দীপক চক্রবর্তী, মাগুরা : মাগুরা জেলা থেকে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের জাতীয় পাখি দোয়েল। এ পাখি এখন যেন চোখের আড়ালে। সচরাচার আর দেখা যায়না বাংলাদেশের জাতীয় পাখি দোয়েলকে। ঝোপ-ঝাড়ে, রাস্তার পাশে, অফিস বা বাড়ীর ছাদে জাতীয় পাখি দোয়েলের ছুটে চলা এখন আর চোখে পড়ে না। শোনাও যায়না দোয়েল পাখির সেই সুমিষ্ট কন্ঠ ও ডাকাডাকির আওয়াজ। যা উপজেলাবাসীর অজান্তেই তাদের মনে আনন্দ দিত। 

প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন অফিস, বাড়ী বা রাস্তার পাশের এ গাছ থেকে অপর গাছে বিচরণ করে বেড়াতে দেখা যেত গ্রাম-বাংলা সেই ছোট্র পাখি দোয়েলকে। তাদের জাদুকরী কন্ঠের ডাকাডাকিতে মন ভোলাতো সকল বয়সি মানুষের। কাক-চড়াইয়ের মত গ্রামের মানুষের সাথে সখ্যতা ছিল। খুব কাছে গেলেও উড়ে যেতোনা এ পাখিগুলো। তবে মাঝে মাঝে দেখা যেত একে অপরের সাথে আনন্দ করে ডানা দোলাচ্ছে। এবং সামান্য ঝগড়া করতেও দেখা যেতো দুটি পাখিকে।

ছোট বেলায় প্রথম পড়া বইয়ে বাবা-মা আমাদের বারবার পড়িয়ে মুখস্ত করে দিয়েছিল আমাদের জাতীয় পাখির নাম দোয়েল। যে পাখির ডাকে আমাদের ঘুম ভেঙ্গে যেত। সাদা আর কালো রঙ্গের ছোট এ পাখিটির সাথে আমাদের দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। মুয়াজ্জিনের আযানের সঙ্গে সুর মিলিয়ে আযানের সুমধুর ধ্বনির প্রতিধ্বনি সৃষ্টি করে জানান দিত এই সেই আমাদের জাতীয় পাখি।

একটি সময় গ্রাম-বাংলার মানুষের ঘুম ভাঙ্গতো এ সব পাখিদের কলকাকলিতে। কিন্তু সমাজ পরিবর্তনের সাথে সাথে আমাদের গ্রাম-বাংলা থেকে, শূন্য হয়ে যাচ্ছে দেশীয় এসব পাখি। সকাল হলেই আগের মত এখন আর শোনা যায়না জাতীয় পাখি দোয়েলের ডাক। তবে আমাদের পরিচিত পাখিদের মধ্যে ঘুঘু, বক, শালিক, কোকিল, টিয়া, ময়না, চড়ই, কবুতর ও মাছরাঙ্গাসহ নানা প্রকার দেশীয় পাখি এখনো উপজেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলের দেখা যায়।

যে পাখি সবসময় মানুষের সান্নিদ্ধে থাকতে দেখা যেত মাটিতে লাফিয়ে লাফিয়ে খাদ্য সংগ্রহ করতো কিন্তু হাজার বছরের সেই পাখি কালের পরিক্রমায় আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। তাই দোয়েল পাখির চি চি শব্দ এখন আর কানে শোনা যায়না বললেই চলে।

উপজেলা সদরে অবস্থিত কলমের সৈনিক বিদ্যানিকেতনের অধ্যক্ষ সালাহউদদীর আহমেদ বলেন, প্রতিনিয়ত আমরা ধ্বংস করছি আমাদের সবুজ বৃক্ষ। নির্বিচারে বৃক্ষ নিধনের মাধ্যমে পাখিদের আবাসস্থান ধ্বংস এবং বিভিন্ন ফসলের ক্ষেতে ক্ষতিকারণ কীটনাশক প্রয়োগের প্রভাবে দিন দিন প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে চিরচেনা এ সব পাখি। তাই এখন আর খুব একটা শোনা যায়না আমাদের জাতীয় মায়াবী পাখি দোয়েলের মধুর ডাক।

শুধু তাই নয় বৃক্ষ নিধনের পাশাপাশি পাখি শিকার বিষয়ে আইন থাকলেও তার যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে না। এটা কারো চোখেও পড়ছে না। ফলে প্রকৃতি থেকে দিনদিন হারিয়ে যেতে বসেছে চিরচেনা দেশীয় এসব পাখিগুলো। তাই প্রশাসনের আসুদৃষ্টি কামনা করছেন উপজেলার রাজনৈতি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিবর্গ।

(ডিসি/এসপি/এপ্রিল ২১, ২০১৮)