নওগাঁ প্রতিনিধি : বিয়ের তথ্য গোপন করে রুকাইয়া আক্তার রুপালী নামে এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে রংপুর নাসিং কলেজে লেখাপড়া করার অভিযোগ উঠেছে। তিনি ওই কলেজে ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন নার্সিং এ ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে ভর্তি হন। শিক্ষার্থী রুপালী নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার গুজিশহর গ্রামের আব্দুল জলিলের মেয়ে ও মান্দা উপজেলার কুসুম্বা গ্রামের রফিকুল ইসলামের স্ত্রী। 

ঘটনায় রংপুর নার্সিং কলেজ অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন নওগাঁ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুন নবী বেলাল। ইতোমধ্যে শিক্ষার্থী রুকাইয়াকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।

অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেড় লাখ টাকা দেনমোহরে মান্দা উপজেলার কুসুম্বা গ্রামের রফিকুল ইসলামের সঙ্গে পারিবারিকভাবে নিয়ামতপুর উপজেলার গুজিশহর গ্রামের রুকাইয়া আক্তার রুপালীর বিয়ে হয়। সে সময় রুপালী দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। মেধাবী হওয়ায় বিয়ের পরও রুপালী লেখাপড়া চালিয়ে যেতে সহযোগিতা করে স্বামী রফিকুল ইসলাম। এসএসসি পাসের পর মান্দা থানা আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজে এইচএসসিতে ভর্তি করানো হয়। এ কলেজ থেকে ২০১৫ সালে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ ৩ দশমিক ৬৬ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।

এইচএসসি পাশের পর স্বামীকে না জানিয়ে ২০১৫ সালে নার্সিং কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয় রুপালী। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর বিয়ের তথ্য গোপন করে ও স্বামীকে না জানিয়ে রংপুর নার্সিং কলেজে ভর্তি হন। বিষয়টি স্বামী রফিকুল ইসলাম জানতে পেরে নার্সিং কলেজে ভর্তি বাতিল করার জন্য শশুর-শাশুড়িকে অনুরোধ করেন। স্বামীর অনুরোধ উপেক্ষা করে রুপালী নার্সিং কলেজে লেখাপড়া চালিয়ে যান। এর কিছু দিন পর থেকে রফিকুলের সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে দেন রুপালী। এ অবস্থায় গত ২২ জানুয়ারি রংপুর নোটারী পাবলিকের কার্যালয়ে এফিডেভিট ও রংপুর সিটি করপোরেশনের ১১ নম্বর ওয়ার্ড কাজী অফিসের মাধ্যমে স্বামীকে তালাক দেন তিনি।

স্বামী রফিকুল ইসলাম বলেন, বিয়ের পর নিজ খরচে স্ত্রী রুপালীকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করিয়েছেন। লেখাপড়ার খরচে শশুর পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা করা হয়নি। বাবার বাড়িতে অবস্থান করে তাকে না জানিয়ে নীতিমালা বহির্ভূতভাবে নার্সিং কলেজে ভর্তি হয়েছেন। স্ত্রীকে উচ্চ শিক্ষিত করতে গিয়ে প্রতারনার শিকার হয়েছেন বলেও উল্লেখ করে তিনি।

রুপালী বাবা আব্দুল জলিল ও মা চানবানু বলেন, পড়াশুনার খরচ জামাই (রফিকুল ইসলাম) নয়, আমরাই বহন করেছি। পড়াশুনা নিয়ে জামাইয়ের সঙ্গে মাঝে মধ্যেই ঝগড়া হত। মেয়েটা অনেক কষ্ট করে পড়াশুনা করছে। তবে জামাইকে তালাক দেওয়ার বিষয়টি আমাদের জানা নেই।

রুপালীর চাচা সামসুদ্দীন আহমেদ, প্রতিবেশী হেরাজ উদ্দীন ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মামুনুর রশীদ বলেন, বিয়ের পর মেয়েটি স্বামীর বাড়ি থেকেই পড়াশুনা করেছে। নার্সিং কলেজে ভর্তি বিষয়ে অবহিত নন উল্লেখ করে তারা বলেন, জামাই রফিকুলকে তালাক দেওয়ার ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক।

রংপুর নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ খালেদা বানু শিক্ষার্থী রুকাইয়া আক্তার রুপালীর বিয়ে সংক্রান্ত অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, এটা সম্পূর্ণ নীতিমালা পরিপন্থী। বিবাহিত প্রমাণিত হলে রুকাইয়ার ছাত্রত্ব বাতিল করা হবে। এ বিষয়ে শিক্ষার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে।

(বিএম/এসপি/মার্চ ২৮, ২০১৮)