কুমিল্লা প্রতিনিধি : নিউজ টুয়েন্টিফোরের কুমিল্লা প্রতিনিধি হুমায়ূন কবীর জীবনের ছিনতাই হওয়া ক্যামেরা উদ্ধার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। সেই সাথে গ্রেপ্তার করেছে তিন ছিনতাইকারীর একজনকে। বাকিরাও গোয়েন্দাদের নজরদারির মধ্যেই রয়েছে। ছিনতাইয়ের ঘটনার ২৪ ঘন্টার মধ্যে রবিবার বিকালে কুমিল্লা গোয়েন্দা পুলিশের একটি বিশেষ দল কুমিল্লা ইপিজেডে অভিযান চালিয়ে ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করে। সেই সাথে অপর এক ছিনতাইকারীর বাসা থেকে উদ্ধার করে ছিনতাই হওয়া ক্যামেরা। 

জানা গেছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় কুমিল্লার সুয়াগাজি স্কুল মাঠে আওয়ামীলীগের জনসভার প্রস্তুতির ছবি তুলে মোটর সাইকেলে কুমিল্লায় ফিরছিলেন দৈনিক কুমিল্লার কাগজের নির্বাহী সম্পাদক ও নিউজ টুয়েন্টিফোরের কুমিল্লা প্রতিনিধি হুমায়ূন কবীর জীবন।

এ সময় তার সাথে ছিলেন কাজী আবু হানিফ নামে অপর এক সাংবাদিক। তারা কুমিল্লার সদর দক্ষিণ থানাধীন সামবক্সি এলাকায় আসলে অপর একটি মোটর সাইকেলে করে আসা তিন ছিনতাইকারী তাদের গতিরোধ করে। এ সময় ছিনতাইকারীদের একজন সাংবাদিক জীবনকে ছুরিকাঘাতের চেষ্টা করে এবং ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়।

অসীম সাহসের সাথে জীবনের সাথে থাকা সাংবাদিক কাজী আবু হানিফ ছিনতাইকারীর হাতে থাকা ছুরি ধরে ফেলে। এ সময় ছিনতাইকারীরা দস্তাদস্তির এক পর্যায়ে ছুরি ফেলে মোটরসাইকেলে করে চলে যায়। পরে পুলিশ ছিনতাইকারীদের ফেলে যাওয়া ছুরি উদ্ধার করে।

ঘটনার সাথে সাথে ছুরিতে থাকা বারকোডের লেখা দেখে জানা যায়-ছুরিটি কুমিল্লার ইপিজেড রোডের রোসা সুপার সপ থেকে কেনা। সেখানে গিয়ে পুলিশের একটি দল দেখতে পায়ে ছিনতাইয়ের আগের দিন সন্ধ্যায় ৯৫ টাকা দিয়ে ছুরিটি কেনেন দুই ছিনতাইকারী। তাদের ভিডিও সংগ্রহ করা হয়। একই সময়ে কুমিল্লার পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে অভিযান পরিচালনার জন্য কুমিল্লা গোয়েন্দা পুলিশকে নির্দেশ দেন।

কুমিল্লা গোয়েন্দা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ একেএম মনজুর আলমের নেতৃত্বে এসআই শাহ কামাল আকন্দ ও এসআই নন্দনসহ অন্যান্য গোয়েন্দা পুলিশ সদস্যদের সমন্বয়ে একটি বিশেষ দল কুমিল্লা ইপিজেড এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইপিজেডের একটি ফ্যাক্টরি থেকে কুমিল্লা শহরের বাগিচাগাঁওয়ের বড় মসজিদ সংলগ্ন আলী আকবরের বাড়ির মৃত মোহাম্মদ দুলাল মিয়ার ছেলে মো: বাপ্পী (২৬) কে গ্রেপ্তার করে।

এ সময় সে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও এসআই নন্দন তাকে ঝাপটে ধরে ফেলেন। গোয়েন্দা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে সে ছিনতাইয়ে জড়িত অপর দুই জনের নাম প্রকাশ করে। গোয়েন্দা পুলিশ এ সময় ক্যামেরা উদ্ধার করে এবং বেশ কয়েক স্থানে অভিযান চালায়। ছিনতাইয়ে জড়িত অপর দুই জন হলেন কুমিল্লার ভাটপাড়ার মো: ডেনি এবং উত্তর চর্থার মো: রুবেল। তাদের গ্রেপ্তারেও অভিযান চলছে।

জানা গেছে, মৃত মোহাম্মদ দুলাল মিয়ার ছেলে ছিনতাইকারী মো: বাপ্পী কুমিল্লা শহরের চর্থায় নানীর বাড়িতে থাকে। সে ছিনতাইসহ নানা অপকর্মে জড়িত। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। অপরাধ কর্মে সে সব সময় তার পরিবারের কাছ থেকে সহযোগিতা পায়। ছিনতাইকারী বাপ্পী ছিনতাইয়ের পাশাপাশি ইপিজেডের একটি ফ্যাক্টরিকে চাকুরি করে। তার পরিবারেও সদস্যরাও ইপিজেডে চাকুরি করে।

ছিনতাইকারী অপরজন মো: ডেনি গত ১৫ দিন আগে গোয়েন্দা পুলিশের এক মামলায় জেল থেকে জামিনে বের হন। এরপরই আবার ছিনতাইয়ে নেমে পড়ে। মো: ডেনি তিনভাইয়ের মধ্যে মেঝ।

জানা গেছে, তিন ছিনতাইকারী ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত ছুরিটি কেনেন কুমিল্লা ইপিজেড রোডে অবস্থিত রোসা সুপার শপ থেকে। বৃহস্পতিবার রাত ৭টা ৪৩ মিনিটে এটি কিনেন তারা।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর দক্ষিন) গোলাম আম্বিয়া মাহমুদ, ইপিজেড পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আজিজুর রহমানের সংগ্রহ করা ভিডিও ফুটেজে ছিনতাইকারীদের দুই জনের চেহারা স্পষ্ট বুঝা যায়। ছবি দেখে গোয়েন্দা পুলিশ নিশ্চিত হয়ে যায় এই ছিনতাইকারীদের সম্পর্কে।

এ ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেছে। মামলাটি তদন্তের ভার দেয়া হয়েছে গোয়েন্দা পুলিশকে।

(আর/এসপি/এপ্রিল ০২, ২০১৮)