জন্মদিন

মুক্তবরণ জুঁই সরণির দুই চোখে নীল আকাশ নামে ,
জন্মদিনের আতর কে বেশ পাঠায় আমায় রঙিন খামে ।
গ্রাম্য কথায় মন ভরে যায় , বইতে থাকে বাতাস বুকে ----
বন্ধু ভূবন মন পবনের নাওটি ভাসায় গভীর সুখে ।
স্বপ্ন আবির পাতায় পাতায় আবার নেশায় ছড়িয়ে পড়ে ,
রত্নগড়ের চাঁদের আলো নাচতে থাকে নদীর চরে ।
শঙ্খ পালক বিভোর হয়ে বাজায় বসে হরিণ বাঁশি ,
হাস্নুহানার অলীক ডানায় চরকি ঘোরায় বকুল মাসি ।
পক্ষীরাজের চোখের তারায় শাপলা , শালুক , টগর হাসে ;
গ্রাম্য কথার জলছবিরা পাহাড় বেয়ে গড়িয়ে আসে ।
মুক্তবরণ জুঁই সরণির দুই চোখে নীল আকাশ নামে ,
জন্মদিনের মোহর আতর ছড়িয়ে পড়ে আমার গ্রামে ।

আশা

গভীর নেশার গহন বনে কখন যেন এলাম চলে ,
একলা একা দাঁড়িয়ে আছি বাঘের দ্যাখা পাব বলে ।
অনুরাগের একটি ভাষা নবীন পাতায় সাজিয়ে রাখি ,
মন ছুঁয়েছে অলীক আশায় একটি অভিমানের পাখি ।
গানের আলোয় পথ মুড়িয়ে কে আমাকে আবার ডাকে ?
কে এসে ফের ছবির মতো আবার কুসুম হৃদয় রাখে ?
ওই হৃদয়ের ভিতর যখন স্মৃতির গোলক হারিয়ে যাবে ,
দূর থেকে সেই বাঘটা তখন হয়তো আমায় দেখতে পাবে !
গভীর নেশার গহন বনে কখন যেন এলাম চলে ,
একলা একা দাঁড়িয়ে আছি বাঘের দ্যাখা পাব বলে ।

হৃদয়ে সব মেখো

বলনা ও ফুল তুই কি ময়ূর , নাকি শালিক পাখি ?
এখন গাঁয়ে থাকি -- !

গাঁয়ের মাথায় এক নদী মেঘ বলছে হেসে হেসে ,
সবাইকে নাও আপন করে একটু ভালোবেসে ।

ঝন্ ঝনা ঝন্ তাই বাজালুম আটটা কাঁচের চুড়ি --- !
অমনি দেখি মাঠ পেরিয়ে একটা হলুদ ঘুড়ি ,

আমার কাছে বললে এসে ; আঁকতে পারো বুঝি ?
আমি বললুম , ঠিক বলেছো ; তাইতো আকাশ খুঁজি -- !

দাও এনে দাও রঙের বাড়ি । একটা নতুন তুলি ।
আঁকতে আঁকতে পেরিয়ে যাবো অচেনা গ্রাম গুলি -- !

সবাই জেগে দেখো ,
ছবির রেণু ছড়িয়ে আছে । হৃদয়ে সব মেখো --- !

বাঘ বাঁচাও

বাঘকে কেন খাঁচায় পোরো ? বাঘকে কেন মারো ?
সব অছিলা সরিয়ে রাখো । বাঘকে মারা ছাড়ো ।

বাঘ মারাটা তোমার কাছে সহজ জানি অতি ।
অথচ বাঘ তোমার এমন করলো কি আর ক্ষতি ?

বাঘের ওপর রাগটি কেন আছড়ে পড়ে তবে ?
কারণ ছাড়া শহর , গাঁয়ে , বাঘ এসেছে কবে ?

খাবার যখন না পায় বনে , পেট না যখন ভরে ;
তখুনি বাঘ শহর , গাঁয়ে , হয়তো ঢুকে পড়ে ।

রাগ করোনা একটু শোনো , বাঘ যে বনের আলো ।
বন থাকাটা যেমন ভালো , বাঘ থাকাটাও ভালো ।

বনের পশু বনের নেশায় ঘুরুক আপন মনে ।
বাঘ মেরোনা । বাঘকে বাঁচাও । বাঘরা থাকুক বনে ।

পাহাড় পাহাড়

পাহাড় পাহাড় রূপের বাহার , ছড়িয়ে খুশির আবীর মুখে ;
পাহাড় পাহাড় রূপের বাহার, তুই দুবেলাই থাকিস সুখে ।

পাহাড় পাহাড় রূপের বাহার , পাতার ভুবন আলোর পাখি ;
আমরা সবাই আশায় আশায় গান দিয়ে পথ সাজিয়ে রাখি ।

আমরা ভোরের নাকছাবি , গ্রাম বলতে পারি এই টুকুনি ;
ভালোবাসার সেই নালিঘাস আজও বুকে জ্বালায় ধুনি ।

পাহাড় পাহাড় রূপকথা হাঁস , নীল দরিয়ার বাতাস নাচে ;
ওই বাতাসের ভিতর জানি সবুজ ধানের হৃদয় আছে ।

পাহাড় পাহাড় রূপের বাহার , ছড়িয়ে খুশির আবীর মুখে ;
পাহাড় পাহাড় রূপের বাহার , তুই দুবেলাই থাকিস সুখে ।

বিভেদ

আমাদের বাড়ি নেই , আমাদের ঘর ---
যত মাথা উঁচু করি তত বাড়ে ঝড় !

আমাদের চোখে শুধু পিচুটির ধুম ---
আর সারাদেশ মাছি টাক ডুমাডুম !

আমাদের মাথা আছে । মাথা মাথা জুড়ে চাষ !
ভবঘুরে খিদে আর কাঁদা বারোমাস !

হাড় মাসে ঘুন ধরে , মাথা ঝিম ঝিম --
করে বটে তবু ভাবি ঘোড়া দেবে ডিম !

আমাদের বাড়ি নেই , আমাদের ঘর --
যত মাথা উঁচু করি তত বাড়ে ঝড় !

প্রদীপ

আমড়া পাতা , আমড়া পাতা , আমড়া পাতার ফালি ;
আমরা দ্যাখো আকাশ জুড়ে একশো প্রদীপ জ্বালি !
প্রদীপ ! প্রদীপ ! ও দ্বীপ বলে নাড়ছে দু হাত কারা ?
মাছরাঙা মন , নাচ জুড়েছে পাঁচটি নতুন তারা !
গুনগুনিয়ে দেবদারু গাছ বলছে আমায় , পাখি ;
তোমার হাতে পরিয়ে দেবো শাপলা গানের রাখী !
আমড়া পাতা , আমড়া পাতা , আমড়া পাতার ফালি ;
আমরা দ্যাখো আকাশ জুড়ে একশো প্রদীপ জ্বালি !

আলোয় খোদা নাম শুধু

এই আলোদি পড়িস চিঠি, রূপকথা মেঘ ফের ওড়ালাম !
তোরই চোখের ভাষায় আবার ভাসতে ভাসতে পাগল হলাম ।
ময়ূর ছিলাম । তুই ময়ূরী । তোর মনে নেই সেই যে সে ঘর ?
আমার মনে আছে বলেই , রোজ খুঁজেছি নদীর এ চর ।
খুঁজতে খুঁজতে তোকেও পেলাম । তুইতো আমার খেলার আকাশ !
এখনও কি খেলতে খেলতে আবার আমার নাম ভুলে যাস ?
এখনও কি গান ঢেলে দিস ? বনপাহাড়ের চূড়ায় চূড়ায় ---- !
এখনও তোর ফুল পাখি মন চাঁদের দেশে রোজ ভেসে যায় !
আনন্দে খুব মেঘ কুড়াতিস । এখনও কি মেঘকে খুঁজিস ?
খুঁজতে খুঁজতে নেশায় আবার হাড়গিলেটির মন খেয়ে নিস ?
কবির স্বভাব এমনি বলেই ভাবতে ভাবতে পৃথিবী হয় !
আর পৃথিবীর বুকের ভিতর বাজতে থাকে আঁধার সময় ।
বাজনা এখন কেউ শোনেনা কারণ এখন তুচ্ছ এ সব !
রুগ্ন দেহে তাই দাঁড়ালাম । ভাবিস না আর ভাসিয়ে দে শব ।
যাই ভেসে ফের ঘুমের দেশে , লক্ষ্য করিস চোখের কোটর ।
সেই দেশে তো আর কিছু নেই । আলোয় খোদা নাম শুধু তোর -- !