চৌধুরী আবদুল হান্নান


গত ২২ মার্চ সমকাল পত্রিকায় ‘মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকার’ শিরোনামে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপচার্য এমাজউদ্দীন আহমদ-এর একটি দীর্ঘ লেখা ছাপা হয়েছে। লেখার বিষয়স্ত মূলত আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা।

লেখাটি পড়ে আমি খুব হতাশ হয়েছি । আমি একজন স্বাধীন ব্যক্তি, বাক স্বাধীনতা আমার অধিকার এবং সেই অধিকার থেকে আমি জনাব এমাজউদ্দীনের এ লেখার অঅলোচনা, সমালোচনা করতে পারি ।

লেখাটিতে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সৃষ্টির ইতিহাস, ‘৭১ এর মার্চ মাসের স্বাধীনতার প্রস্তুতি পর্ব, জনযুদ্ধ ইত্যাদি প্রসঙ্গিক বিষয়ে ধারাবাহিক ও বিস্তারিত বর্ণনা আছে। এক পর্যায়ে তিনি এমনও লিখেছেন- ‘আমাদের বিদ্যমান জাতীয় সংকট উত্তরণে সবচেয়ে বেশি সহায়ক হয়েছিল জাতীয় জীবনে তিনটি বৈশিষ্টপূর্ণ অর্জন। তা হলো- ১. আমাদের ইস্পাত কঠিন ঐক্য ২. নেতৃত্বের আত্মনির্ভরশীলতা ৩. আত্মপ্রতিষ্ঠার অদম্য ও সুস্পষ্ট লক্ষ্য।’

বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করা গেছে যে, তাঁর এ সূদীর্ঘ লেখার মধ্যে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। এ ধরনের লেখায় বা আলোচনায় বঙ্গবন্ধুর নাম যুক্ত না হলে লেখাটি কেবল অসম্পূর্ণই থাকে না, লেখার উদারতাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়। বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশের জন্ম হতো না- এ কথা বাঙালির অবেগতাড়িত কোনো কথা নয়, তা এখন বিশ্ব স্বীকৃত।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এমাজউদ্দীন বঙ্গবন্ধুর নাম উল্লেখে আগ্রহ না দেখালেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জেষ্ঠ্য পুত্র এবং বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৫৩তম জন্মদিনের আনুষ্ঠানে প্রধান আতিথির আসন অলংকৃত করে তার প্রসংশায় মুখর হতে দেখা গেছে।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন (৫ জানুয়ারি ২০১৪) বর্জনের পর বিএনপি-জামাতের ‘জালাও পোড়াও কর্মসূচি’ যখন তুঙ্গে তখন এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সব রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বাান জানিয়ে এক আনুষ্ঠানে আলোচনায় বলেছিলেন- ‘ব্যর্থ রাষ্ট্র ঠেকাতে সংলাপ জরুরী।’

তিনি বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র হওয়ার কথা বলে বিএনপিকে খুশি করেছেন, প্রকারান্তরে নাশকতাকে উস্কে দিয়েছেন। এসব কারণে বঙ্গবন্ধু তাঁর আলাপ চরিতায় প্রায়ই বলতেন- শিক্ষা বঞ্চিত লোকদের চেয়ে বেশি শিক্ষিত লোকেরাই দেশের বেশি ক্ষতি করে থাকে। বুদ্ধিজীবীদের জাতির বিবেকের সাথে তুলনা করা হয়, সংকটকালে তারা জাতিকে দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। অন্ধ, দলকানা বুদ্ধিজীবীগণ কীভাবে জাতির বিবেক হিসাবে গণ্য হবেন? তাঁর লেখায় বঙ্গবন্ধুর নাম উল্লেখ না করায় বঙ্গবন্ধু ছোট হননি বরং লেখকের মানসিক সংকীর্নতা প্রকাশ পেয়েছে।

তিনি বুদ্ধিজীবীর ভূমিকায় অবতীর্ন না হয়ে বিএনপির একজন উঁচুদরের চৌকস কর্মী হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন । তা তিনি করতেই পারেন কিন্তু তিনি অনেক বড় পরিসরে দেশের চলমান অসুস্থ ও বিভাজনের রাজনীতিকে সুস্থ ধারায় ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে অবদার রাখতে পারতেন ।

ড. এমাজউদ্দীনের অগনিত ছাত্র, ভক্ত ও পাঠক রয়েছেন যাঁরা তার মতামতকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে থাকেন, সে ক্ষেত্রে উদারতার বীজ বপন করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে তাঁর।

বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রবিজ্ঞানী নন বা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় পন্ডিত ব্যক্তিও নন কিন্তু তিনি একজন রাষ্ট্রনায়ক এবং তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর গবেষণা করে যুগ যুগ ধরে পন্ডিত সৃষ্টির এক বিস্তৃত ক্ষেত্র তৈরী হয়ে আছে।

সরকার পরিচালনায় আওয়ামী লীগের সীমাহীন ব্যর্থতা থাকা সত্ত্বেও জনগণ বিএনপিকে ভরসার স্থল ভাবতে পারছে না আজও।

চির প্রতিদ্বন্ধী দুইটি রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগ ও বিএনপির অন্তদ্বন্দ্বে মানুষ নিষ্পোষিত বা নিরপনে দেশের বরেণ্য বুদ্ধিজীবীদের অগ্রণী হতে পারেন। তাতে রাজনীতিতে কিছুটা হলেও গুণগত পরিবর্তন প্রত্যাশা করা যায় ।

লেখক : সাবেক ব্যাংকার