স্টাফ রিপোর্টার : সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলনের সমর্থনে সামাজিক মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে অযাচিত মন্তব্য করা হচ্ছে, তা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু্।

মন্ত্রী বলেছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের ৯০ শতাংশের বেশি অতি সাধারণ কৃষক বা কৃষক পরিবারের সন্তান। তারা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষ। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে তাদের প্রায় সবাই ক্ষতিপ্রস্ত হয়েছেন। আর্থিকভাবে আরও প্রান্তিক হয়েছেন, পিছিয়ে পড়েছেন। সেই মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারকে পিছিয়ে পড়া আর্থ-সামাজিক অবস্থান থেকে একটু টেনে তোলার জন্য মুক্তিযোদ্ধা কোটা রাখা হয়েছে।

মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন তথ্যমন্ত্রী।

প্রতিটি রাজনৈতিক সরকারের আমলের শেষ বছরে সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আন্দোলন হয়ে আসছে। শুরুতে আন্দোলনকারীরা সরাসরি মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের দাবিতে রাস্তায় নামার পর বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় পিছু হটেছে। তবে এবার আন্দোলন শুরু হয়েছে কোটা সংস্কারের কথা বলে।

তবে বিভিন্ন কর্মসূচি এবং সামাজিক মাধ্যমে এই আন্দোলনের সমর্থকরা কেবল মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য কোটার বিষয়টি তুলে ধরে নানা বক্তব্য রাখছেন। কখনও কখনও এসব বক্তব্য মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অপমানসূচকও হয়ে পড়ে।

বিষয়টি নজরে পড়েছে তথ্যমন্ত্রীরও। তিনি বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়েই কি মূল আপত্তি? কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীরা কোটা পদ্ধতি সংস্কারের সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাব না দিলেও বিভিন্ন ব্যক্তি মহল পত্র-পত্রিকা, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে সকল বক্তব্য দিচ্ছেন তা দেখে মনে হয়, মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়েই তাদের আপত্তি।’

‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা তাদের গায়ে জ্বালা ধরিয়েছে। তারা কোটা পদ্ধতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের এমন ভাষায় অসম্মান ও হেয়প্রতিপন্ন করে চলেছেন যে, মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধ করে অন্যায় করে ফেলেছেন।’

‘দেশের সব নাগরিকের রাষ্ট্রের কাছে চাওয়া-পাওয়া থাকলেও মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রের কাছে কোনো চাওয়া পাওয়া থাকতে পারবে না। ওই সকল ব্যক্তি মহল শুধু মুক্তিযোদ্ধাদেরই নয়, মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়েও চরম অবমাননাকর কটূক্তি করে চলেছেন।’

সাধারণ মেধাতালিকা থেকে আরও বেশি নিয়োগের দাবিতে আন্দোলনকারীরা কোটায় নিয়োগপ্রাপ্তদের অযোগ্য এবং অমেধাবী দাবি করছেন। এ বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটায় যারা নিয়োগ লাভ করছেন, তারা কি মেধার প্রতিযোগিতা সম্পূর্ণটাই পাস কাটিয়ে এ সুযোগ নিচ্ছেন? তাদেরও মেধার প্রতিযোগিতা ও ন্যূনতম মেধার যোগ্যতা অর্জন করেই চাকুরি পেতে হচ্ছে।’

‘মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ সব কোটার প্রার্থীদের আলাদা পরীক্ষা নয় সবার সাথে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। আমরা তাই মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিরোধিতার নামে মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করা এবং মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অসম্মানজনক কথাবার্তা বলা বন্ধ করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’

কোটা চিরস্থায়ী ব্যবস্থা নয়

কোনো কোটা চিরস্থায়ী নয় জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সময়ের প্রয়োজনে কোটা পদ্ধতির প্রয়োগ পরিবর্তন হয়েছে।

‘কোটা পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, মূল্যায়ন, পুণ:মূল্যায়ন, সংস্কার হয়েছে, ভবিষ্যতেও হতেই পারে।’

‘বর্তমান সরকারের কোটা পদ্ধতি চালু করেনি। বরং শেখ হাসিনার সরকার কোটা পদ্ধতি প্রয়োগের বিষয়টি সুস্পষ্টকরণ ও যৌক্তিকিকরণের পদক্ষেপ নিয়েছে।’

আন্দোলনে তৃতীয় পক্ষের উস্কানি

কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে তৃতীয় পক্ষ ঢুকে পড়েছে বলেও মনে করেন তথ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ, সড়ক-মহাসড়ক অবরোধসহ যে সহিংসতা-নাশকতা-অন্তর্ঘাত হয়েছে তা সাধারণ ছাত্র-চাত্রীদের কাজ বলে আমরা বিশ্বাস করি না।’

‘সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে যারা দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করতে চায়, যারা জল ঘোলা করে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে চায় তারাই এসব করেছে।’

বিএনপি উস্কানিদাতা

ছাত্রদের আন্দোলনে বিএনপি উস্কানি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তথ্যমন্ত্রী।

বলেন, ‘কোটা সংস্কারের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্যে যখন সহিংসতা-নাশকতা-অন্তর্ঘাত শুরু হয় তখনও বিএনপি শান্তির আহ্বান না জানিয়ে প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়ে উস্কানি দিয়েছে। তাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে যে নাশকতা-অন্তর্ঘাতের উস্কানি আছে তা বুঝতে অসুবিধা হয় না।’

‘বিডিআর বিদ্রোহেরসময় বেগম জিয়া প্রকাশ্যে বিদ্রোহীদের উস্কানি দিয়েছেন। হেফাজতের তাণ্ডবের সময়ও বেগম জিয়া প্রকাশ্যে তাদের পক্ষে উস্কানি দিয়েছেন।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নিহতের গুজব ছড়িয়ে উপাচার্য বাসভবনে হামলা নিয়েও কথা বলেন ইনু। বলেন, উস্কানিদাতারা লাশ এর গুজব ছড়িয়ে ছাত্রছাত্রীদের সহিংসতার দিকে ঠেলে দিতে চেয়েছিল।

‘উস্কানিদাতারা লাশ চেয়েছিল। লাশ ফেলতে চেয়েছিল। আল্লাহর কাছে হাজার শোকর তাদের ইচ্ছার পূরণ হয়নি। তারা লাশ পায়নি, লাশ ফেলতে পারেনি।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খালেদা জিয়ার মত অন্ধ ও বধির না। বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকাকালে বা ক্ষমতার বাইরে থাকাকালেও জনগণের কথা শুনতে পেতেন না, জনগণের দুঃখ, আহাজারি দেখতে পেতেন না। তিনি চোখে ঠুলি, কানে তুলো দিয়ে চলেন। কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সারাক্ষণই জনগণের দিকে তাকিয়ে থাকেন।’

‘তিনি জনগণের মনের কথাও শুনতে পান। জনগণের দুঃখে কাঁদেন, জনগণের সুখে হাসেন। এজন্যই আমাদের প্রধানমন্ত্রী কোটা সংস্কার নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনের মধ্যে এত সহিংকতা-নাশকতা-অন্তর্ঘাত হবার পরও তার পক্ষ থেকে সড়ক ও সেতুমন্ত্রীকে আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীদের সাথে বসে খোলামেলা কথা বলে তাদের বক্তব্য দাবি শোনার নির্দেশ দিয়েছেন এবং কোটা পদ্ধতি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখারও নির্দেশ দিয়েছেন।’

(ওএস/এসপি/এপ্রিল ১০, ২০১৮)