সমরেন্দ্র বিশ্ব শর্মা, কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) : মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হবার পর যে নবজাতক শিশুটি বঞ্চনা ও অবহেলার শিকার, সেই নবজাক শিশু স্বাধীন আহম্মেদ ২৮ দিন বয়সে বুধবার দুপুরে চলে গেল না ফেরার দেশে। পরে পুলিশি হেফাজতে হাসপাতাল থেকে তার মরদেহের ময়না তদন্তের জন্য নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। 

মঙ্গলবার সন্ধ্যার আগে আদালতের নির্দেশে কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মুকতাদিরুর আহম্মেদ আনুষ্ঠানিক ভাবে তার কার্যালয়ে ২৭ দিন বয়সে স্বাধীন আহম্মেদকে অসুস্থ অবস্থায় নবজাতকের মা হিসেবে দাবীদার হুসনা আক্তারের জিম্মায় তুলে দেয়া হয়।

এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হুসনা আক্তার ও উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের জানান আদালতের নির্দেশনা রয়েছে ১৫ দিন পর পর ওই শিশুকে নিয়ে তার মা হিসেবে দাবীদার হুসনা আক্তারকে আদালতে হাজিরা দিতে হবে। ডিএনএ পরীক্ষার পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত যতদিন তিনি মা হিসাবে চূড়ান্ত না হবেন তত দিন পর্যন্তই তাকে আদালতে হাজিরা দিতে হবে। আদালত এভাবেই নিয়ম বেধেঁ দিয়েছেন।

আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক হুসনা আক্তার উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে অঙ্গিকার নামা দিয়ে স্বাধীন আহম্মেদকে কোলে তুলে নেবার পর প্রথম বুকের দুধ পান করান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো: মাজহারুল ইসলাম, এস আই আশরাফুল ইসলাম ও উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান জাহানারা রোজি। তবে হুসনা আক্তারের কাছে স্বাধীন আহম্মেদকে তুলে দেয়ার সময় তার দেহ ছিল কঙ্কালসার। অর্থাৎ জন্মের পর ২৭ দিন সে মায়ের বুকের দুধ পান করা থেকে বঞ্চিত ছিল।

গত ১ মার্চ সকালে কেন্দুয়া উপজেলার চিরাং ইউনিয়নের বানিয়াগাতি গ্রামের শাহজাহান মাষ্টারের বাড়ির পিছনের রাস্তায় জঙ্গলের পাশ থেকে পরিত্যাক্ত অবস্থায় মিনা আক্তার নামে এক নারী শিশুর কান্না শুনতে পেয়ে তাকে কোলে তুলে নেন। পরে কেন্দুয়া থানা পুলিশের এস.আই আবুল হাসেম তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠান। সারাদিন সেখানে চিকিৎসা দেবার পর জেলা প্রশাসক ড. মো: মুশফিকুর রহমানের নির্দেশে তাকে পরিচর্যার জন্য নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে শিশুবিভাগে পাঠানো হয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুকতাদিরুল আহমেদ স্বাধীনতা মাসে ওই শিশুটি জন্মগ্রহন ও উদ্ধার হওয়ায় তার নাম দেন স্বাধীন আহম্মেদ। একই সঙ্গে তিনি তার চিকিৎসার দায়িত্বও নিয়েছিলেন। তবে মায়ের দুধ পান করতে না পেরে শিশুটি দিন দিন শুকিয়ে যায়।

বুধবার শিশুটির মৃত্যুর খবর শুনে হাসপাতালে ছুটে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুকতাদিরুল আহমেদ ও উপজেলা পরিষদের ভাইস- চেয়ারম্যান জাহানারা রোজি।

কেন্দুয়া থানা অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ মাহাবুবুল হক জানান স্বাধীন আহম্মেদের মৃত্যুর ঘটনায় থানায় একটি সাধারন ডায়রী করা হয়েছে। তাকে ময়না তদন্তের জন্য নেত্রকোণা আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

(এসবি/এসপি/মার্চ ২৮, ২০১৮)