হুমায়ূন কবীর জীবন, কুমিল্লা : কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের জগমোহনপুর এলাকায় যাত্রীবাহী নৈশকোচে পেট্রোল বোমা হামলায় ৮ জন যাত্রী হত্যা মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন নিম্ন আদালত না মঞ্জুর করায় কুমিল্লা জেলা জজ আদালতে অন্তর্বতী জামিনের আবেদন জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।

আদালত অন্তর্বতী জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে আগামী ২৩ এপ্রিল তা শুনানীর জন্য দিনধার্য্য করেছেন। সোমবার দুপুরে কুমিল্লা জেলা জজ আদালতে বিজ্ঞ বিচারক বেগম জেসমিন আরা এ আদেশ দেন।

খালেদা জিয়ার আইনজীবী কাইমুল হক রিংকু ও নাজমুস সাদাত জানান, আদালতে বিএনপি চেয়ারপার্সনের অন্তবর্তী জামিনের আবেদন চাওয়া হয়েছে, সেটি না মঞ্জুর করে ২৩ এপ্রিল শুনানীর জন্য দিন ধার্য্য করেছেন আদালত। আমরা কৌশলগত কারণে অন্তর্বতী জামিন চেয়েছি যাতে পুর্ণাঙ্গ শুনানীর দিন তাড়াতাড়ি পাই।

এর আগে গত ১০ এপ্রিল কুমিল্লার ৫ নং আমলি আদালতের বিচারক কুমিল্লার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাইন বিল্লাহ পেট্রোল বোমা হামলায় ৮ জন যাত্রী হত্যা মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন না মঞ্জুর করেন । বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বিষয়টি সে দিন নিশ্চিত করে বলেছিলেন, জেলা জজ আদালতে এ মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন চাওয়া হবে।

বাসে পেট্রলবোমা হামলায় ৮ জন যাত্রী হত্যা মামলায় ঢাকার কারাগারে থাকা বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে আদালতে উপস্থাপনের জন্য জারি করা প্রজেকশন ওয়ারেন্ট প্রত্যাহার ও জামিন আবেদনের শুনানি ২৮ মার্চ নির্ধারণ করেছিল আদালত। কুমিল্লার ৫নং আমলী আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারক মো: মুস্তাইন বিল্লা ঐ আদেশ দিয়েছিলেন।

তবে সেদিন বিএনপি নেত্রীকে আদালতে হাজির না করায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষকে কারণ দর্শাতে বলেন কুমিল্লা ৫ নং আমলি আদালতের বিচারক কাজী আরাফাত। আর বিএনপি নেত্রীকে সেদিন হাজির না করায় খালেদা জিয়ার হাজিরা পরোয়ানা প্রত্যাহার ও জামিন আবেদনের ওপর শুনানি হয়নি। এরপর ৮ এপ্রিল এই দুই আবেদনের ওপর শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেছিল বিচারক।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি রাত আনুমানিক সাড়ে তিনটার দিকে কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী আইকন পরিবহনের একটি বাস কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগমোহনপুর এলাকায় আসামাত্র দুর্বৃত্তরা পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে। এতে ঘটনাস্থলে সাতজন ও হাসপাতালে নেওয়ার দুদিন পর আরও একজনসহ মোট আটজন মারা যান ও ২৭ জন আহত হন।

এ ঘটনায় ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে চৌদ্দগ্রাম থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নুরুজ্জামান হাওলাদার বাদী হলে দন্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলা তদন্ত করেন চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই মো. ইব্রাহিম।

২০১৭ সালের ৬ মার্চ কুমিল্লার আদালতে এই মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এতে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার, রফিকুল ইসলাম মিয়া, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও সালাউদ্দিন আহমেদ, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ ও বিএনপির উপদেষ্টা সাবেক সাংসদ মনিরুল হক চৌধুরী, চৌদ্দগ্রামের জামায়াতের সাবেক সাংসদ সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের আমির সাহাবউদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. মিজানুর রহমান, চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমির শাহজাহান, চিওড়া ইউনিয়ন জামায়াতের সাবেক আমির ও ক্যাডার মেজবাহ উদ্দিন ওরফে নয়ন, চৌদ্দগ্রাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামরুল হুদাসহ ৭৮ জনের নামে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। খালেদা জিয়া মামলার ৫১ নম্বর আসামি।

(এইচকেজি/এসপি/এপ্রিল ১৬, ২০১৮)