সঞ্জীব কুমার দাস, কাপাসিয়া (গাজীপুর) : গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার টোক নগর গ্রামে শীতলক্ষ্যা নদীর তীর দখল করে অবৈধভাবে শিল্প কারখানা নির্মাণ করছে একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান। প্রশাসনের কাছে নদীর তীর লিজের আবেদন করলে তা নাকচ করে দেওয়া হলেও থামেনি তাদের নদীর তীর দখলের অপৎপরতা। জেলা প্রশাসনের কোনো অনুমোদন না নিয়ে, স্থানীয় প্রশাসনকে পাত্তা না দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি তাদের বিশাল কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কাপাসিয়া উপজেলাধীন টোক বাজার থেকে প্রায় ২ কি.মি. পশ্চিমে টোক-বরমা রাস্তার উত্তর পাশে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে প্রীতি গ্রুপ নামক প্রতিষ্ঠানটি একটি অটো ইট ভাটার কারখানা স্থাপনের কাজ করছে। কারখানার নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এলাকাটি কৃষি প্রধান এলাকা। শিল্প স্থাপনের জন্য কৃষি জমি ব্যবহার নিষিদ্ধ। সিএস পরচায় জায়গাটি পূবাইল বাজারের নামে রেকর্ড থাকলেও পরে তা জনৈক হামিদ চৌধুরীর নামে রেকর্ড হয়। প্রীতি গ্রুপ হামিদ চৌধুরীর অবর্তমানে তার সন্তানসহ স্থানীয় কয়েকজনের কাছ থেকে প্রায় ১৫ বিঘা জমি ক্রয় করে কারখানা নির্মাণ শুরু করে। কারখানার মূল স্থাপনা ক্রয় করা জমিতে হলেও পরে প্রতিষ্ঠানটি জমির পশ্চিম পাশ দিয়ে প্রবাহিত শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব তীরের ১০/১৫ বিঘা চর দখল করে নিয়ে তাতে সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘিরে নিজেদের স্থাপনা গড়ে তুলছে।

তাছাড়া সরকারি নিয়ম অনুযায়ী শিল্প স্থাপনের জন্য জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য জেলা প্রশাসকের নিকট আবেদন করে জমি-জমা ভাগ করতে হয়। শিল্প স্থাপনের জন্য অনুমতি নিতে হয়। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রও প্রয়োজন; কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি এসব কিছুই সংগ্রহ করেনি।

স্থানীয় কৃষক বিএডিসি সেচ স্কিমের সদস্য মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, পূবাইল নতুন বাজার থেকে উত্তর দিকে শীতলক্ষ্যা নদী পর্যন্ত প্রায় ২৫০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৬ ফুট প্রশস্ত গোহালট ছিল। তার একপাশ দিয়ে তৈরি আমাদের পাকা সেচ নালাসহ প্রায় ৪ ফুট করে গোহালট কারখানার মালিক দখল করে নিয়েছে।

টোক ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মোঃ বাবলু মিয়া বলেন, কারখানা নির্মাণের খবর পেয়ে আমরা তাদের ক্রয়কৃত জমি কারখানার নামে নামজারি ও প্রেণি পরিবর্তনের কথা বললেও কারখানা কর্তৃপক্ষ আমাদের কথায় কোনো গুরুত্ব দিচ্ছে না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় তাদের ‘খুঁটির জোর’ অনেক বেশি। প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নদী দখলের বিষয়ে আমাদের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন চাইলে আমাদের সার্ভেয়ার স্পষ্ট করে দেখিয়েছেন তারা নদীর বিশাল চর দখল করে নিয়েছে।

কাপাসিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ নাজমুস সাকিব বলেন, কারখানাটি নদীর তীরে রাতের আধারে তৈরী করেছে। আমরা একাধিক বার ভেঙ্গে দিয়েছি। এবং কারখানার মালিকের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

এ ব্যাপারে প্রীতি গ্রুপের মানব সম্পদ কর্মকর্তা মোঃ আবিদ হাসানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমাদের (কারখানার) বিরুদ্ধে উত্থাপিত সকল অভিযোগ মিথ্যা। কারখানা কর্তৃপক্ষ নদীর তীর বা সরকারি জমি দখল করেনি। কারখানার প্রয়োজনীয় সকল বৈধ কাগজপত্র ঢাকার অফিসে রয়েছে। আপনারা ঢাকায় এসে তা দেখে যান।

(এসকেডি/এসপি/এপ্রিল ০৪, ২০১৮)