শরীয়তপুর প্রতিনিধি : হত দরিদ্রদের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির আওতায় ১০ টাকা কেজি দরের চাল কালো বাজারে বিক্রি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আওয়ামীলীগ নেতা ডিলার মোনায়েম খানের বিক্রি করা ৭ বস্তা চাল খাদ্য বিভাগের লোকেরা ৫টি বাড়ি থেকে জব্দ করেছে। এ নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

শরীয়তপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার ডোমসার বাজারে ১০ টাকা কেজি দরের চাল বিক্রির ডিলার ডোসমার ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম খান। তিনি বুধবার নির্ধারিত হত দরিদ্র কার্ডধারীদের কাছে চাল বিক্রি না করে অধিক মূল্যে বাহিরে বিক্রি করছে।

ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ কার্যালয় ও ডোমসার ইউপি চেয়ারম্যান চানমিয়া মাদবরের ক্লাব বলে পরিচিত চাল বিক্রির দোকানটি বিতরনের নির্ধারিত দিনে বন্ধ রাখেন ডিলার মোনায়েম খান। বুধবার সকালে কার্ডধারি দরিদ্র লোকেরা চাল নিতে এসে দোকান বন্ধ পেয়ে ফিরে যায় তারা। দুপুর ১টার পরে ঘর খুলে ডিলার মোনায়েম অধিক দরে চাল বিক্রি করে গ্রামবাসীর কাছে।

কালো বাজারে চাল বিক্রির খবর জানাজানি হলে বুধবার বিকেলে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বিয়য়টি অবহিত করেন এলাকাবাসী। সন্ধ্যার পর আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা ও খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা গিয়ে কোয়ারপুর গ্রামের ছোয়াব আলী নলীর বাড়ি থেকে খাদ্য মন্ত্রনালয়ের সীলমোহর যুক্ত ৫০ কেজি ওজনের ২ বস্তা চাল, আমির হোসেন ফকিরের বাড়িতে ১ বস্তা, বশীর খাঁর বাড়িতে ১ বস্তা, ইউনুছ হাওলাদারের বাড়িতে ১ বস্তা ও মোহাম্মদ আলী চৌকিদারের বাড়ি থেকে ২ বস্তা মোট ৭ বস্তা চাল জব্দ করেন। এসময়, অবৈধভাবে চাল ক্রেতাদের স্বীকারোক্তিমূলক লিখিত জবানবন্দি নিয়ে স্থানীয় তিনজন ইউপি সদস্যের জিম্মায় চাল রেখে রাত প্রায় ১০ টার দিকে চলে যান কর্মকর্তারা।

স্থানীয়রা জানান, ডিলার মোনায়েম খান ডোমসার ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় কোন নিয়ম কানুনের ধার ধারেননা তিনি। সরককারি নিয়ম অনুযায়ী নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে চাল বিক্রির কথা থাকলেও প্রভাব খাটিয়ে আওয়ামীলীগ কার্যাললকে তার দোকান বানিয়েছেন মোনায়েম খান। বাজারে তার নির্ধারিত কোন দোকান ঘর নাই। চাল বিক্রির নির্ধারিত দিন ও সময়ে দোকান বন্ধ রেখে দূরে সরে থাকে ডিলার মোনায়েম। ফলে, দরিদ্র লোকেরা এসে চাল না পেয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হন। এই সুযোগে ১০ টাকা কেজি দরের চাল ৩০-৩৫ টাকা কেজি দরে সাধারণ ভেক্তাদের কাছে বিক্রি করে। স্থানীয়রা আরো জানান, বুধবার সকাল থেকে দোকান বন্ধ রেখে দুপুর ১ টার পরে দোকান খোলা হয়। তখনও দোকানে ২৫-৩০ বস্তা চাল ছিল। দুপুর ২টার পরে বাজার থেকে লোকজন কমতে শুরু করলে মোনায়েম খান ভ্যান চালক রাজ্জাক সওদাগরকে দিয়ে ক্রেতাদের বাড়িতে বাড়িতে চাল পৌঁছে দেয়। তারা জানান, গত বছর ১৮ এপ্রিল হত দরিদ্রদের কাছে চাল বিক্রি না করে কয়েকজন ব্যবসায়ীর কাছে চাল বিক্রি করতে গিয়ে ধরা পরে ডিলার মোনায়েম খান। কিন্তু ক্ষমতার প্রভাবে সব ধরনের প্রমানাদি সংরক্ষনের পরেও তার কোন শাস্তি হয়নি।

কোয়ারপুর গ্রামের ছোয়াব আলী নলী বলেন, প্রতি বস্তা ১ হাজার ৭ শত টাকা দরে ২ বস্তা চাল মোনায়েম খানের কাছ থেকে ৩ হাজার ৪ শত টাকায় আমি খরিদ করেছি। একইভাবে আমির হোসেন ফকির, বশীর খাঁ, ইউনুছ হাওলাদার ও মোহাম্মদ আলী চৌকিদার প্রত্যেকে ১ বস্তা করে চাল ক্রয়ের কথা স্বীকার করেন।

ডোমসার ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. আলী আকবর বলেন, খাদ্য বিভাগের লোকেরা আমারা তিনজন ইউপি মেম্বারের সামনেই ৫ জনের বাড়ি থেকে ৭ বস্তা চাল জব্দ করেছেন। এলাকায় খোঁজ নিলে আরো বাড়িতে চাল পাওয়া যেতে পারে।

ডোমসার ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক ও ডিলার মোনায়েম খান বলেন, আমার দোকান থেকে আড়াই কিলোমিটার দুরে অবস্থিত আমার শত্রু পক্ষের কয়েকটি বাড়িতে সরকারি বস্তায় চাল রেখে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে। আমি কার্ড হোল্ডারের বাইরে কারো কাছে চাল বিক্রি করিনি। এটা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।

ডোমসার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. চানমিয়া মাদবর বলেন, আমি মোনায়েম খানকে আগেই সকর্ত করেছি যাতে গরীব মানুষের এই চাল নিয়ে কোন রকম নয়ছয় না করতে। সে আমার কথা রাখেনি। তাছারা, সরকার এই কর্মসূচিতে আমাদের জনপ্রতিনিধিদের কোন তদারকির সুযোগ রাখেনি। তাই তেমন খোঁজ খবর রাখার সুযোগ হয়না।

শরীয়তপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, চাল বিক্রির খবর পেয়ে কর্মকর্তাদের ঘটনাস্থলে পাঠালে তারা সেখান থেকে কয়েক বস্তা চাল জব্দ করেছে। আমি প্রতিবেদন প্রস্তুত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে প্রেরণ করব। ইউএনও মহোদয় পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।


(কেএনআই/এসপি/এপ্রিল ১৯, ২০১৮)