জে জাহেদ, চট্টগ্রাম : কর্ণফুলীতে চর্তুথ শ্রেণীর এক ছাত্রীর বাল্য বিবাহ নিয়ে স্থানীয় কাজী ও অভিভাবকেরা লুকোচুরি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। মহা ধুমধামে বাল্য বিবাহ সম্পন্ন হয়েও স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টির কিছুই টের পায়নি।

জানা গেছে, গত ৬ই এপ্রিল শুক্রবার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের ৫নং খোয়াজনগর এলাকার মীর আহম্মেদ মাস্টারের বাড়ির শাহজান মিয়ার ৪র্থ শ্রেণীর স্কুল পড়ুয়া ছাত্রী ফারহানা আক্তার (১২) এর সাথে বিবাহ হয়। একই গ্রামের মহিউদ্দিন নামে এক যুবকের সাথে।

অনুষ্ঠানে বাল্য বিবাহ সম্পন্ন করতে উভয়ের অভিভাবকগণ উপস্থিত ছিলেন বলে সুত্রে নিশ্চিত করেছে। তবে কাজী অফিসে না করে বিয়ে পরিয়েছে মইজ্জারটেক কোন এক দোকানে এমনটি অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তথ্যমতে জানা যায়, মেয়ের বাড়িতেই বিয়ের ব্যবস্থা করা হলে গ্রামের মানুষেরা বাল্য বিবাহ আইনত অপরাধ এ কথা শুনালে। পরে চরপাথরঘাটা ইউনিয়নে অবস্থিত এক কাজীর কৌশলে বিয়েটি সম্পন্ন হয় বলে জানা যায়।

এ নিয়ে স্কুলের ছাত্রছাত্রী ও এলাকার মানুষের মাঝে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে। কেননা বর কণে সাজানো মেয়েটা এখনো খোয়াজনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী বলে নিশ্চিত করেছেন স্কুলের সহকারি শিক্ষিকা আইরিন আকতার।

এ প্রসঙ্গে স্কুলের সভাপতি ইন্জিনিয়ার ইসলাম আহমেদ জানান, তিনিও জেনেছেন চরপাথরঘাটার কথিত কামরুল নামক এক কাজী অফিসে বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে। যা কাজী স্বীকার নাকি গড়িমসি করছে স্বীকারে।

এ বিষয়ে মেয়ের বাবার সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি গনমাধ্যমকর্মীদের সাথে কোন কথা বলতে রাজি হননি। কিন্তু অন্যদিকে আমাদেও প্রতিবেদক কাজী শরফুদ্দীন মোঃ সেলিমের অফিসে যোগাযোগ করে বাল্য বিবাহ বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি সম্পুর্ণ অস্বীকার করে বসেন। তার সরকারি নিকাহ্ নিবন্ধনে এধরনের কোন বিয়ে সম্পাদন হয়নি বলে।

এক প্রকার লুকোচুরি খেলা শুরু করে কথিত কাজী ও বিবাহ পড়ানো সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। দীর্ঘদিন যাবৎ এই কাজির বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।

সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার অনেক জায়গা ও বাজারের মোড়ে মোড়ে শরফুদ্দীন সেলিম ভুয়া কাজী বলে লিপলেট লাগানো। অথচ বিষয়টি পুলিশ ও দেখছেনা।

বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা জেলা নিকাহ্ রেজিস্ট্রার অফিসে যোগাযোগ করলে জেলা অফিসও স্পষ্ট ভাবে জানাতে পারেনি। চরপাথরঘাটা ইউনিয়নে কে বৈধ আর কে অবৈধ কাজী!! এ নিয়ে ধুম্রজাল রয়েছে।

এতে এলাকার চেয়ারম্যান, মেম্বার ও নিরীহ মানুষেরা বর্তমানে বিবাহ পড়া নিয়ে খুব বিভ্রান্তিতে পড়েছে।

অন্যদিকে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রীর বাল্য বিবাহ নিয়ে কাজীর লুকোচুরিসহ স্থানীয়দের কাছ থেকে নানা অভিযোগ ওঠেছে, চরপাথরঘাটার কাজী শরফুদ্দীন সেলিমের অফিসটি নাকি রোহিঙ্গা ও বাল্য বিবাহের নিরাপদ আস্তানা। দীর্ঘদিন ভুয়া কাগজে বিবাহ পড়ানোর মতো গুরুত্বর অভিযোগ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে এলাকাবাসী উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। নাহয় যেকোন মুহুর্তে ঘটতে পারে অনাকাংখিত ঘটনা। এমন আশংকা স্বয়ং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের।

সবচেয়ে অবাক করা বিষয়, গত সপ্তাহে খোয়াজনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্ণফুলী উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত হয়ে মাদক, যৌতুক, বাল্য বিবাহসহ যৌন নিপীড়ন ও ইভটিজিং মুক্ত সুন্দর সমাজ নির্মানে জনসচেতনতামূলক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছিলো।

অথচ একই স্কুল থেকে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী ফারহানার বিয়ে হলে এলাকার মানুষে নানা মন্তব্য করতে শোনা যায়। সর্ষেই নাকি ভূত বসে রয়েছে। যদিও সর্বৈব অস্বীকার করে কথিপয় কাজী।

(জেজে/এসপি/এপ্রিল ১৪, ২০১৮)