আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : উজিরপুরে স্থানীয় জনগণ স্বেচ্ছা শ্রমের মাধ্যমে বেড়ী বাঁধ নির্মাণ করে বাধের অভ্যন্তরে ৪শ একর জমিতে একত্রে ধান ও মাছ চাষ করে নিজেদের ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন অন্তত এক হাজার কৃষক পরিবার। সম্মিলিত স্বেচ্ছাশ্রম এবং কৃষি বিভাগের পরামর্শে ইউনিয়নের কুড়লিয়া গ্রামে এক হাজার কৃষক পরিবার ৪শ একর জমিতে বেড়ী বাঁধ নির্মাণ করে উফসী বোরো ধান চাষ করে প্রায় এক হাজার মে.টন ধান উৎপাদনের আশা প্রকাশ করেছেন। যে জমিতে গত ৫০ বছরে কৃষক ৫০ মন ফসলও উৎপাদন করতে পারেনি। মৌসুমী ধান চাষের সাথে একত্রে বছরে প্রায় কোটি টাকার মাছ উৎপাদন করে নিজেদের ভাগ্য বদলের স্বপ্নের জাল বুনছেন জমির মালিক ও কৃষকেরা। হারতা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী পরিত্যাক্ত সেনের খালের মুখ থেকে কুড়লিয়া গ্রামের অনন্ত রায়ের বাড়ির পিছন থেকে পশ্চিম দিক হয়ে প্রায় ২ কিলিােমটিার লম্বা, ৭ফুট উচ্চতা ও ৬ ফুট চওড়া একটি বেড়ী বাঁধ নির্মাণ প্রায় শেষ করেছেন স্থানীয় জমির মালিক ও কৃষকরা।

স্থানীয়দের মতে, এই বেড়ী বাঁধটি করতে অনেক আগেই সরকারি উদ্যেগে হওয়া উচিৎ ছিল। এতবড় বিস্তীর্ণ বিলাঞ্চলে সরকারিভাবে বেড়ী বাঁধটি নির্মিত হলে এক সঙ্গে হাজার হাজার মন ধান উৎপাদন ও মাছ চাষ করে অভাবী কৃষকেরা উপকৃত হতেন। তারা খাদ্য ও অর্থে স্বয়ংসম্পূর্ণতা ফিরে পেতেন। ধান ও মাছ চাষীদের মধ্যে আ. ছত্তার রাড়ী, আকবর রাড়ী, রশিদ রাড়ী, অনন্ত রায়, সুনীল ঢালী, বিমল বিশ্বাস, রামজয় বাড়ৈ, অজিত বাড়ৈ, জামাল মল্লিকসহ শতাধিক কৃষক ও জমির মালিক জানান, সেনের খালের মুখে সরকারী উদ্যোগে একটি স্লুইজ গেটের আদলে ব্রিজ নির্মিত হলে মৃত প্রায় ওই খালের বর্ষা মৌসুমের পানি নিস্কাষণ হত এবং ওই বেড়ী বাঁধ নির্মাণে সরকারি সহযোগিতা পেলে কুড়লিয়া গ্রামের ৪শ’ একর জমিতে প্রতি বছর (এক ফসলী ইরি-বোরো) এক থেকে দেড় হাজার মে.টন বোরো ধান উৎপাদন করা সম্ভব হত। সেই সঙ্গে একই জমিতে ধানের সঙ্গে মাছ চাষ করে স্থানীয় মাছের চাহিদা পূরণ করে বিভিন্নস্থানে রপ্তানী করা সম্ভব হত। যেখানে গত ৫০ বছরে চাষিরা কোনো ধান উৎপাদন করতে পারেনি, সেখানে এবছর স্বেচ্ছা শ্রমের মাধ্যমে বেড়ী বাঁধ নির্মাণের ফলে ওই অঞ্চলের সাধারণ কৃষক ফসল উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করা হচ্ছে। এ বেড়ী বাঁধ নির্মাণের ফলে সেনের খালের মুখ থেকে আগৈলঝাড়া উপজেলা পর্যন্ত বিস্তৃত খালটিতে জনগণের যোগাযোগের ক্ষেত্রেও নতুন ধারার সৃষ্টি হয়েছে।

এ ব্যপারে নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান এইচএম হাফিজুর রহমান ইকবাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উর্মিলা বাড়ৈ বলেন, চাষিদের ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগের সঙ্গে সরকারি সহযোগিতার হাত প্রসারিত করা হলে সরকার কৃষিতে বিপ্লব ঘটানোর স্বপ্ন বাস্তবায়নে স্থানীয় আরেকটি মাইলফলক উন্মোচিত হবে ।

(টিবি/এএস/এপ্রিল ১৩, ২০১৪)