স্টাফ রিপোর্টার : কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা হামলা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাকে রণক্ষেত্রে পরিণত করেছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।

সোমবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘আমরা জানি এদেশকে সত্যিকার অর্থে গড়ে তুলতে হলে মেধার কোনো বিকল্প নেই। এই লক্ষ্যে স্থির থেকেও আমরা সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো বিবেচনায় এনে যৌক্তিকভাবে ভিশন ২০৩০-এ বলেছি যে, মেধার মূল্যায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোটার যথাযথ সংস্কার করা হবে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, নারী এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠি ব্যাতিরেকে বাকি কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হবে। সরকার এ বিষয়টি দুই বছর আগে বিবেচনায় নিলে আজ এই পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটতো না’।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থী ও চাকুরি প্রার্থীরা বেশ কিছুদিন যাবৎ আন্দোলন করছে। যে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয়ে নিজেদের বঞ্চিত মনে করলে তা থেকে প্রতিকার পাওয়ার জন্য সোচ্চার হবেন এটাই গণতান্ত্রিক অধিকার’।

তিনি বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরে চলমান কোটা সংস্কারের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন গতকাল প্রতিবাদে বিক্ষোভে মুখর হয়ে ওঠে। হাজার হাজার আন্দোলনকারীকে দমাতে গতকাল (রোববার) রাতে পুলিশ সহিংস হয়ে ওঠে এবং তাদের ওপর বেপরোয়া লাঠিচার্জ, টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে’।

তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশের এই হামলায় অসংখ্য ছাত্রছাত্রী ও চাকুরীপ্রার্থীসহ শতাধিক মানুষ গুরুতর আহত হয়। পুলিশের এই হামলার সঙ্গে ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা যোগ দিয়ে রাতে শাহবাগ এলাকা থেকে শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা পর্যন্ত রণক্ষেত্রে পরিণত করে’।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আন্দোলনে যে কোটার বিষয়টি মূল প্রতিপাদ্য তার সঙ্গে দেশের প্রায় ৪ কোটি শিক্ষিত মানুষের জীবন জীবিকা জড়িত। এ নিয়ে বিএনপির নীতি নির্ধারণী কমিটি সম্পূর্ণ অবহিত এবং উৎকণ্ঠিত। ফলশ্রুতিতে ইতোপূর্বে বিএনপির ভিশন-২০৩০ প্রণয়ন। তাতে আমরা কোটার বিষয়টি স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করেছি’।

সরকার বিরোধী এই নেতা বলেন, ‘গণতন্ত্রের নিয়মের প্রতি এই সরকারের শ্রদ্ধা নেই। যা গত প্রায় এক দশকে বর্তমান সরকার তাদের কার্যক্রমে বার বার প্রমাণ করেছে। বর্তমান শাসকদের অন্যায় অবিচারের শিকার হয়েছে দেশের মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা। এই অবিচারের অবসান ঘটাতে বিএনপি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ’।

তিনি বলেন, ‘গতকাল (রবিবার) চাকরি প্রার্থী শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি আদায়ের আন্দোলনে বিনা উস্কানিতে বর্বোরোচিত আক্রমণের আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। যারা গুরুতর আহত হয়েছে তাদের আশু সুস্থতা কামনা করছি এবং যারা গ্রেফতার হয়েছে অবিলম্বে তাদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি’।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘উদ্ভুত পরিস্থিতিতে অত্যন্ত দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির বক্তব্য জাতির সামনে তুলে ধরাটা আমদের কর্তব্য মনে করছি। সেই জন্য আজকের এই প্রেস কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়েছে’।

আপনারা কি আন্দোলনে সমর্থন জানাচ্ছেন? প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা তো আমাদের বক্তব্যে স্পষ্ট করে বলেছি। এখানে অস্পষ্টতা আছে বলে আমি মনে করি না’।

সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহামুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমান, শামসুজ্জামান দুদু, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাক মো. সেলিমুজ্জামান সেলিম, আব্দুস সালাম আজাদ, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক এম ওবায়দুল ইসলাম, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন প্রমুখ।

(ওএস/এসপি/এপ্রিল ০৯, ২০১৮)