রাজন্য রুহানি, জামালপুর : অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসৃজন কর্মসূচির ৬শ ৩১ জন অতিদরিদ্র শ্রমিকের মজুরির টাকা তিন মাসে ধরে আটকে রেখেছে জামালপুরের ইসলামপুর শাখার ফারমার্স ব্যাংক। মজুরির টাকা না পেয়ে চরম কষ্টে দিনাতিপাত করছে ইসলামপুর উপজেলার নোয়ারপাড়া ও সাপধরী ইউনিয়নের ৬৩১টি অতিদরিদ্র পরিবার।  

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন শাখা সূত্রে জানা গেছে, বন্যা ও নদী ভাঙন কবলিত ইসলামপুর উপজেলার অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠির জন্য দুই ধাপে ৪০ দিন করে ৮০ দিন খ-কালীন মাটির কাজ বাস্তবায়নের জন্য ১২ টি ইউনিয়নে চলছে কর্মসৃজন কর্মসূচি।

দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম ধাপে ৪০ দিনের কাজ শেষ হলে যথাসময়েই সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোতে টাকা পাঠানো হলেও শ্রমিকরা ফারমার্স ব্যাংক থেকে উত্তোলন করতে পারছে না মজুরির টাকা।

এ ব্যাংকে রয়েছে ৬৩১ জন শ্রমিকের হিসাব। এছাড়াও সোনালি, জনতা, কৃষি, রূপালী ও অগ্রণী ব্যাংক শাখায় উপজেলার ১০ ইউনিয়নের তিন হাজার ১৬১ জন শ্রমিকের হিসাব রয়েছে। অন্য ব্যাংকগুলো থেকে শ্রমিকরা মজুরি উত্তোলন করতে পারলেও ফারমার্স ব্যাংকে দু ইউনিয়নের ৬৩১ জন শ্রমিক টাকা উত্তোলন করতে পারছে না। ৪০ দিনের কাজ শেষ হওয়ার তিন মাসেও শ্রমের মজুরির টাকা না পাওয়ায় চরম কষ্টে আছে অতিদরিদ্র পরিবারগুলো।

অন্যান্য ব্যাংকের মতো ফারমার্স ব্যাংক ইসলামপুর শাখায় নোয়ারপাড়া ইউনিয়নের ৩৭৪ জন শ্রমিকের ৫০ লাখ ৪৮ হাজার ও সাপধরী ইউনিয়নের ২৫৭ জন শ্রমিকের ২৯ লাখ ৯২ হাজার টাকা যথা নিয়মে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

অথচ দীর্ঘ তিন মাস ধরে ৬৩১ জন শ্রমিকদের মজুরির ৮০ লাখ ৪০ হাজার টাকা আটকে রেখেছে ব্যাংকটি। দ্বিতীয় ধাপের মজুরির টাকা সঠিকভাবে পেতে দু ইউনিয়নের শ্রমিকদের অন্য ব্যাংকে হিসাব খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে। এতে বাড়তি চাপ সৃষ্টি হবে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী শ্রমিকরা।

আমানতকারী নাজমা আক্তার জানান, পত্রিকায় ফারমার্স ব্যাংকের অর্থ লুটের খবর দেখে আমার ডিপিএস ভেঙে নিলেও আমার কয়েকজন আত্মীয়-স্বজনের টাকা আটকে গেছে।

ইসলামপুর বাজারের ব্যবসায়ী পলাশ বসাক জানান, এক লাখ টাকার চেক দিলে দশ হাজার টাকা দিয়ে দিনের পর দিন ঘুরানো হয়।

পোলট্রি ব্যাসায়ী কৃষিবিদ ডা. শফিকুর রহমান শিবলী বলেন, ফারমার্স ব্যাংকে কারেন্ট এ্যাকাউন্ড ও ডিপোজিট করে চরম ভোগান্তি ও হতাশার মধ্যে রয়েছি।

এ বিষয়ে শাখা ব্যবস্থাপক জামিল আহাম্মেদের সাথে কথা বলতে ব্যাংকে গেলে তাকে পাওয়া যায় নি। পরে মোবাইল ফোনে তিনি জানিয়েছেন, সারাদেশের সব শাখাতেই সমস্যায় রয়েছে ফারমার্স ব্যাংক। শ্রমিকদের মজুরির টাকা জুন মাসের মধ্যে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধে এক মাসের সময় চেয়েছে। এক মাসের মধ্যে ব্যর্থ হলে নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(আরআর/এসপি/এপ্রিল ২৩, ২০১৮)