প্রবাসী লেখক বিশ্বজিত বসুর নাটক ‘হাতি’
(বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি। স্বাভাবিকের চেয়ে মোটা সোটা একটা লোকের মঞ্চে প্রবেশ।)
বিশু: এমন বৃষ্টির দিনে কাঁঠাল আর মুড়ি খায়ে কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমানোর মজাই আলাদা । মীরা গেছে বাইরে, এই সুযোগে নাক ডেকে একটু ঘুমায়ে নেই।
(কাঁথা মুড়ি দিয়ে নাক ডেকে ঘুম । ছাতা হাতে মীরা বাইরে থেকে প্রবেশ করে। ঘুমানো দেখেই তার রাগ চরমে উঠে যায়।)
মীরা: এই যে আবারও । সুযোগ পেলে্ই শুধু খাওয়া আর ঘুম। খাওয়া আর ঘুম। গন্ধ শুঁকেই বুঝতে পেরেছি কাঁঠালটা আর আস্ত নেই। দেখি মুড়ির টিনটা.. হায় হায় হায় মুড়ির টিনটাও ফাঁকা করে ফেলেছে। দাঁড়াও নাক ডেকে ঘুমানো ছুটাচ্ছি। ওঠ! ওঠ!
(কাঁথা সরিয়ে নেয়। বিশু লাফ দিয়ে উঠে পরে)
বিশু: শান্তিতে একটু ঘুমাব তারও উপায় নাই । কানের কাছে খালি ঘেনর ঘেনর, ঘেনর ঘেনর । কম খাও, কম খাও , দিন দিন জীবনটা অশান্তিতে ভরে যাচ্ছে।
মীরা: শরীরের দিকে একটু নজর দাও । কদিন পরে তো ফেটে মরে যাবা। ধ্যাত, যে নিজের ভালমন্দ বোঝেনা তাকে কে বোঝায়।
বিশু: হে ভগবান আমাকে একটু মুক্তি দাও। একটু প্যাট ভরে খাব তারও উপায় নাই। খালি নজর লাগায়।
মীরা: এরকম গিললে ভগবান খুব তাড়াতাড়িই মুক্তি দিয়ে দেবে । ডাকতে হবেনা। হাতির মত দিন দিন যেভাবে মোটা হচ্ছো ।
বিশু: হাতী হাতী করবা না বলে দিলাম। মাথা কিন্তু ঠিক রাখতে পারবনা । একটা হেস্ত নেস্ত হয়ে যাবে কিন্তু।
মীরা: না উনারে হাতি বলবেনা না। হরিণ বলতে হবে।
(বন্ধুর প্রবেশ)
বন্ধু : বিশু, বিশু। আরে এই চিকনা।
মীরা: আপনি ওকে চিকন বলছেন। ও চিকন হলে মোটা কে।
বন্ধু: মোটা বললে তো ক্ষেপে যায়, তাই চিকনা বলে ডাকলাম।
মীরা: দেখ দেখ তাকিয়ে দেখ। উনার দিকে তাকাও । কত সুন্দর হ্যান্ডসাম। দেখেও কি মনে হয়না, স্বাস্থ্যটা একটু কমাই । যাও ওঠ । পারলে ওনার সাথে একটু জগিং করে এসো।
বন্ধু: চল জুতা পরে নে ।জগিং করে আসি।
বিশু: জুতা, বলিস কি। এই আষাঢ়ে কাঁদার মধ্যে? জুতাটা নষ্ট হয়ে যাবে তো। আর যদি পা কাঁদার মধ্যে গাড়ে যায় তাহলে উঠতি পারব না।
মীরা: খাবার বেলায় এই হিসাবটা করলে কাজ লাগত। জুতা বাঁচানো লাগবে না, শরীরটা বাঁচাও।
বন্ধু: হুনা জায়গা দিয়ে হাটিস। জোতা পড়, নাইলে কাঁডা টাডা ফুটতি পারে।
মীরা: দাড়া ছাতাটা নিয়ে যাই। আমার আবার বৃষ্টি সহ্য হয়না। বৃষ্টির জল পড়লি হাঁচি শুরু হয়ে যায় । হাঁচ-চু।
বন্ধু: বৃষ্টির নাম করেই হাঁচি।
বিশু: আর বলিস না! হাঁচ-চু
মীরা: শরীরটাকে কিভাবে শেষ করে ফেলেছে দেখ। বৃষ্টির নাম শুনলেই হাঁচি শুরু হয়ে যায়।
বন্ধু: কিছুদিন জগিং কর, আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে ।
বিশু: জানিস আজকে না আমার মনটা ভীষণ খুশি খুশি লাগছে। হাঁ-চু
বন্ধু: কেন?
বিশু: এই যে আমাকে তুমি চিকনা বললি। দেখনা বউটা কথায় কথায় আমারে হাতি হাতি করে ।
বন্ধু: বৌদি তোকে হাতি বলে! না এটা ঠিকনা। অন্যায় করে। বৌদি শোন, তুমি ওকে আর হাতি বলবানা।
আজ থেকে হয় কিং-কং বলবা নয় টিরেক্স বলবা।
বিশু: আচ্ছা বল আমি কি এতই মোটা ? ঐযে গান গায় মোটা করে, কি যেন নাম, বা বা বা
(বন্ধু মুখ চেপে ধরে। পুরো নামটা বলতে দেয়না)
বিশু: এবারতো আমারে মারে ফেলাইছিলি। দম বন্ধ হয়েই তো মারা যাতাম।
বন্ধুঃ তোকে বাঁচিয়ে দিলাম। নামটা মুখে নিলে সে যদি ৫৭ ধারায় মামলা করে দেয়, তাহলে মামলা ঠেলতে ঠেলতে জীবন শেষ।
বিশু: মামলা করবি কে?
বন্ধুঃ জানিস না, মোটারে মোটা বললে মানহানি হয়?
বিশু: তাহলেতো বুঝছিস আমি কার কথা কইছি। আচ্ছা তুইই ক, আমি যদি হাতি হই, তাহলে ও কি ?
বন্ধু: ও তাহলে টিরেক্স নয় কিং কং।
বিশু: আমি কিন্তু তোর নামে ৫৭ ধারায় মামলা করে দেব। তুই আমারে হাতির চেয়ে মোটা বলছিস।
মীরা: কখন বলল ?
বিশু: আমি বুঝি অংক বুঝিনা। সে আমার চেয়ে মোটা ঠিক।
বন্ধু: হ্যাঁ একটু মোটা।
মদনা: তুই মীরাকে কইলি আমারে কিং কং নয় টিরেক্স ডাকতে। তাহলে হাতির চেয়ে মোটা হলো না্?
মীরা: দেখ, আমিই খালি বলি না। তোমার বন্ধুরাও বলে।
বন্ধু: তোর কাছে মাফ চাই। ৫৭ ধারা আমার ভয় করে। তোরে আমি চিকনা বলবো।
বিশু: বলছিস?
বন্ধু: বলছি, চল জগিং করে আসি।
বিশু: এই, জগিং কিভাবে করে একটু শিখায়ে দিবিনা। রাস্তায় যাওয়ার আগে একটু শিখায়ে দে।
বন্ধু: আচ্ছা শেখাচ্ছি, নে ডান পা তোল (বিশু ডান পা তুলল)
বন্ধু: এবার বাম পা তোল
বিশু: তুলব ? ( বন্ধুকে)
বন্ধু: তোল।
বিশু: তুলব ? (বউকে)
মীরা: আ.. তোল তো।
বিশু: একটু কাছে আয় (বন্ধু কাছে আছে), তুমিও একটু কাছ আস ( বউকে)
(বিশু দুজনের ঘারে দুই হাত দিয়ে ঝুলে পরে। বউ বন্ধু দুজনেই বসে পরে বিশু পড়ে যায়। বউ রেগে বের হয়ে যায়।)
বন্ধু: এটা কি করলি?
বিশু: দুই পা একসাথে তোলা যায়?
বন্ধু: আরেক পা নামাবি না?
বিশু: তুই বললি তুলতে, তাহলে নামাবো কেন?
বন্ধু: এক পা যখন তুলতে হয় তখন আরেক পা নামাতে হয় - এই সহজ কথাটা বুঝিস না?
বিশু: সে তো হাঁটা হয়ে গেল । হাটা আর জগিং কি এক হলো?
বন্ধু: বুঝছি, ওজন তো বানাইছো হাতির মত। সাথে বুদ্ধিটাও গিলছ।
বিশু: তুইও আমারে হাতি কইলি? যা তোর সাথে আর ব্যায়াম করবো না। আবার যদি মোটা কস্, তোর নামে আমি ৫৭ ধারায় মামলা করে দেব।
(রেগে মঞ্চ থেকে চলে যায়।)
বন্ধু: শোন্ মোটাডা কমা, নইলে সাড়া পাড়ার লোক তোকে হাতি বলা শুরু করবেনে। মামলা দিতে দিতে হয়রান হয়ে যাবিনি। আর শোন্, সবার আগে বউয়ের নামে ৫৭ ধারায় একটা মামলা করে নিস।
(মঞ্চ থেকে বের হতে যায়। এমন সময় দেখে দুটো ছেলে পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছে)
বন্ধু: এই খোকারা শোন।
প্রথম বালক: বলেন।
বন্ধু: তোমরা কি কখনও চিড়িয়াখানায় গেছ?
দ্বিতীয় বালক: হ্যা গেছিতো।
বন্ধু: সেখানে কি কি আছে বলত?
প্রথম বালক: হাতি, ঘোড়া, বাঘ, ভাল্লুক।
বন্ধু: তোমরা কি জান, ওই বাড়ীতে একটা হাতি আছে?
বালকদ্বয় একসাথে : সত্যি, দেখা যাবে?
বন্ধু: হ্যাঁ দেখা যাবে, তবে সাবধানে যেও, ছাড়া হাতিতো আক্রমণ করতে পারে।
বালকদ্বয়: ঠিক আছে।
(বন্ধু মঞ্চ থেকে নেমে যায় বালকদ্বয় সতর্ক ভাবে বাড়টিার দিকে এগিয়ে যায়)
প্রথম বালক: বাড়ীতে কেউ আছেন?
দ্বিতীয় বালক: বাড়ীতে কেউ আছেন ?
(মীরা বেরিয়ে আসে)
মীরা: কি বাবারা কি চাই?
প্রথম বালক: এই বাড়িতে নাকি একটা হাতি আছে?
(বিশু বাড়ীর ভিতর থেকে হাঁক ছেড়ে লাঠি নিয়ে বেরিয়ে আসে)
বিশু: কিডারে হাতি দেখতে আইছে। দাঁড়া হাতি দেখাচ্ছি।
(বালকদ্বয় দৌড় দেয়, মীরা ঠেকাবার চেষ্টা করে । বিশু পিছে পিছে দৌঁড়ানোর চেষ্টা করে মঞ্চে পড়ে যায়, বউ গিয়ে তুলতে চেষ্টা করে)
বিশু ও মীরা: হাতিরে কি টানে তোলা যায়
- সমাপ্ত -