মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজারে প্রথম সাময়িক পরীক্ষা চলাকালিন সময়ে নির্ধারিত সময়ের এক ঘন্টা পার হয়ে গেলেও স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষকদের অনুপস্থিত থাকায় স্কুলে তালা ঝুলিয়েছেন ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা। ঘটনাটি ঘটেছে সদর উপজেলার নাজিরাবাদ ইউনিয়নের বরইউড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ।

বৃহস্পতিবার (২৬এপ্রিল) দুপুরে সরেজমিন সূত্রে জানা যায়, জেলার সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক পরীক্ষা চললেও বরইউড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শিক্ষার্থীরা সকাল ৯টা থেকে পরীক্ষার জন্য স্কুল মাঠে অপেক্ষা করছিল , এসময় স্কুল বন্ধ থাকায় তারা পরীক্ষা দিতে স্কুলে প্রবেশ করতে পারেনি। এভাবে সকাল সাড়ে দশটা পর্যন্ত শিশুরা প্রধান শিক্ষক সহ অন্যান্য শিক্ষকদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে, এঅবস্থায় এসব শিশুর অভিবাবকরাও স্কুলে জরো হতে থাকেন প্রধান শিক্ষক ও অন্যান্য শিক্ষকদের অপেক্ষায়।

এক পর্যায়ে তারা স্কুল বন্ধ পেয়ে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি দিরেন্দ্র কুমার দাসকে খবর দিলে তিনিও স্কুলে এসে স্কুল তালাবদ্ধ অবস্থায় পান, এর পর স্কুল ম্যানেজিং কমিটির অন্যান্য সদস্যরা উপস্তিত হলে স্থানীয় মেম্বার সৈয়দ সুফিয়ান আলী ও নাজিরাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ এনামুল হক রাজাকে খবর দিলে তাৎক্ষণিক তারা স্কুলে এসে ক্ষুব্দ শিশু ও তাদের অভিবাবকদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। তখন পর্যন্ত স্কুলে কোন শিক্ষকের উপস্থিতি না থাকায় চেয়ারম্যান, মেম্বার ও শিশুদের উপস্থিতিতে ক্ষুব্দ অভিবাবকরা তাদের পক্ষ থেকে স্কুলে তালা ঝুলিয়ে দেন।

এ বিষয়ে নাজিরাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ এনামুল হক রাজা বলেন , আমি খবর পেয়ে সকাল সাড়ে দশটার দিকে স্কুলে গিয়ে দেখি শিশুরা বাহিরে দাঁিড়য়ে পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করছে, এসময় স্কুল বন্ধ পেয়ে ক্ষুব্দ অভিবাবকরা স্কুলে তালা ঝুলিয়ে প্রতিবাদ করতে থাকেন। তিনি বলেন, সকাল ১১টার দিকে স্কুলের প্রধান শিক্ষক সহ অন্যান্য শিক্ষকরা আসতে থাকলে পরে স্কুলের তালা খুলে দেয়া হলে শিশুরা পরীক্ষা দিতে শুরু করে ।

স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির বর্তমান সভাপতি দিরেন্দ্র কুমার দাস ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, প্রধান শিক্ষক জয়শ্রী দাস প্রায় দিনই দেরি করে স্কুলে আসেন, দেরি করাটা তার পক্ষে অনেকটা নিয়মে পরিনত হয়েছে, তবে স্কুলের প্রথম সাময়িক পরীক্ষা চলা অবস্থায় সকাল ১১টা পর্যন্ত স্কুল তালাবদ্ধ অবস্থায় থাকা খুবই দু:খজনক। তিনি বলেন, একটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক যদি এভাবে প্রতিদিন দেরি করে আসেন তা হলে বাচ্চার এখান থেকে কি শিক্ষা নেবে ।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক জয়শ্রী দাস স্কুল বন্ধ পেয়ে ক্ষুব্দ অভিবাবকরা স্কুলে তালা ঝুলিয়ে দেয়ার বিষয়টা স্বীকার করে বলেন, আমার ব্যক্তিগত সমস্যা থাকায় স্কুলে আসতে একটু দেরি হয়েছে।

প্রতিদিন স্কুলে দেরি করে আসার বিষয় ও স্কুলের শিক্ষক উপস্থিতির খাতায় সময় সকাল নয়টা উল্লেখ করার কারন সম্পর্কে জানতে চাইলে এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, আমি চেষ্টা করি সময়মত স্কুলে আসতে।

জানা যায়, এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন কয়েকজন অভিবাবক, তবে তাদের অভিযোগের কোন সুরাহা হয়নি কখনো।

এমন পরিস্থিতে স্কুলের সব অভিবাবক উপস্তিত হয়ে এ প্রতিবেদককে অভিযোগ করে বলেন, প্রধান শিক্ষক কারো কথা শুনেনা, তিনি সব সময়ই স্কুলে দেরি করে আসেন, এবিষয়ে কয়েকবার স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সাথে অভিবাবক ও স্থানীয় মেম্বারের বৈঠক হলেও কোন কাজ হয়নি। শুধু প্রধান শিক্ষকই নয় , অন্য শিক্ষকরাও দেরি করে স্কুলে আসেন।

মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও মোঃ মনিরুজ্জামান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এবিষয়ে তিনি সদর উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে শোকজের নির্দেশ দিয়েছেন।

এবিষয়ে সদর উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শরিফ মোহাম্মদ নিয়ামত উল্লাহ বলেন, অভিযোগ পেয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে প্রধান শিক্ষককে শোকজ করা হয়েছে। তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ থাকায় সেগুলোও তদন্ত করে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।

(ওএস/এসপি/এপ্রিল ২৬, ২০১৮)