মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : ভোরে সূর্যোদয়, সন্ধায় সূর্যাস্ত, দিনে সাগরের ঢেউয়ের খেলা আর রাতে সাগরের গর্জণ শুধু এই প্রাপ্তি নিয়েই সুখী পর্যটকরা। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে বর্ষার শুরুতেই পর্যটকদের আগমন শুরু হলেও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করেই চলছে পর্যটকদের বিনোদন। মূল সৈকতের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করলেও সৈকতকে ঘিরে নেয়া হচ্ছেনা কোন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড। পর্যটকদের বিশ্রাম কিংবা বসে সময় কাটানোরও নেই কোন ব্যবস্থা। 

বর্ষার শুরুতে কুয়াকাটায় পর্যটকদের আগমন শুরু হলেও মূল সৈকতে এসেই থেমে যাচ্ছে পর্যটকদের সকল উচ্ছাস। মেঘ,রৌদ্রময় বিস্তীর্ন সৈকত ও সমুদ্রের মৃদু ঢেউয়ের পরশ তাদের ক্লান্তময় ভ্রমনের কিছুটা শান্তির পরশ বুলালেও অধিকাংশ সময় তাঁদের হোটেল বন্দী থাকতে হচ্ছে। রাতের কুয়াকাটা এখনও অন্ধকারই থেকে যাচ্ছে পর্যটকদের কাছে।

কুয়াকাটায় ভ্রমনে আসা পর্যটক খোকন মির্জা, জিহাদুল কবির জানান, কুয়াকাটা সত্যিই অপরুপ সৌন্দর্যে ঘেরা। যেন সবকিছুই ছবির মতো সাজানে গোছানো। কিন্তু অপরিকল্পিত উন্নয়ন এ সৌন্দর্য ঢাকা পড়ে গেছে। তিঁনি বলেন, কুয়াকাটা সৈকত লাগোয়া ইকোপার্ক এলাকায় পরিবার নিয়ে প্রবেশ করা সত্যিই বিপদজনক। ভাঙ্গা ও এবড়ো থেবড়ো রাস্তা।

প্রাকৃতিকভাবে জম্মানো গাছগুলো পরিচর্যার অভাবে যেন মাটির সাথে মিশে তাদের ক্লান্তি জানান দিচ্ছে পর্যটকদের কাছে। একইভাবে মূল সৈকত এখনও অপরিস্কার। সৈকতের জিড়ো পয়েন্ট ও পর্যটনস্পটগুলো যেন পর্যটকদের কাছে আরেক দুর্ভোগ।

ঢাকার ব্যবসায়ী মনির হোসেন জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হওয়ায় কুয়াকাটায় সারাদেশের পর্যটকদের সবসময় ভিড় বাড়ছে। তাছাড়া এখানে প্রতিদিনই নতুন নতুন বিনিয়োগকারী আসছেন। তাই এখনই সময় কুয়াকাটাকে ঢেলে সাজানোর। এ বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই কুয়াকাটা ভাঙ্গন ঠেকানোর উদ্যেগ নেয়া উচিত। মূল সৈকত প্রটেকশন করার জন্য সিসি ব্লক ফেলে নারিকেল বাগান ও ঝাউ বাগান এলাকা রক্ষার উদ্যেগ নেয়া উচিত।

কুয়াকাটার জসিম উদ্দিন, আতিকুর রহমান, হারুন হাওলাদার জানান, কুয়াকাটা ভ্রমনে এসে পর্যটকরা ঝিনুক শামুক রাখাইনদের তৈরি রকমারি প্রসাধনী কিনতে পারতো সৈকত লাগোয়া দোকানগুলো থেকে। কিন্তু সেই দোকানগুলো উচ্ছেদ করায় পর্যটকরা এসব প্রসাধনী ক্রয় করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এমনকি উচ্ছেদকরা খালি জায়গা দুপুরে যেন খাঁ খাঁ করে মানুষ শূন্যতায়। আগে এখানে মানুষের ভিড় লেগেই থাকতো।

কুয়াকাটার একাধিক মোটেল ও হোটেল এর ম্যানেজার জানান, কুয়াকাটাকে ঘিরে সরকারের মাস্টারপ্লান রয়েছে। কিন্তু এ মাস্টারপ্লানে কি কি উন্নয়ন কর্মকান্ড রয়েছে তা এখনও জানতে পারছেনা কুয়াকাটায় বিনিয়োগকারী ব্যবসায়ী ও পর্যটকরা। সৈকত এলাকা থেকে সরকারি জায়গা দখল করে গড়ে তোলা ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করলেও মূল সৈকতে এখনও কোন পরিকল্পনা লক্ষ্য করা যাচ্ছেনা। এমনকি পৌরসভার দায়িত্বপ্রাপ্তরাও এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না।

কুয়াকাটা সৈকতে পর্যটকদের দীর্ঘদিনের দাবির পরও এখনও স্থাপন করা হয়নি কুয়াকাটার মনোরম সৌন্দর্য মন্ডিত এলাকার নামের তালিকা। টানানো হয়নি সৈকত রক্ষা ও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার নির্দেশনা। সাগর ঘেষা নারিকেল কুঞ্জ, ঝাউবাগান ও ইকোপার্ক রক্ষায় নেয়া হচ্ছেনা কোন পদক্ষেপ।

এ ব্যাপারে কুয়াকাটা পৌরসভার সচিব মো. হুমায়ুন কবির জানান, কুয়াকাটা পৌরসভার পক্ষ থেকে কুয়াকাটা সৈকত পরিস্কার রাখার জন্য উদ্যেগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া জিড়ো পয়েন্ট থেকে পূর্ব দিকে এক কিলোমিটার ও পশ্চিম দিকে এক কিলোমিটার রাস্তা সংস্কার করার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে এবং সৈকতের জিড়ো পয়েন্টে রাতে অলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

(এমকেআর/এসপি/এপ্রিল ২১, ২০১৮)