মেরে ফেলছে। কেউবা এ লতাকে ছিড়ে রোদে শুকিয়ে জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করছে। অসচেতনতা কারনে গ্রামবাসীরা এ লতাকে জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করলেও চরাঞ্চলের মানুষকে একটু সচেতন করতে পারলে এ লতার স্থায়ীত্ব এ সৈকতে বাড়বে। সেই সাথে এ লতা কুয়াকাটা সৈকতের বালুচরে রোপন করতে পারলে হয়তো সাগরের ভাঙ্গন থেকে রক্ষা করা যাবে কুয়াকাটা সৈকতে। এ লতার বীজ সংরক্ষন করে বালু চরে রোপন করা যায় বলে স্থানীয়রা জানান।

(এমকেআর/এসপি/মার্চ ২৮, ২০১৮)