খুরশিদ আলম শাওন, রানীশংকৈল : সব আছে। জেলার অন্য সরকারী বা নব্য সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তুলনায় ব্যতিক্রম শিক্ষার পরিবেশ রয়েছে। রয়েছে আধুনিক শিশু পার্ক, সাতার শেখার পুকুর । বিদ্যালয় ঘিরে রাখা হয়েছে প্রাচী দিয়ে নিরাপত্তা ব্যষ্টনীর মধ্যে দিয়ে। প্রাচীতে লেখা রয়েছে বিখ্যাত মনিষীদের উক্তি আকা রয়েছে জাতীয় ফুল ফলের ও শিশু শিক্ষার্থীদের আর্কষনীয় মিনা রাজু’র বিদ্যালয়ে যাওয়ার টিয়া পাখি সম্বলিত ছবি। নেই শুধু শিশু শিক্ষার্থীদের পাঠদানের ভবন বা পাকা ঘর। আর এ বিদ্যালয়টির অবস্থান ঠাকুরগায়ের হরিপুর উপজেলা সীমান্ত ঘেষা ৩নং বকুয়া ইউনিয়নে চড় ভিটা গ্রামে। গ্রামের নামনুসারে নামকরন করা হয়েছে চড় ভিটা নব্য সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টিতে শ্রেণী কক্ষের অভাবে চরমভাবে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।

এ প্রতিনিধি বিদ্যালয়ের পাশ দিয়েই যাচ্ছিলেন এ সময় বিদ্যালয়ের বাহ্যিক পরিবেশ দেখে মুগ্ধ হলেও ভাঙ্গাচড়া ঘরে শিশু শিক্ষার্থীদের পাঠদান দেখে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে কথা বলেন প্রধান শিক্ষক এর ফান আলীর সাথে তিনি বলেন,এ বিদ্যালয়টি বে-সরকারী ছিলো বর্তমানে সরকারী হয়েছে।

আর এ পরিবেশ আমিসহ এলাকার মানুষের সহযোগিতায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য প্রাচী এর পাশেই লাগানো হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ,বসার জন্য কুটির চালা, খেলার জন্য শিশু র্পাক ভাল পরিবেশের জন্য ফুলের বাগান এবং পুকুর রয়েছে যেখানে নৌকা রয়েছে শিশু ইচ্ছে করলে আমাদের লোক দিয়ে নৌকাই করে পুকুরের চার পাশ ঘুরে বিনোদন করে। এ পুকুরে চাষ করা হয় হাঁস ও মাছ। পুকুরের চারপাশে লাগানো রয়েছে পেপে গাছ। ২০১৪ সাল থেকে চলে মিড-ডে মিল। গ্রামের সকল মানুষের নিকট মুষ্টি মুষ্টি চাল হাস মাছের আবাদ করে বেশিরভাগ অর্থ দেওয়া এই মিড-ডে মিলের ব্যবস্থায়।

প্রধান শিক্ষক এরফান আলীর সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে চাটাই বেড়া দিয়ে বানানো ভাঙ্গা চড়া অবস্থারত পাঠদানের সময় শিক্ষার্থীদের রুমে গেলে এ প্রতিনিধিকে দেখে সালাম জানিয়ে সন্মান প্রর্দশন করে বলেন,ভাইয়া আপনি তো আমাদের চেয়ে অনেক বড় শুনেছি বড়দের কথা বড়রা শুনে আপনি আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে বলুন ।আমাদের বিদ্যালয়ের ভবন নির্মান করে দিক। আমরা মাটিতে বস্তা বসিয়ে ক্লাশ করছি, শ্রেণী কক্ষের অভাবে সকল শিক্ষার্থীরা এক সাথে ক্লাশ করতে পারছি না। আমরা এক ক্লাশে পড়লেও রুমের অভাবে আলাদা ভাবে ক্লাশ করতে হচ্ছে । আমরা প্রধানমন্ত্রীর নিকট দাবী জানাই আমাদের বিদ্যালয়ের ভবন করে দিন।

এ কথাগুলো বলছিলো ৪র্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী তামান্না আরিদা সালমা ৫ম শ্রেণীর এলিজা জবা সানজিদা নাইম মানিক সহ অনেকে তারা কথাগুলো একযোগে বড় কষ্ট নিয়ে বলছিলেন।

বিদ্যালয়টি ঘুরে দেখা যায়, মনোমুগ্ধ কর পরিবেশ যা ঠাকুরগাও জেলায় অন্য কথাও আর এমন প্রতিষ্ঠান রয়েছে কিনা সন্দেহ রয়েছে। ৫টি শ্রেণীর বিপরীতে ২৭৭ শিক্ষার্থী। শ্রেণী কক্ষ আধা পাকা ২টি ২টি বাশ চাটাই দিয়ে ছোট ছোট ঘর। এক পুরুষ শিক্ষক ও তিন নারী শিক্ষিকাসহ মোট ৪ জন শিক্ষক মন্ডলী দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে বিদ্যালয়টি। বিদ্যালয়ের নিজস্ব জমি প্রায় ২বিঘা শিক্ষকদের টাকাই কেনা হয়েছে আরো ১৬ শতক।

প্রধান শিক্ষক এরফান আলী বলেন গ্রাম পর্যায়ের বিদ্যালয়গুলোতে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের পড়াতে চাই না। তাই আমি নিজ উদ্যোগে সকলের সহযোগিতায় শিক্ষার আধুনিক পরিবেশ নিয়ে ছেলে মেয়েদের প্রাথমিকে সু-শিক্ষা দেওয়ার প্রত্যয় নিয়ে এমন পরিবেশ করেছি। ভবন করতে হলে অনেক অর্থের প্রয়োজন । তেমন অর্থ যোগাড় হলে আমরা চেষ্টা করতাম শিক্ষার্থীদের কষ্টের কথা চিন্তা করে ভবন করে নেওয়ার। তারপরও সরকারী কিছু বিধান রয়েছে ইচ্ছে করলেই তো বড় ধরনের কাজ করা যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার(ভারপ্রাপ্ত) এস এম রবিউল ইসলাম বিদ্যালয়টির শিক্ষার মান ও পরিবেশের প্রশংসা করে বলেন, শিক্ষকদের নিজ উদ্যোগে এমন পরিবেশ সম্বনিত বিদ্যালয় আমার উপজেলায় তেমন নেই। আমরা ভবন নির্মানের লক্ষে ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অবগত করেছি। কর্তৃপক্ষ ভবন বরাদ্দ দিলেই বিদ্যালয়টি পড়ালেখায় আরো মান বাড়বে বলে আমরা আশা করছি।

(কেএএস/এসপি/মার্চ ২৮, ২০১৮)