ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : ব্যবসা-বাণিজ্যের ভাগ-বাটোয়ারা, আভ্যন্তরীণ দলীয় কোন্দল, টেন্ডারবাজি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসার প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে গুরুত্বপূর্ণ ঈশ্বরদীর পাকশী ইউনিয়নে একের পর এক হত্যাকাণ্ড, গুলি, কুপিয়ে জখম ও অংগহানীর মতো ঘটনা ঘটেই চলেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতা হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন। হত্যাকান্ড থেকে রেহাই পায়নি পুলিশও। পুলিশের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের একাধিকবার বন্দুক যুদ্ধের ঘটনাও ঘটেছে পাকশীতে। এরপরও ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে অপরাধীরা।

পাকশীর হত্যাকাণ্ডের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত এএসআই সুজাউল ইসলাম ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম লাবলু হত্যাকাণ্ড।

এছাড়াও এখানে নিকটাবর্তী কয়েক বছরে একের পর এক হত্যার শিকার হয়েছেন পাকশী ওয়ার্ড যুবলীগের সহ-সভাপতি নেতা শাহজাহান, ওয়ার্ড যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিতু, গৃহবধূ সালমাকে পুড়িয়ে হত্যা, অজ্ঞাত ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার, এ এস আই সুজাউল হত্যা মামলার আসামী রুবেল বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়। সর্বশেষ গত ১লা এপ্রিল রাতে পাকশী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি পিন্টুকে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করলো সন্ত্রাসীরা।

পাকশীতে হত্যাকাণ্ড ছাড়াও গুলিবিদ্ধ, অংগহানী ও গুরুতর আহতের সংখ্যাও কম নয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সৌরভ হাসান টুনটুনির হাত কর্তন, ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মিরাজ হাসানকে ছুরিকাঘাত ও পিটিয়ে জখম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহসান হাবীব জিতুকে কুপিয়ে আহত, পাকশী কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সাধারণ সম্পাদক নয়নকে কুপিয়ে জখম, মুরাদ নামে এক যুবকের গলা কেটে তাঁর মোটর বাইক ছিনতাইয়ের চেষ্টা যেন পাকশীতে অপরাধ কর্মকান্ড যেন নিত্যনৈমত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে।

২০১৩ সালে ১৪ মার্চ সন্ধ্যায় পাকশী ওয়ার্ড যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিতু হোসেনকে সন্ত্রাসীরা পাকশী রিসোর্টের পাশে হত্যা করে।

২০১৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর পাকশী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম লাবলুকে (৩৫) কে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পাকশী লালন শাহ সেতু ও পাকশী রেলওয়ে স্টেশনের মাঝামাঝি স্থানে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন সেপ্টেম্বর তিনি মারা যান।

২০১৫ সালের ৪ অক্টোবর রাতে দুর্বৃত্তরা পাকশী পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই সুজাউল ইসলাম হত্যা করে ফেলে রেখে যায়। তার হাত-পা রশি ও চোখ গেঞ্জি দিয়ে বাঁধা ছিল। পরদিন ভোরে স্থানীয়রা লাশটি একটি হলুদের ক্ষেতে দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়।

২০১৬ সালের ১ মে নির্যাতনের পর গাছের সাথে বেঁধে শরীরে পেট্রোল ঢেলে ছালমা খাতুন (২৮) নামের এক গৃহবধূকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়। পরের দিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়।

২০১৭ সালের ২৩ মার্চ ডিশ লাইনের ব্যবসাকে কেন্দ্র করে পাকশী ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড যুবলীগের সহ-সভাপতি শাজাহানকে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষরা

২০১৭ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পাকশী পেপার মিল এলাকার ফুরফুরা শরীফ সড়কের পাশ থেকে গুলিবিদ্ধ অজ্ঞাত যুবকের হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

সর্বশেষ গত ১ এপ্রিল রাত সাড়ে ৮টায় রূপপুর মোড়ে পাকশী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি সদরুল আলম পিন্টুকে গুলি ও কুপিয়ে আহত করে সন্ত্রাসীরা। পরদিন ভোরে সে মারা যায়।

দেশের সর্বাধিক ব্যয়বহুল রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, ইপিজেড, রেলের বিভাগীয় কার্যালয়, প্রাচীন স্থাপত্য হার্ডিঞ্জ ব্রীজ, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর লালন শাহ সড়ক সেতুসহ গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি স্থাপনা রয়েছে পাকশীতে। এখানে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ফাঁড়ি রয়েছে।

এছাড়া নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বিজিবির অস্থায়ী ক্যাম্পও রয়েছে। পাশাপাশি দেশের সকল গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও এখানে সবসময় তৎপর রয়েছেন। এরপরও পাকশীতে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটতে থাকায় স্থানীয় জনগোষ্ঠির মধ্যে অশান্তি বিরাজ করছে।

(এসকেকে/এসপি/এপ্রিল ০৬, ২০১৮)