স্টাফ রিপোর্টার : প্রেস কাউন্সিলে একটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে সাংবাদিক বা গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগ চায় বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)।

সোমবার সচিবালয়ে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে বৈঠক করে বিএফইউজের নেতারা এই দাবি জানান। আইনমন্ত্রী এই দাবিকে যৌক্তিক হিসেবে অবিহিত করেছেন।

মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া এখন জাতীয় সংসদে পাস হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।

বৈঠক শেষে বিএফইউজের সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল সাংবাদিকদের বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে আমরা বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলছিলাম, বিভিন্ন পর্যায়ে আমাদের উদ্বেগের কথা জানাচ্ছিলাম। (আইন) মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের বলা হয়েছিল কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা থাকলে তা যদি আমরা তাদের কাছে জমা দেই তাহলে তা সংসদীয় রীতিনীতি অনুসরণ করে তারা বিষয়গুলো বিবেচনা করবেন।’

তিনি বলেন, ‘সেই প্রেক্ষিতে আমরা লিখিত মতামত আইনমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেছি। সেখানে বিভিন্ন ধারা সম্পর্কে আমাদের দশটি পর্যবেক্ষণ ও একটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা আছে। আমরা গতকাল একই প্রস্তাবনা মাননীয় স্পিকারের কাছে উপস্থাপন করেছি। মাননীয় স্পিকার বলেছেন, আইনমন্ত্রী হচ্ছেন যোগ্য ব্যক্তি এই বিষয়ে কথা বলার জন্য।’

‘আজকে আমরা আইনমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বললাম। তিনি আমাদের বলেছেন, এই প্রস্তাবনাগুলো যখন লিখিতভাবে পাওয়া গেল আরও দু’একটি সংগঠন থেকে পাওয়া যাবে। সব মিলিয়ে এটি সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে আলোচনার সময় যদি বিস্তারিত আলোচনা করা হয়, সেই বিস্তারিত আলোচনা করে নিশ্চয়ই একটা ভালো সুফল পাওয়া যাবে।’

সম্পাদক পরিষদের মতো আপনাদেরও সংসদীয় কমিটিতে ডাকা হবে কিনা- জানতে চাইলে বিএফইউজে সভাপতি বলেন, ‘মাননীয় মন্ত্রী বলেছেন সম্পাদক পরিষদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও বেসরকারি টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন এটকোকে সেখানে ডাকা হবে। মাননীয় মন্ত্রী সেই কথাই বলেছেন, আমাদের ডাকা হবে।’

বৈঠকে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের বিভিন্ন ধারা সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জানিয়ে মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘সেই ধারাগুলো সংশোধনের জন্য আমরা যেমন দাবি জানিয়েছি, এর পাশাপাশি আমরা বলেছি আইনটি সংসদে পাস হওয়ার পর এটি প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে একটি প্রাতিষ্ঠানিক সেফটিনেট সাংবাদিকদের জন্য, গণমাধ্যমের জন্য থাকা উচিত।’

‘এ বিষয়ে আমাদের প্রস্তাবনা হচ্ছে- আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা নিয়ে যখন ব্যাপক অপপ্রয়োগের অভিযোগ উঠে তখন সরকারের পক্ষ থেকে একটি নির্দেশনা জারি করা হয় যে, ৫৭ ধারা যদি সাংবাদিক বা গণমাধ্যমের জন্য প্রয়োগ করা হয় তাহলে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। সেই ধারণা থেকে আমরা একটা প্রস্তাবনা দিয়েছি যে, আইন গণমাধ্যম কর্মী বা গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করতে হলে প্রাথমিকভাবে প্রেস কাউন্সিলে যাবে। প্রেস কাউন্সিলে একটা ছোট কমিটি থাকবে- যে কমিটিতে সম্পাদক পরিষদ থাকবে, যে কমিটিতে সাংবাদিক ইউনিয়ন থাকবে, যে কমিটিতে এমপি মহোদয় ও সরকারের প্রতিনিধি থাকবেন। তারা প্রাথমিকভাবে যাচাই করে দেখবেন আইনটি সাংবাদিক বা গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা যায় কিনা।’

বিএফইউজের সভাপতি বলেন, ‘অন্তত প্রেস কাউন্সিলকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এটার সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হলে প্রেস কাউন্সিলও শক্তিশালী হবে, আমরাও একজন পুলিশ কর্মকর্তার ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর কোনো বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে চাই না। আমরা মনে করি, আমাদের প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রেস কাউন্সিল সেক্ষেত্রে একটা বড় ভূমিকা রাখবে।’

আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আইনটি যেখানে আছে, সেখানেই মানে সংসদীয় কমিটিতে এসব আলোচনা হতে পারে এবং সংসদীয় কমিটিতে এসব আলোচনা হলে আমার মনে হয় সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিশ্বাস করি, সংবিধানে যে বাক স্বাধীনতার কথা বলা আছে, ফ্রিডম অব প্রেসের কথা বলা আছে, সেটায় আমরা অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি বলেই এই আইনে যেখানে কোনো সন্দেহ থাকে তা দূর করার জন্য যে যে প্রচেষ্টা করা দরকার আমরা সেই সেই প্রচেষ্টা করবো।’

‘সেই কারণেই সংসদীয় কমিটিতে যখন এই ব্যাপারে খোলামেলা আলাপ-আলোচনা হবে, এরপর আমরা যে আইনটি করতে পারব সেটা সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। সেই আইনটায় কেউ ভীত হবে না। এটাই হচ্ছে আমাদের আসল উদ্দেশ্য। সেই উদ্দেশ্য এই আলোচনার মাধ্যমে সাধিত হবে বলে আমার বিশ্বাস’বলেন আনিসুল হক।

আইন প্রয়োগের আগে প্রেস কাউন্সিলের কমিটির অনুমোদন নেয়ার বিষয়টি যৌক্তিক মনে করেন কিনা- জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমার মনে হয় এটা যৌক্তিক। যৌক্তিক নিশ্চয়ই। আমি যেটা মনে করি সেটা হচ্ছে, কিছু কিছু ধারার ব্যাপারে আমাদের বক্তব্যও যদি শোনা হয়, সংসদীয় কমিটিতে দুই পক্ষের পারস্পরিক বক্তব্য দেয়ার সময় ও সুযোগ তখন থাকবে। এতে অনেক কিছুই পরিস্কার হবে। যে প্রস্তাবনা এসেছে, সেগুলোর সংশোধন ও পরিমার্জন কিছু হবে। তাই আমি মনে করি সংসদীয় কমিটিতে আলোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

মন্ত্রী আরও বলেন, ‘গতকাল এই সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, মে মাসের শেষের দিকে সংসদীয় কমিটির সভাপতি এটকো, বিএফইউজে ও সম্পাদক পরিষদ- সকলকে একটা মিটিংয়ে ডাকাবেন।’

বিএফইউজে লিখিত বক্তব্যে খসড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ডিজিটাল এজেন্সি গঠন, বিটিআরসিকে অনুরোধ করার জন্য এজেন্সি গঠন, ডিজিটাল নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠন, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য কাঠামো নিয়ে ছাড়াও অপরাধ ও দণ্ড অধ্যায়ের ২১ ধারা (মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির পিতার বিরুদ্ধে প্রচারণা), ২৫ ধারা (আক্রমণাত্বক, মিথ্যা ও ভীতি প্রদর্শন), ২৮ ধারা (ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত), ২৯ ধারা (মানহানি), ৩১ ধারা (আইন শৃঙ্খলার অবনতি) ও ৩২ ধারা (গুপ্তচরবৃত্তি) নিয়ে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে।

বৈঠকে বিএফইউজের মহাসচিব ওমর ফারুক, কোষাধ্যক্ষ মধুসূধন মণ্ডল, সদস্য সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা উপস্থিত ছিলেন।

(ওএস/এসপি/এপ্রিল ২৩, ২০১৮)