লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি : নাটোরের লালপুর উপজেলার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থীর ক্লাশ বন্ধ রেখে, ছয় শতাধিক শিক্ষকের প্রত্যেকের কাছ থেকে তিন’শ টাকা করে চাঁদা তুলে আজ শনিবার ‘মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে শিক্ষকগণের ভূমিকা শীর্ষক সেমিনার ও ভুরিভোজের আয়োজন করে উপজেলা শিক্ষা অফিস। এ জন্য শিক্ষকদের কাছ থেকে প্রায় এক লক্ষ ৮১ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। তবে সেমিনারে প্রাথমিক শিক্ষা বিষয়ক কোনো বিশেষজ্ঞ ব্যাক্তিত্ব ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কিংবা উর্ধ্বতন কোন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন না। সভায় অংশ গ্রহণকারিদের খাবারের জন্য শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলা চত্বরে বাবুর্চি দিয়ে রান্নাবান্নার ব্যাপক আয়োজন ছিল চোখে পড়ার মত। দুপুরে সভা শেষে সবাই ভুরিভোজে অংশ নেন। 

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার সকালে উপজেলা পরিষদের মিলনায়তনে উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ‘মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে শিক্ষকগণের ভুমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রাথমিক ও গণ শিক্ষা মন্ত্রনালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য এ্যাডঃ আবুল কালাম আজাদ।

উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আকতারুজ্জামানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুনার রশিদ পাপ্পু, সাংসদ আবুল কালাম আজাদের সহধর্মিনী উম্মে তৌহিদা আক্তার বানু, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের সহধর্মিনী রেশমা এ্যানি, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ইয়াকুব আলী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইসাহাক আলী, সাংগাঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, আইন বিষয়ক সম্পাদক ইমরান আলী ও উপজেলার সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ ছয় শতাধিক শিক্ষকগণ।

কলসনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশরাফুল আলম ডাবলু জানান, সেমিনারের জন্য সকল বিদ্যালয় বন্ধ রাখা হয়েছে এবং সেমিনারে ছয় শতাধিক শিক্ষক অংশ নিয়েছে।

চর বিলমাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেনীর ছাত্র সবুজ এই প্রতিবেদককে জানান,‘স্যারদের উপজেলায় মিটিং ছিল, তাই আজ আমাদের স্কুল ছুটি।’

বরমহাটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আব্দুল মোমেন শাহিন জানান, সেমিনারের খরচ বাবদ প্রত্যেক শিক্ষকের কাছ থেকে তিন’শ টাকা করে চাঁদা আদায় করেছে উপজেলা শিক্ষা অফিস। তিনি নিজেও চাঁদা দিয়েছেন এবং স্কুল বন্ধ রেখে উপজেলার সেমিনারে যোগ দিয়েছিলেন।

সভায় প্রধান আতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ প্রাথমিক শিক্ষার গুনগত মান উন্নয়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি সব সময় শিক্ষকদের পাশে থাকবেন বলে জানান।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ইয়াকুব আলী শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা উত্তোলনের কথা স্বীকার করে জানান সমস্ত টাকা অনুষ্ঠানে সঠিক ভাবে ব্যায় করা হয়েছে। এ উপলক্ষে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও শিক্ষকদের কর্মদিবস হিসাবে গণ্য হবে।

এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সম্মতি নিয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ডিপিইও ও ডাইরেক্টর স্যারকে জানিয়েছি। তবে তাঁরা কোনো চিঠি দেন নি।

এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা একেএম আমিরুল ইসলামকে বিকেল বার বার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেন নি।

(এমএইচ/এসপি/এপ্রিল ২১, ২০১৮)