সোহেল রানা, শেরপুর : তীব্র না হলেও বেশ খরতাপ শুরু হয়েছে। চৈত্রের রৌদ্রদগ্ধ দিন জানান দিচ্ছে পহেলা বৈশাখ মাত্র কয়েক দিন বাকি। আর সেই উৎসবকে ঘিরে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার বিহারীরপাড় পালপাড়ার মৃৎশিল্পীরা। তৈরি হচ্ছে মাটির খেলনাসহ, বিভিন্ন তৈজসপত্র। বাঙালি জাতির অন্যতম ঐতিহ্য মৃৎশিল্প। এই শিল্পের চাহিদা বছরের অন্যসব সময়ে কম থাকলেও মহান স্বাধীনতা দিবস, অষ্টমী ও পহেলা বৈশাখে চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। বিশেষ করে পহেলা বৈশাখে মাটির তৈরি জিনিস পত্র ছাড়া যেন বাঙ্গালিদের চলেই না। তাই এই সময়ে অন্যান্য সময়ের চেয়ে মৃৎশল্পীদের একটু বেশিই ব্যস্ত সময় পাড় করতে হয়, আর হচ্ছেও তাই।

সরজমিনে পাল পাড়ায় দেখা যায়, মৃৎশিল্পীরা গড়ছেন মাটির গাছ, পাখি, ফুল, ফুলের টপ, ফলমূলসহ বিভিন্ন বাসন কোসন ও ছোট ছেলে মেয়েদের জন্য নজর কাড়া বিভিন্ন খেলনা। তারা মনের মাধুরী মিশিয়ে বিভিন্ন মাটির তৈরির খেলনার আকৃতি দিচ্ছেন, করছেন পণ্যে রংয়ের কাজ।

শেরপুরের নকলার বিহারীরপাড়ায় প্রায় অর্ধশত পরিবার বসবাস করে। তাদের অনেকেই এই পেশায় সারা বছরজড়ত থাকেন না। অনেকেই বাংলার এই ঐতিহ্যকে আকরে ধরে রাখলেও, কেউ কেউ বেশ কয়েক বছর আগেই এই পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন।

এই শিল্পের প্রধান উপকরণ মাটি ও বিভিন্ন রং। তাই মৃৎশিল্পীরা বিভিন্ন নদী, খাল-বিল ও পুকুর থেকে মাটি সংগ্রহ করেন। চাকা (চাকী)’র মাধ্যমে মাটি কে বিভিন্ন আকৃতি দেওয়া হয়। তারপর সেই মাটির জিনিস পত্রগুলো আগুনে পুড়িয়ে শক্ত করে নেন তারা।

মৃৎশিল্পীরা জানান, বাসন কোসনের চেয়ে খেলনা সামগ্রীর চাহিদা অনেক বেশি। বিভিন্ন মেলা, ঈদ, পূজা-পার্বনসহ বিভিন্ন উৎসবে এসব পণ্য বেশি বিক্রি হয়ে থাকে।

পাল পাড়ার বাসিন্দা কুকিলা রাণী পাল জানান, বর্তমানে তাদের দিন রাত কাজ করতে হচ্ছে। সামনের পহেলা বৈশাখসহ বেশ কয়েকটি মেলা আছে, সেসব মেলায় তাদের বিক্রি সবচেয়ে বেশি হবে।

গৌতম পাল বলেন, বর্তমানে মাটির জিনিস পত্রের কদর কমে গেছে। তবে পহেলা চৈত্র-বৈশাখ মাসে মাটির জিনিসের কদর একটু বাড়ে। এই দুই মাসের বিভিন্ন মেলায় মাটির পণ্য বিক্রির আয়েই তাদের সারা বছরের সংসার খরচ ও ছেলে মেয়েদের শিক্ষা খরচ চালাতে হয়।

বিহারীরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থী রত্না রানী পাল জানান, এই মৌসুম আসলেই ওই পালপাড়ার সব শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাওয়ার আগে ও স্কুল থেকে ফিরে মাটির পণ্য বানাতে বা পণ্যে রং করতে তাদের বাবা-মাকে তারা সহযোগিতা করে থাকে।

(এসআর/এসপি/এপ্রিল ০৩, ২০১৮)