শরীয়তপুর প্রতিনিধি : শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার ১৯ নং লাউখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারি শিক্ষিকা তার স্বামী ও বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দ্বারা একই ব্যিালয়ের দুই শিক্ষিকার উপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে শনিবার থেকে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা ক্লাস বর্জন শুরু করেছে। ওই শিক্ষিকার অপসারণ দাবি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিচারের দাবিতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ও এলাকাবাসী বিদ্যালয় মাঠে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানোর পরও কোন ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্যোগ নেননি তিনি। অভিযুক্ত শিক্ষিকাকে স্কুল থেকে প্রত্যাহার করা না হলে কোন শিক্ষকই ওই বিদ্যালয়ে চাকুরী না করার ঘোষণা দিয়েছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা তাহমিনা আক্তার মুক্তা স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাব খাঁটিয়ে দীর্ঘদিন যাবত বিদ্যালয়ের নিয়ম-শৃংখলা বিরোধী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিল। গত ২৪ মার্চ শিক্ষিকা তাহমিনা আক্তার মুক্তার অপসারণ দাবি করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অরুণ কুমার শীল, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আইউব খান, বিদ্যালয়ের ১০ জন সহকারি শিক্ষক, পরিচালনা কমিটির সকল সদস্য, অভিভাবক, এলাকার জনপ্রতিনিধিসহ অর্ধশতাধিক লোকের স্বাক্ষর সম্বলিত একটি অভিযোগ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবরে প্রেরণ করেন।

দরখাস্তের কথা জানতে পেরে গত ৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার শিক্ষিকা মুক্তা তার স্বামীকে ফোন করে বিদ্যালয়ে ডেকে আনেন। মুক্তার স্বামী সানজিদ মাহমুদ সুজন তার সহযোগীদের নিয়ে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেই অকথ্য ভাষায় দরখাস্তকারিদের গালাগালি শুরু করে। এ সময় সহকারী শিক্ষিকা সায়লা শারমিন ও সুরাইয়া ইয়াসমিন এগিয়ে আসার সাথে সাথে বাঁশের লাঠি দিয়ে তাদের উপর আঘাত করে সুজন।

এ ঘটনার পর থেকে চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন ওই বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষিক ও শিক্ষার্থীরা। সকল শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা শনিবার সকালে বিদ্যালয়ে এসে বিক্ষোভ করে শিক্ষিকা মুক্তার অপসারণ দাবীতে মিছিল করে। কোন শিক্ষক এদির বিদ্যালয়ে পাঠদানে অংশগ্রহন করেননি। শিক্ষার্থী, অভিভাবকও কর্মরত সকল শিক্ষকরা দাবি করেছেন, তাহমিনা আক্তার মুক্তাকে ১৯ নং লাঊখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে অপসারণ করা না হলে সকল শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই বিদ্যালয়ের কয়েকজন সহকারী শিক্ষিকা বলেন, একের পর এক অনিয়ম করে পার পেয়ে যাচ্ছে অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষিকা তাহমিনা আক্তার মুক্তা। তার অত্যাচারে আমরা সকল শিক্ষকরা অতিষ্ট। সহকর্মীদের সাথে ঝগড়া-ঝাঁটি করা, শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করা, প্রধান শিক্ষককে হুমকি দেয়া মুক্তা ম্যাডামের জন্য এখন নিয়মে পরিনত হয়েছে। শিক্ষা বিভাগ ও শিক্ষক সমিতির একাধিকবার সালিশ-বৈঠক করেও ওই শিক্ষিকাকে দমাতে পারেনি।

তিনি বলেন, ইতিমধ্যে সহকারী শিক্ষক মোর্শেদ হোসেন ও মোদাচ্ছের মিয়াকে শারিরীক নির্যাতন করে মুক্তা। এমনকি তাদের জুতা পেটা করার মত অমার্জণীয় অপরাধও করেছে মুক্তা ম্যাডাম। মুক্তার অপমনের কোন বিচার না পেয়ে ডেপুটিশনে অন্যত্র চলে গেছেন নির্যাতিত দুইজন পুরুষ শিক্ষক। নিজের সম্মান রক্ষা করতে সহকারী শিক্ষিকা আকলীমা আক্তারও চলতি মাসে বদলী হয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ রক্ষা করেত এবং মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে সহকারী শিক্ষিকা আহমিনা আক্তারের অপসারণ দাবিতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবরে বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক ও এসএমসি কমিটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছি। আশা করি শিক্ষা কর্মকর্তা ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসবেন।

অভিভাবক মিনহাজ সরদার বলেন , তাহমিনা আক্তার মুক্তা এই বিদ্যালয়ে আসার পর থেকেই প্রভাব খাটিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করে চলেছে। তার হাতে অনেক শিক্ষকও লাঞ্চিত হয়েছে। সর্বশেষ গত ৫ এপ্রিল তার স্বামী এসে স্কুলে হামলা করে দুইজন নারী শিক্ষককে লাঞ্ছিত করে। আমরা চাই এখান থেকে হয় মুক্তাকে সড়ানো হোক আর না হয় অন্য সকল শিক্ষকদের বদলি করে দেয়া হোক।

প্রত্যক্ষদর্শী স্কুলের দপ্তরি বেলায়েত ও স্থানীয় যুবক শাহিদ সরদার বলেন, মুক্তা ম্যাডামের স্বামী বাশেঁর লাঠি নিয়ে স্কুল অফিসের ভেতর ঢুকে যায়। এসময় তিনি লাঠি দিয়ে কক্ষের দরজায় আঘাত করে। আমরা তার হাত থেকে বাশেঁর লাঠি ছিনিয়ে নিয়ে তাকে নিবৃত করি।

সহকারী শিক্ষিকা সুরাইয়া ইয়াসমিন বলেন, মুক্তার স্বামী একটা মোটা বাশঁ নিয়ে অকথ্য ভাষায় বকাবকি করতে করতে সায়লা ম্যাডামের দিকে এগিয়ে আসে। সায়লার মাথায় সে আঘাত করলে আমি প্রতিহত করতে গিয়ে নিজে আঘাতপ্রাপ্ত হই। আমরা মুক্তার এই অত্যাচার আর সহ্য করতে পারছিনা। এখান থেকে মুক্তাকে দ্রুত সড়িয়ে নেয়া হোক, আর না হয় আমাদের সকলকে বদলি করে দেয়া হোক।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাহমিনা আক্তার মুক্তা বলেন, এ ঘটনার সাথে আমরা জরিত নই। এটা আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।

প্রধান শিক্ষক অরুন কুমার শীল বলেন, বৃহস্পতিবার ছুটিতে ছিলাম। অনাকাংখিত ঘটনাটির কথা অন্যান্য শিক্ষক ও অভিভাবকদের কাছে শুনেছি। তাহমিনা ম্যাডামের আচরন সংযত করার জন্য ইতোমধ্যে একাধিকবার সতর্ক করা হয়েছে। তার কোন পরিবর্তণ না হওয়ায় এসএমসি কমিটি ও সকল শিক্ষক স্বাক্ষরিত একটি দরখাস্ত জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবরে দেয়া হয়েছে। আমি এই বিদ্যালয়ের সার্বিক স্বার্থে তাহমিনার বিরুদ্ধে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে জোর অনুরোধ করছি।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি সভাপতি আইয়ুব খান বলেন, শিক্ষিকা তাহমিনা তার স্বামীকে ডেকে এনে অমার্জণীয় অপরাধ করেছে। আমরা তার অপসারণের দাবিতে অনেক আগেই দরখাস্ত করেছি। শিক্ষা বিভাগ সময়মত ব্যবস্থা নিলে বৃহস্পতিবার এমন ঘটনা ঘটতনা। আমি চাই বিদ্যালয়ের সুনাম অক্ষুন্ন রাখতে অতি তারাতারি মুক্তাকে এখান থেকে সড়িয়ে নেয়া হোক।

শরীয়তপুর জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিষয়টি দ্রুত দেখার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। তিনি শনিবার ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে বিস্তারিত অবগত হয়েছেন। একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রবিবার থেকে তদন্ত কমিটি বিষয়টি নিয়ে কাজ করবে। প্রতিবেদন হাতে পেলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করব।

(কেএনআই/এসপি/এপ্রিল ০৭, ২০১৮)