খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি : খাগড়াছড়িতে উৎসব মুখর পরিবেশে পালিত হচ্ছে পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর প্রধান ও বৃহৎ সামাজিক উৎসব বৈসাবি। আজ উৎসবের দ্বিতীয় দিনে চাকমাদের মূল বিজু চলছে। আর ত্রিপুরাদের চলছে গ্রামে গ্রামে গরয়া নৃত্যের সুর ঝংকার আর পাহাড় চূড়ার ‘দেবতাপুকুর’-এ পুজা অর্চনা। ঘরে ঘরে পাঁচনের সুবাস। 

বৈসাবিকে ঘিরে খাগড়াছড়ি এখন পরিণত হয়েছে পাহাড়ি-বাঙ্গালী মিলন মেলায়। ঘরে ঘরে চলছে অতিথি আপ্যায়ন। নতুন পোষাকে আদিবাসী তরুণ-তরুণীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে পাড়ায় পাড়ায়। দেবতা পুকুরে বসেছে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর মেলা।

আজ শুক্রবার বৈসাবি উৎসবের দ্বিতীয় দিনে খাগড়াছড়ি’র মহালছড়ির মাইচছড়িতে পাহাড়ের প্রায় ১ হাজার ফুট চূড়ায় অবস্থিত দেবতা পুকুরে পাদদেশে বসেছে (ত্রিপুরা ভাষায় যা মাতাই পুখরী) ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর মেলা। সকাল থেকে হাজার-হাজার ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণী দেবতা পুকুরে সমবেত হচ্ছে। চারদিকে মালভূমি দ্বারা পাহাড় বেষ্টিত হওয়ায় দেবতা পুকুরকে সমতল ভূমি মনে হয়।

সবচেয়ে আচর্যের বিষয় হচ্ছে, এ পুকুরের পানি কখনো কমে না। ত্রিপুরাদের বিশ্বাস এইদিনে পাহাড় চূড়ায় অবস্থিত পুকুরে স্নান করে দেবতাকে পূজা করলে বিশেষ মনোবাসনা পূরণ হয়। এ সময় ঘরে থাকা পরিবারের অন্যরা বুনোফুলের মালা দিয়ে ঘর সাজান পরিপাটি করে।

এ ছাড়া ত্রিপুরাদের হারিবৈসু উপলক্ষে গ্রামের পর গ্রামে চষে বেড়াচ্ছেন, বিশেষ নাচের দল ‘গরয়া’। একেকটি দলে ৫০ থেকে ৬০ জনের নৃত্যশিল্পীরা পাহাড়ী জনপদে ঢোল আর বাঁশির সুরে ছড়িয়ে দিচ্ছেন ঐতিহ্যদীপ্ত ঝংকার। আবার কেউ কেউ পূণ্যার্জনের লক্ষ্যে পাড়ি জমান জেলা সদরে নুনছড়িতে অবস্থিত তীর্থস্থান ‘দেবতাপুকুর’-এ।

বৈসাবি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর উৎসব হলেও এ অঞ্চলের বাংলা ভাষাভাষীরাও উৎসবের আনন্দ একাকার হয়ে উপভোগ করছে।

আর মারমা গ্রামে চলছে লুপ্তপ্রায় খেলাধুলা। কাল থেকে শুরু হবে মারমাদের ‘সাংগ্রাই’ উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।

বৈসাবি মানেই রঙে বর্ণে বৈচিত্র্যময় এক সাংস্কৃতিক উৎসব। বিজু-সাংগ্রাই-বৈসু, যে নামেই বলা হোক না কেনো, এই উৎসব যেনো পাহাড়ীদের প্রেরণা-পাহাড়ের জাগরণ। বংশ পরম্পরায় পালিত এ উৎসবের সাথে আধুনিকতার ছোঁয়া আর বাংলার মিশেলে বৈসাবি হয়ে উঠেছে সার্বজনীন অন্য এক পাহাড়িয়া উৎসবে।

(ওএস/এসপি/এপ্রিল ১৩, ২০১৮)