দিনাজপুর প্রতিনিধি : দিনাজপুরের ফুলবাড়ীসহ আশপাশের এলাকার ওপর দিয়ে গত শুক্রবার (৩০মার্চ) বিকেলে আকস্মিকভাবে বয়ে যাওয়া ঝড়সহ শিলাবৃষ্টিতে কাঁচা ঘরবাড়িসহ টিনসেডের নির্মিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর বিধস্ত হয়ে গেছে। 

ভারী শিলাবৃষ্টিতে ক্ষেতের ধান, ভূট্টাসহ রবি শস্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বড় বড় শিলার আঘাতে শুধুমাত্র ফুলবাড়ীতেই দুই শিশু, ছয় নারীসহ নয়জন গুরুতর আহত হয়েছেন।

আহতরা হচ্ছে, উপজেলার পৌর এলাকার চাঁদপাড়া গ্রামের শাহিন উদ্দিনের মেয়ে সানিয়া (৩), গৌরীপাড়ার জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী রাবেয়া খাতুন (৩০), সুজাপুরের আল-আমিনের ছেলে মেহেদী হাসান (১৫), মধ্য গৌরীপাড়ার ফজির উদ্দিনের মেয়ে জরিনা খাতুন (৪০), খয়েরপুকুর হোসেনপুর গ্রামের সোয়াব আলীর স্ত্রী ইয়াসমিন (৫০), আনন্দ বাজারের গোলাম মোস্তফার স্ত্রী রুপালী বেগম (৩০) ও তার শিশু সন্তান রাব্বী আল মিজান (৩), মধ্যপাড়া ভাদুরীর রমজান আলীর স্ত্রী মজিয়া খাতুন (৪৫) ও ভাল্কা জয়পুর গ্রামের জায়দুল ইসলামের স্ত্রী রাহিলা বেগম (৩৫)। এদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় শিশু সানিয়া (৩) ও মজিয়া খাতুনকে (৪৫) রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে এবং অন্যদেরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

গতকাল শনিবার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার চককবীর গ্রামের টিনের চালা বেড়া দেওয়া কাঁচা ঘরবাড়িগুলো বিধস্ত হওয়ার পাশাপাশি ছাউনীর টিন শিলার আঘাতে বড় বড় আকারের ফুটো হয়ে গেছে। পরিবারগুলো ঘরবাড়ি মেরামত নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। পাটিকাঘাট আদর্শ উচ্চ বিদ্যালরে ছাত্রীদের কমনরুমসহ নয়টি শ্রেণি কক্ষেরই টিনের ছাউনী শিলার আঘাতে ফুটো হয়ে গেছে। নষ্ট হয়ে গেছে আসবাবপত্রও। একই অবস্থা দেখা গেছে পার্শ্ববর্তী নবাবগঞ্জের কুশদহ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে। ইউনিয়নের কালীরহাট, আফবাতগঞ্জসহ অন্যান্য গ্রামের কাঁচা বাড়িঘরগুলো প্রায় বিধস্ত হয়ে গেছে।

টিনের চালার বাড়িঘরগুলোর শিলার আঘাতে টিনগুলো ফুটো হয়ে যাওয়ায় ঘরবাড়িতে বসবাস নিয়ে মহাদুশ্চিন্তায় পড়েছেন গ্রামবাসীরা। সকালে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনসহ সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন দিনাজপুর-৬ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য মো. শিবলী সাদিক। শিলার আঘাতে আম, লিচুসহ ধান, ভূট্টাসহ রবিশস্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শিলার আঘাতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন ইটভাটা মালিকরা। ইটভাটার খোলানে রাখা কাঁচাইট শিলাবৃষ্টিতে পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে।

নূরপুর গ্রামের ভূট্টা চাষি গোলাম মোস্তফা ও গোপালপুর গ্রামের সুবাস রায় বলেন, ঝড়সহ শিলাবৃষ্টিতে অন্যান্য ফসলের সাথে সব চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বোরো ধান ও ভূট্টাক্ষেতের।

গুপ্তা ব্রিক্সের সত্বাধিকারী রাজু গুপ্তা বলেন, শিলাবৃষ্টিতে খোলানের কাচাইট ধ্বংস হয়ে গেছে। এতে উপজেলায় অন্তত দশ লাখ কাচা ইট ধ্বং হয়ে গেছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এটিএম হামীম আশরাফ বলেন, ঝড়সহ শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণের জন্য উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তারা কাজ করছেন। তদের কাজ শেষ হলে জানা যাবে উপজেলায় কি পরিমাণ ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুস সালাম চৌধুরী বলেন, সকল ইউপি চেয়ারম্যানদের কাছে ক্ষয়ক্ষতির হিসেব চারওয়া হয়েছে। তাদের তালিকা পাওয়া গেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জেনে ক্ষতিগ্রস্তদেরকে সরকারিভাবে সহায়তা দেওয়া হবে।

(এসিজি/এসপি/মার্চ ৩১, ২০১৮)