স্টাফ রিপোর্টার : প্রতি বছরের পহেলা অগ্রহায়ণকে ‘নবান্ন উৎসব’ হিসেবে ঘোষণা এবং দিবসটিকে উদযাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আগামীকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অনুমোদনেরর জন্য উপস্থাপন করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

প্রস্তাবনায় বলা হয় ‘প্রতি বছরের পহেলা অগ্রহায়ণকে 'নবান্ন উৎসব' হিসেবে ঘোষণা এবং দিবসটিকে উদযাপনের লক্ষ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এ বিষয়ক পরিপত্রে 'ক' ক্রমিকে তা অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হচ্ছে’।

জানা গেছে, ১৯৯৮ সাল থেকে ঢাকা শহরে আনুষ্ঠানিকভাবে নবান্ন উৎসব উদযাপন শুরু হয়। জাতীয় নবান্নোৎসব উদযাপন পর্ষদ প্রতিবছর পহেলা অগ্রহায়ণ নবান্ন উৎসব উদযাপন করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ও ধানমণ্ডির রবীন্দ্র সরোবরের মুক্তমঞ্চে পালিত হয় এই নবান্ন উৎসব।

উল্লেখ্য, নবান্ন গ্রাম বাংলার একটি ঐতিহ্যবাহী শস্যোৎসব। বাংলার কৃষিজীবী সমাজে শস্য উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে যে সব আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব পালিত হয়, নবান্ন তার মধ্যে অন্যতম। ‘নবান্ন’ শব্দের অর্থ ‘নতুন অন্ন’। নবান্ন হল নতুন আমন ধান কাটার পর সেই ধান থেকে প্রস্তুত চালের প্রথম রান্না উপলক্ষে আয়োজিত উৎসব।

সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসে আমন ধান পাকার পর এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। কোথাও কোথাও মাঘ মাসেও নবান্ন উদযাপনের প্রথা রয়েছে। নবান্ন অনুষ্ঠানে নতুন অন্ন পিতৃপুরুষ, দেবতা, কাক ইত্যাদি প্রাণিকে উৎসর্গ করে এবং আত্মীয়-স্বজনকে পরিবেশন করার পর গৃহকর্তা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা নতুন গুড়সহ নতুন অন্ন গ্রহণ করেন।

নবান্ন উৎসব হিন্দুদের একটি প্রাচীন প্রথা। হিন্দুশাস্ত্রে নবান্নের উল্লেখ ও কর্তব্য নির্দিষ্ট করা রয়েছে। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, নতুন ধান উৎপাদনের সময় পিতৃপুরুষ অন্ন প্রার্থনা করে থাকেন। এই কারণে হিন্দুরা পার্বণ বিধি অনুযায়ী নবান্নে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করে থাকেন। শাস্ত্রমতে, নবান্ন শ্রাদ্ধ না করে নতুন অন্ন গ্রহণ করলে পাপের ভাগী হতে হয়।

অতীতে গ্রাম বাংলায় অত্যন্ত সাড়ম্বরে নবান্ন উৎসব উদযাপন হত। তখন নবান্ন উৎসব সবার কাছে সবচেয়ে অসাম্প্রদায়িক উৎসব হিসেবে সমাদৃত ছিল। কালের বিবর্তনে গ্রাম বাংলায় ঐতিহ্যবাহী এই নবান্ন উৎসব বিলুপ্তপ্রায়। তবে এখনও বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের কিছু কিছু এলাকায় নবান্ন উৎসব উৎসব মুখর পরিবেশে উদযাপিত হয়।

(ওএস/এসপি/এপ্রিল ০৮, ২০১৮)