রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি : অবশেষে দীর্ঘ ৫ মাস পর কুড়িগ্রামের রাজারহাটে গৃহবধু বাসনা রানীর ভিসেরা ও ময়না তদন্ত রিপোর্ট থানায় এসেছে। রিপোর্টে লাশের শরীরে মারপিট ও পাকস্থলিতে কীটনাশক রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ফলে ৭এপ্রিল শনিবার রাজারহাট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে।

পুলিশ জানায়, উপজেলা নাজিমখান ইউনিয়নের রতিরাম পাঠানপাড়া গ্রামের প্রাণকান্তের কন্যা বাসনা রানী(২১) স্বামী চঞ্চল কুমার ও ভাসুর উজ্বল কুমারের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের কারনে স্বামীর বাড়ী রাজারহাট ইউনিয়নের তালতলা গ্রামে মারা যায়। বাসনা রানীর স্পর্শকাতর স্থানসহ সারা শরীরে বেধরক মারপিটের দাগ দেখা দেয়ায় তাকে ময়না তদন্তের জন্য কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়।

এ ব্যাপারে গত বছরের ১৪নভেম্বর হত্যার অভিযোগে মৃতের ভাই রাজারহাট থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করে। পুলিশ ময়না তদন্ত রিপোর্টের অপেক্ষায় এটিকে ইউডি মামলা হিসেবে দায়ের করে। ঘটনার ৫মাস পর ৭এপ্রিল শনিবার বাসনা রানীর ভিসেরা মহাখালী ও ময়না তদন্ত রিপোর্ট রাজারহাট থানায় চলে আসলে পুলিশ এটিকে হত্যা মামলা হিসেবে না নিয়ে কৌশলে স্বামী চঞ্চল রায়কে আসামি করে আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলা দায়ের করে।

মামলার পর থেকে অভিযুক্ত চঞ্চল কুমার পলাতক রয়েছে বলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা থানার সাব-ইন্সেপেক্টর নুরে আলম জানায়। উল্লেখ্য, বাসনা রানীর সাথে ৪ বছর পূর্বে একই উপজেলার রাজারহাট সদর ইউপির তালতলা গ্রামের চঞ্চল রায়ের বিয়ে হয়। এক প্রতিবেশীর সাথে মোবাইল ফোনে ম্যাসেজ ও কথা বলার অপরাধে স্বামী চঞ্চল, ভাসুর উজ্জলসহ পরিবারের লোকজন বাসনা রানীকে ভৎর্সনা করে বেদম মারপিট করে গুরুতর আহত করে বিনা চিকিৎসায় ঘরে আটকে রাখে। ফলে গত বছরের ১৩ নভেম্বর সোমবার রাতে বাসনা রানী মারা যায়।

বাসনা বিষপানে আত্মহত্যা করেছে প্ররোচনা চালিয়ে ওই রাতেই লাশ পুড়ে ফেলার সিন্ধান্ত নেয় স্বামীসহ স্বামীর বাড়ীর লোকজন। এ নিয়ে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। বিষয়টি মিটিয়ে ফেলতে সারারাত বাসনা রানীর বাবার বাড়ীর লোকজনের সাথে দফায় দফায় বৈঠক হলেও লাশ দাহ করা সম্ভব হয়নি। পরদিন মঙ্গলবার রাজারহাট থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য কুড়িগ্রাম মর্গে প্রেরণ করে। অবশেষে দীর্ঘ ৫মাস পর বাসনা রানীর লাশের মহাখালি থেকে ভিসেরা রিপোর্ট ও কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতাল থেকে ময়না তদন্ত রিপোর্ট রাজারহাট থানায় আসে। রিপোর্টে বাসনা রানীর শরীরে মারপিট ও পাকস্থলিতে বিষক্রিয়ার তথ্য রয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ হত্যার প্ররোচনা দেখিয়ে বাসনার স্বামী চঞ্চলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।

এ ব্যাপারে ৭এপ্রিল শনিবার রাজারহাট থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মোখলেসুর রহমান নিশ্চিত করে জানান, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ও ভিসেরা রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে আত্মহত্যার প্ররোচনায় ৩০৬ ধারায় মামলা নেয়া হয়েছে। বাসনার স্বামী চঞ্চলকে গ্রেফতার করতে পুলিশী তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।

(পিএমএস/এসপি/এপ্রিল ০৭, ২০১৮)